Iftar

বিদ্বেষের বিরুদ্ধে বার্তা উঠে এল ইফতারের আসরে

সিএএ-তে আপাত ভাবে এ দেশের মুসলিমদের ক্ষতি নেই বলা হলেও তাতে নিহিত মুসলিম বিদ্বেষ নিয়ে সরব হলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক রাজ্যেশ্বর সিংহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৪ ০৬:৪৪
Share:

ইফতারে মিলেমিশে। — নিজস্ব চিত্র।

কয়েক বছর আগেও এ সব শুধু পরস্পরকে জানা, বোঝার চেষ্টা বলে দেখা যেত। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় রমজান মাসে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ মিলে ইফতারে বসার মধ্যেও সময়ের দায় খুঁজে পাচ্ছেন ওঁরা। চলতি রমজানে এ রাজ্যে কিছু ইফতার আসরেও এমনই বার্তা উঠে এসেছে। ১৫ মার্চ, ‘আন্তর্জাতিক ইসলাম-বিদ্বেষ প্রতিরোধ দিবস’ বলে চিহ্নিত করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। দিনটির উদ্‌যাপন ও বন্ধুত্বের ইফতার সমাবেশ এক বিন্দুতে মিলিয়েই এ বার ভালবাসার জোরে ঘুরে দাঁড়ানোর ডাক শোনা গেল।

Advertisement

ভুয়ো খবর যাচাইয়ের মঞ্চ অল্ট নিউজ-এর কর্ণধার প্রতীক সিংহ শনিবার ‘নো ইয়োর নেবর’ এবং ‘মাইনরিটি কাউন্সিল অব বেঙ্গল’-এর ইফতারে এসেছিলেন। তিনি বলছিলেন, “যে কোনও সাধারণ ঘটনাতেই মুসলিমদের হিংস্র, দানবীয় মূর্তি নির্মাণের অপচেষ্টা চলছে। স্কুলস্তরেই এর বিরুদ্ধে প্রচার দরকার।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক ঈপ্সিতা হালদার বা শহরের একটি নামী স্কুলে পদার্থবিদ্যার শিক্ষিকা মাধুরী কাট্টিও ক্লাসঘরে সচেতনতা বিস্তারে বিশ্বাসী। দেশে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ঘিরে নানা আশঙ্কা বা আমদাবাদে রমজান সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে মুসলিম ছাত্রের উপরে হামলা মারাত্মক বিপদ সঙ্কেত বলেই দেখছেন তাঁরা অনেকে। ওয়াশিংটনে ‘ইন্ডিয়া হেট ল্যাব’ নামে একটি গবেষক গোষ্ঠীর হিসাব বলছে, ২০২৩-এর শেষার্ধ্বে ভারতে মুসলিম-বিরোধী ঘৃণা-ভাষণ বেড়েছে ৬২ শতাংশ। বছরভর ৬৬৮টি এমন ঘটনা ঘটেছে। ঈপ্সিতার কথায়, “আজকাল প্রায়ই লোকগাথাকে ইতিহাস বলে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। ইউরোপেও প্রাচীন স্থাপত্য ভেঙে গির্জা তৈরির নমুনা রয়েছে। পড়ুয়াদের বোঝাতে হবে, বার বার ইতিহাসের চাকা ঘোরালেই সুবিচার মেলে না।”

সিএএ-তে আপাত ভাবে এ দেশের মুসলিমদের ক্ষতি নেই বলা হলেও তাতে নিহিত মুসলিম বিদ্বেষ নিয়ে সরব হলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক রাজ্যেশ্বর সিংহ। তাঁর কথায়, “আমরা পড়শি রাষ্ট্রে মুসলিমদের আগ্রাসনকারী বলে দেখি। কিন্তু মুসলিমরা আক্রান্ত হলেও তাঁদের শরণার্থী বা বিপন্ন বলে স্বীকার করি না। এ দেশে কয়েক দশক ধরেই মুসলিমদের কোণঠাসা হওয়ার ঘটনা অস্বীকারের চেষ্টা চলছে।” এই দুর্দিনে ভারতের বহুত্ব রক্ষার আদর্শ মনে রাখার কথাই বলছিলেন উদ্যোক্তাদের মধ্যে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার অধ্যাপক মহম্মদ রিয়াজ বা রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ আহমদ হাসান ইমরানেরা। ধর্মের বেড়া ভেঙে ইফতার আসরও সে-কথাই বলল। সমাজকর্মী শর্মিষ্ঠা দত্তগুপ্ত বলছিলেন, “১৯৯২ বা ২০০২-এও বিদ্বেষের এই বহর বোঝা যায়নি। হিন্দু, মুসলিমদের পাশাপাশি থাকার এলাকায় যৌথ কর্মসূচির চেষ্টা জরুরি।”

Advertisement

অন্য রাজ্যের মতো বাংলাতেও ঘৃণার স্ফুলিঙ্গ নিয়ে নানা আক্ষেপ শোনা যাচ্ছিল। প্রতীচী ট্রাস্টের গবেষক সাবির আহমেদ মনে করালেন, রবীন্দ্র-সুহৃদ ক্ষিতিমোহন সেনের হিন্দু, মুসলিম যুক্ত সাধনার আদর্শও এই মাটি থেকেই উঠে আসে! একই দিনে মানিকতলা খালপাড়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে ভাষা ও চেতনা সমিতির ইফতার আসরও সবাইকে নিয়ে চলার ডাক দিয়ে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন