মিছিল মোর্চা সমর্থকদের।— ফাইল চিত্র।
আন্দোলনের আঁচ বাড়াতেই বন্ধ শিথিল করার কথা ভাবছে মোর্চা নেতৃত্ব। কিন্তু ঘরে বাইরে টানাপড়েনের মধ্যে থেকে সে কথা নিজেরাই ঘোষণা করতে চাইছে না। মোর্চা চায়, আজ, বৃহস্পতিবার কালিম্পঙে সর্বদলীয় বৈঠক থেকেই সেই সিদ্ধান্ত উঠে আসুক।
চোদ্দ দিন আগে আচমকা বন্ধের ডাক দিয়েছিল মোর্চা। সাধারণ মানুষ ভাঁড়ার ভরে রাখার সুযোগ পাননি। পাহাড়ে খাবার শেষের পথে। অথচ, মোর্চারও এত দিনের বন্ধে প্রাপ্তি একরকম শূন্যই। বিজেপি সহানুভূতি জানালেও গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাশে দাঁড়ায়নি। তবে সেনা সরেছে। কিন্তু রাজ্য একাধিক অফিসার বদলি করে চাপ বাড়িয়েছে। সমতলে গোর্খাল্যান্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলনও তীব্র হচ্ছে। এই অবস্থায় দলের কট্টরপন্থীরাও গুরুঙ্গদের উপরে চাপ বাড়াচ্ছে। সম্প্রতি দিল্লির যন্তরমন্তরে মোর্চার ধর্নায় বক্তৃতা করতে গিয়ে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি ক্ষোভের মুখে পড়েন। সমর্থকদেরই একটি অংশ দাবি করতে থাকেন, পাহাড় ছেড়ে শীর্ষ নেতারা কেন এখন দিল্লিতে? পাহাড়েও এ দিন শিশু-কিশোরদের শরীরে শিকল বেঁধে মিছিল করে বিতর্কে জড়িয়েছে মোর্চা নেতৃত্ব। এই সব কাজেই প্রথম সারিতে দেখা যাচ্ছে মূলত দলের তরুণদের। তাঁদেরই মঙ্গলবার দেখা গিয়েছে খালি গায়ে টিউবলাইট ভাঙতে।
আরও পড়ুন: স্মৃতির পাহাড় রক্ষায় মিছিলে সকলেই
মোর্চার অন্দরের খবর, এই কট্টরপন্থীরা চান না, বন্ধ শিথিল হোক। কিন্তু মোর্চা নেতারা জানেন, বন্ধ টানতে গেলে, তা অন্তত দিন দু’য়েকের জন্য শিথিলও করতে হবে। যাতে সেই সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত খাবার পাহাড়ে উঠতে পারে। তা যদি না হয়, তা হলে সাধারণ মানুষই মোর্চার বিপক্ষে চলে যাবে। ইতিমধ্যেই ভরা পর্যটন মরসুমে আচমকা বন্ধের ডাকে মোর্চার পাশ থেকে সাধারণ মানুষের সমর্থন কমছে বলে দলের নেতারা ইঙ্গিত পেয়েছেন। জিএনএলএফ সহ পাহাড়ের অন্য দলগুলির প্রতি সমর্থন বাড়ছে। ফলে নতুন করে প্রতিযোগিতার মুখেও পড়ছে মোর্চা।
তাই এক ঢিলে দুই পাখি মারতে মোর্চা চাইছে, সর্বদলীয় বৈঠক থেকেই বন্ধ শিথিল করার কথা ঘোষণা করা হোক। গুরুঙ্গ নিজে সেই সভায় থাকবেন না। মোর্চার অন্দরের খবর, তিনিও চাইছেন এক ঢিলে দুই পাখি মারতে। ওই বৈঠকে গেলে বারবার একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তিনি সমালোচিত হতে পারেন। না থাকলে সেই সম্ভাবনা যেমন কমে যায়, তেমনই বন্ধ শিথিল করার সিদ্ধান্তে সক্রিয় ভাবে যোগ দেওয়ার দায়ও থাকে না। তাতে কট্টরপন্থীরা খুশি হবেন।
মুখে অবশ্য মোর্চা বলছে, তারা গাঁধীবাদী আন্দোলনই করছে। কিন্তু রাজ্যের নির্দেশে বিশেষ তদন্ত করতে অফিসারদের যাওয়ার আগে দার্জিলিঙে জিটিএ-র ইঞ্জিনিয়ারিং সেলের অফিস পোড়ানো হয়েছে। অভিযোগের আঙুল মোর্চার দিকেই। যদিও মোর্চা সেই দায় নিতে চায়নি। দলের সহকারী সম্পাদক বিনয় তামাঙ্গ বলেছেন, ‘‘জিটিএ এখন অতীত। এখন একটাই লক্ষ্য গোর্খাল্যান্ড।’’
এই অবস্থায়, ভেবেচিন্তে পা ফেলছে পুলিশ-প্রশাসন। বুধবার দুপুরে জেলাশাসকের অফিসের সামনে ১৪৪ ধারা অমান্য করে স্লোগান দেওয়া হয়। সেখানেই দু’টি গাড়ি আটকে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা স্যামুয়েল গুরুঙ্গ এবং আর বি ভুজেলকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। মোর্চার সমর্থকেরা থানায় গিয়ে অবস্থানে বসলে ঘণ্টা দুয়েক পরে দু’জনকেই অবশ্য ছেড়ে দেয় পুলিশ।