প্রতীকী ছবি।
স্কুলে স্কুলে পরিচালন সমিতির ছড়ি ঘোরানোর দিন কি শেষ হতে চলল? রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, তাতে অন্তত তেমনটাই মনে করছে শিক্ষা মহল।
সম্প্রতি ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (অ্যাপয়েন্টমেন্ট, কনফার্মেশন, কনডাক্ট অ্যান্ড ডিসিপ্লিন অব টিচার্স অ্যান্ড নন-টিচিং স্টাফ) রুলস ২০১৭’ নামে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে স্কুলশিক্ষা দফতর। তাতে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিয়োগপত্র দেওয়া ও তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ দু’টি অধিকারই সমিতির হাত থেকে কেড়ে নিয়ে দেওয়া হয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের হাতে। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের জন্য ২৪ দফা আচরণবিধিও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। দফতরের ব্যাখ্যা, এ বার থেকে কোনও শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্কুল সার্ভিস কমিশনের সুপারিশ সরাসরি পৌঁছবে পর্ষদে। চাকরির দু’বছরের মধ্যে পুলিশের থেকে শংসাপত্র ও শারীরিক সক্ষমতার প্রমাণপত্র নিয়ে পর্ষদে জমা দিতে হবে। প্রতি বছর সম্পত্তির হিসেবও দিতে হবে পর্ষদে। সেই সঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের শাস্তি-বিধানের অধিকারও দেওয়া হয়েছে পর্ষদের হাতে। এক কর্তার কথায়, ‘‘এত দিন এই সমস্ত ক্ষমতাই ছিল পরিচালন সমিতির হাতে।’’
বিকাশ ভবনের ব্যাখ্যা, রাজ্যের বহু স্কুলের পরিচালন সমিতি ঠিক ভাবে কাজ করছে না বলে অভিযোগ উঠছিল। অনেক স্কুলে সমিতির সদস্য-সংখ্যায় গরমিল রয়েছে। যে হেতু শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিয়োগপত্র দিত পরিচালন সমিতি, তাই এর সুযোগ নিয়ে প্রায় প্রতিটি স্কুলেই সমিতির সদস্যেরা (শাসক দলের স্থানীয় নেতা-কর্মী-সমর্থক) পছন্দের লোক ঢোকাতেন। এক কর্তা বলেন, ‘‘বিশেষত নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতাদের নিয়ন্ত্রণ করতে দল এবং দফতর হিমসিম খেত। তাই সমিতির ক্ষমতা খর্ব করা হল।’’
এ বিষয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় শনিবার বলেন, তিনি কিছুই জানেন না। ‘‘গেজেট হাতে এলে যা বলার বলব’’— মন্তব্য সভাপতির। তবে তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সাফ কথা, ‘‘অধিকাংশ পরিচালন সমিতির সদস্যরা স্কুলের উন্নতির থেকে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকতেন। ফলে স্কুলগুলির সর্বনাশ হচ্ছিল। সরকারের এই সিদ্ধান্তে আমরা খুশি।’’
আচরণবিধি অবশ্য দীর্ঘ। যেমন— শিক্ষক কিংবা শিক্ষাকর্মীরা তাঁদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দেশ এবং রাজ্যের বিরুদ্ধে কোনও ‘অপমানজনক’ কথা বলতে পারবেন না। যে কোনও অভিযোগ প্রথমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। একমাত্র প্রাণসংশয় ও স্বাধীনতার সমস্যা হলে তবেই কোর্টে যাওয়া যাবে। স্কুলের বাইরের অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে গেলে পর্ষদের আগাম অনুমতি নিতে হবে। আচরণবিধি না মানলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, যেমন বহিষ্কার, পিএফ-গ্র্যাচুইটি কমিয়ে দেওয়ার মতো ব্যবস্থা নিতে পারে পর্ষদ।
নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য সরকার মনে করেন, এই সিদ্ধান্তে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস হবে। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলও বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করা হল।’’ অ-বামপন্থী পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির নব কর্মকার বলেন, ‘‘এর ফলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ বাড়ল।’’