সিবিআই তদন্ত চায় দুলাল কুমারের গ্রাম ডাভা

নতুন পুলিশ সুপার দাবি করছেন, ময়না-তদন্তের রিপোর্টে স্পষ্ট আত্মঘাতীই হয়েছেন দুলাল। কিন্তু, মানতে নারাজ তাঁর পরিবার, দল। নারাজ বিজেপির বলরামপুরের গেঁড়ুয়া মণ্ডলের প্রমুখ মৃত দুলাল কুমারের গ্রাম ডাভাও। সবাই এক যোগে সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছেন।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৮ ০১:২৬
Share:

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে নতুন পুলিশ সুপার। নিজস্ব চিত্র

নতুন পুলিশ সুপার দাবি করছেন, ময়না-তদন্তের রিপোর্টে স্পষ্ট আত্মঘাতীই হয়েছেন দুলাল। কিন্তু, মানতে নারাজ তাঁর পরিবার, দল। নারাজ বিজেপির বলরামপুরের গেঁড়ুয়া মণ্ডলের প্রমুখ মৃত দুলাল কুমারের গ্রাম ডাভাও। সবাই এক যোগে সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছেন।

Advertisement

জেলার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া রবিবার সকালে তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট দেখিয়ে দাবি করেন, দুলাল আত্মহত্যাই করেছেন। সেই খবর পৌঁছতেই ডাভা দু’পাশে ঘাড় নেড়েছে। বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গিয়েছে অনেকের। সেই সঙ্গে ছুটে এসেছে একগুচ্ছ প্রশ্নও।

মৃতের মা সুকুরমণি প্রশ্ন করেন— ‘‘দুলাল আত্মহত্যা কেন করতে যাবে বলুন তো? আমাকে বলল, বাবাকে খাবার পৌঁছে দিয়েই আসছি। তা ছাড়া ঘরে তো কোনও অশান্তি বা ঝগড়াও ছিল না। কোন যুক্তিতে আমরা মেনে নেব যে সে আত্মহত্যা করেছে?’’ দুলালের স্ত্রী মনিকারও এক প্রশ্ন, ‘‘আত্মহত্যার বিষয়টি কোন যুক্তিতে মানা যায়? কেন সে আত্মহত্যা করবে? ওঁর মনের মধ্যে কোন ঘটনা নিয়ে টানাপড়েন চললে অন্তত আমি তো জানতাম।’’

Advertisement

দুলালের দাদা কাশীনাথ জানান, ভাই ব্যবসা করলেও বাজারে যে বিরাট ঝণ রয়েছে, তেমনটা নয়। অন্য কোনও বিষয় নিয়েও গোলমাল ছিল না। তাই পুলিশের আত্মহত্যার তত্ত্ব কোনও ভাবেই তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছেন না। গ্রামের লোকেদের ভিড় এ দিনও সঙ্গে ছিল কুমার পরিবারের। সেই ভিড় থেকেও লোকজনের প্রশ্ন ভেসে আসে— ‘‘আত্মহত্যা করতে মাটি থেকে টাওয়ারের উপরে প্রায় ১৫ ফুট উঁচুতে কেউ কষ্ট করে উঠতে যাবে কেন? দুলাল আত্মহত্যা করেনি। আমরা সিবিআই তদন্ত চাইছি।’’

দুলালের দলও এ নিয়ে মুখ খুলেছে। বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর মতে, ‘‘গত বৃহস্পতিবার বাঘমুণ্ডি থেকে ফেরার পথে দুলালকে দুয়ারসিনি মোড়ের কাছে দাঁড় করিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সেই ঘটনা এলাকার মানুষ ও পুলিশও জানে। তা হলে ঘটনাটিকে নেহাত আত্মহত্যা বলে কেন এড়াতে চাইছে পুলিশ?’’

এ দিকে, শনিবার স্বামীর মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে শোকে পাথর স্ত্রী মনিকা জল ছাড়া কার্যত সে দিন কিছুই মুখে তোলেননি। রবিবার দলের রাজ্যনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় দুলালের বাড়িতে গিয়ে মনিকাকে ছাতুর সরবত খাওয়ান। লকেটকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মনিকা। তাঁর তিন সন্তানকে এখন কে দেখবে, এ নিয়ে আক্ষেপ করছিলেন মনিকা।

শনিবার ঘটনাস্থলে জনতার ছোড়া ইটে জখম হন এক পুলিশকর্মী। সেই ঘটনায় শরৎ সিং সর্দার নামে স্থানীয় দোলদেরিয়ার এক বাসিন্দাকে গ্রেফতার করা হয়। আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) রাজীব মিশ্র ও নতুন পুলিশ সুপার শনিবার রাতেই বলরামপুরে যান।

রবিবার দুলালের বাড়িতে সান্ত্বনা দিতে যান রাজ্য নেতা সায়ন্তন বসু। তিনি বলেন, ‘‘দুলাল আত্মহত্যা করেছে বলে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট দেখিয়েই পুলিশ দায় সারতে পারে না। ওই অপমৃত্যুর পিছনে পারিপার্শ্বিক কী কারণ রয়েছে, সে সব খতিয়ে দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তদন্তে গড়িমসি চলবে না।’’ তবে রাজ্য পুলিশের উপরে ভরসা না করে তাঁরা সিবিআই তদন্ত চাইছেন। সে জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন বলেও তিনি জানান। আসানসোলে কেন্দ্রীয় কৃষি প্রতিমন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।’’ তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করছেন, পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবেই তদন্ত করছে।

সুপুরডি ও ডাভা দু’টি গ্রামেই শনিবার বিকেল ও রবিবার যায় সিআইডি দল। তাঁরা ত্রিলোচন মাহাতো ও দুলাল কুমারের পরিজনদের সঙ্গে কথা বলেন। যান ঘটনাস্থলেও। যদিও সায়ন্তন বলেন, ‘‘সিআইডি তদন্তে আমাদের আস্থা নেই। তাই আমরা এই দু’টি পরিবারের লোকজনকে কলকাতায় যেতে বলেছি। তাঁরা গেলেই এই দাবিতে আমরা হাইকোর্টে যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন