বেলুড় মঠ থেকে দক্ষিণেশ্বর ও বরাহনগরের মধ্যে নৌকা পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকেই বন্ধ হবে পরিষেবা। এর বদলে গঙ্গা পারাপারের জন্য পুরোমাত্রায় লঞ্চ চালু করছে পরিবহণ দফতর।
তবে শতাব্দী প্রাচীন এই পরিষেবা বন্ধ হলে ওই সব নৌকার উপর নির্ভরশীল পরিবারগুলি চরম সঙ্কটে পড়বে। তবে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে নৌকা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মাঝি কিংবা কর্মীদের নিরাশ হওয়ার কারণ নেই বলেই জানিয়েছেন পরিহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘ওই ফেরি পরিষেবার সঙ্গে অনেক মানুষের রোজগার জড়িয়ে। তবে সকলকে সরকারি চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। সেখানকার মাঝি-কর্মী বা তাঁদের পরিবারের কেউ যোগ্য হলে বেলুড়-সহ অন্য জেটিতে অথবা অন্য কোনও কাজে লাগানো হবে।’’ সম্প্রতি বেলুড় মঠের জেটি দেখতে আসেন মন্ত্রী।
বেলুড় মঠের পাশে কাঠগোলা ঘাট থেকে নৌকা পারাপার করে দক্ষিণেশ্বর ও বরাহনগরের কুঠিঘাটে যান দর্শনার্থীরা। অল্প সময়ে গঙ্গা পেরিয়ে বেলুড়-দক্ষিণেশ্বর-কাঁচের মন্দির ঘুরতে এই ফেরি পরিষেবা ব্যবহার করেন তাঁরা। কারণ, সড়ক পথে বালি ব্রিজ পেরিয়ে যেতে যানজটে পড়তে হয়। কয়েক বছর আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেলুড় মঠ-দক্ষিণেশ্বর-বরাহনগর-বাগবাজারকে নিয়ে একটি ট্যুরিস্ট সার্কিট গড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই মতো তৎকালীন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র বেলুড় মঠ থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত লঞ্চ পরিষেবা চালু করেন। দক্ষিণেশ্বরে তৈরি হয় স্থায়ী জেটি।
রাজ্য পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে দু’টি লঞ্চ বেলুড় মঠ থেকে দক্ষিণেশ্বর ও কুঠিঘাটের মধ্যে চলাচল করে। পাশাপাশি চলে নৌকাও। স্থানীয় কাউন্সিলর চৈতালী বিশ্বাস জানান, কয়েক বছরের মধ্যে দু’টি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে এই জলপথে। বরাহনগর কুঠিঘাটে পৌঁছনোর আগেই উল্টে গিয়েছিল যাত্রী বোঝাই একটি নৌকা। তাতে কয়েক জনের মৃত্যু হয়। আবার দক্ষিণেশ্বর যাওয়ার পথে নৌকায় বাজ পড়ে আহত হন কয়েক জন যাত্রী।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ওই দু’টি রুটে আপাতত চারটি লঞ্চ চলাচল করবে। পরে বাড়ানো হবে লঞ্চ। ২০ বছর ধরে নৌকা চালাচ্ছেন সঞ্জীব দাস, স্বপন গঙ্গোপাধ্যায়েরা। তাঁরা বলেন, ‘‘নৌকা চালিয়ে আর সংসার টানা যাচ্ছে না। তাই সরকারের এই সিদ্ধান্ত খুবই ভাল। আর আমাদেরও আর্থিক সুরাহা হবে।’’