প্রশিক্ষিত মনোবিদ নেই, তবু গা-ছাড়া রাজ্য

যে হারে ভারতে মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে এখনও মোকাবিলার পথ না খুঁজলে আর কয়েক বছরের ভিতরেই মানসিক রোগ কার্যত মহামারির আকার নেবে। এখনই ভারতের মোট জনসংখ্যার সাড়ে সাত শতাংশের বেশি মানুষ কোনও না কোনও মানসিক রোগে ভুগছেন।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:০৬
Share:

চলতি বছরই বিপদঘণ্টি বাজিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জানিয়েছে, যে হারে ভারতে মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে এখনও মোকাবিলার পথ না খুঁজলে আর কয়েক বছরের ভিতরেই মানসিক রোগ কার্যত মহামারির আকার নেবে। এখনই ভারতের মোট জনসংখ্যার সাড়ে সাত শতাংশের বেশি মানুষ কোনও না কোনও মানসিক রোগে ভুগছেন।

Advertisement

রোগ বাড়ার আগে তা চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণের কাজে মনশ্চিকিৎসকদের পরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল প্রশিক্ষিত ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্টদের। কিন্তু বৈধ ডিগ্রিধারী ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট তৈরিতে এক ধাক্কায় পিছিয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।

ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট হিসেবে প্র্যাকটিস করতে হলে ২০০৭ সালের পর থেকে ‘রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’ বা আরসিআই-এর স্বীকৃত এমফিল করার নিয়ম হয়েছে। কেন্দ্রের যুক্তি, এমফিলের পাঠ্যক্রম এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীদের হাতেকলমে প্রচুর রোগী দেখার অভিজ্ঞতা হয়। কিন্তু রাজ্যের যে দু’টি সরকারি সংস্থায় ওই ‘এমফিল’ করা যায়, তার একটিও এ বছর এখনও ছাত্র ভর্তির অনুমতি পায়নি আরসিআই-এর কাছ থেকে।

Advertisement

এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরের ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি’র (আইওপি) কর্তারা এক রকম জানিয়েই দিয়েছেন, একটা বছর নষ্ট হল। ২০১৭-১৯ শিক্ষাবর্ষে ছাত্রভর্তি করার সময় আর পাওয়া যাবে না। যদি চলতি বছরের শেষের দিকে আরসিআইয়ের অনুমতি আসেও তা হলে ২০১৮-২০ শিক্ষাবর্ষের জন্য ছাত্রভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই সংস্থায় ১৬টি আসনে ক্লিনিকাল সাইকোলজির এমফিল করার জন্য ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করা হচ্ছিল। সব ক’টি আসনই চলতি বছর নষ্ট হল। তার উপর, ২০১৬-১৮ শিক্ষাবর্ষে যে ছাত্রছাত্রীরা ইতিমধ্যে পড়ছেন তাঁদের ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ শেষ পর্যন্ত অনুমোদন না মিললে তাঁরা পাশ করলেও ডিগ্রি বৈধ হবে না।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগেও ক্লিনিকাল সাইকোলজিতে এমফিল করা যায়। ১২টি আসন রয়েছে। কিন্তু চলতি শিক্ষাবর্ষে তারা এখনও আরসিআই-এর অনুমোদন চেয়ে আবেদনই পাঠাতে পারেনি। সেখানকার কর্তারা জানান, সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত সময় রয়েছে। তাঁরা চেষ্টা করছেন তার মধ্যে পাঠাতে। কিন্তু আরসিআই-এর মেম্বার-সেক্রেটারি এস কে শ্রীবাস্তবের কথায়, ‘‘সেপ্টেম্বরের শেষে আবেদন পাঠালে এ বছরের জন্য আর অনুমতি কী করে পাবে? ১৮-২০’র শিক্ষাবর্ষের জন্য পাবে। এ বছরের জন্য তো এত দিনে আবেদন চলে আসার কথা।’’

কেন দেরি? বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় কর্তাদের বক্তব্য, ‘‘শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা কম থাকা নিয়ে সমস্যা ছিল। তা ছাড়া, প্রশাসনিক কিছু অসুবিধা হচ্ছিল।’’ আইওপি-র অধিকর্তা প্রদীপ সাহাও জানান, তাঁরা অনলাইনের বদলে ডাক মারফত আবেদন পাঠানোতেই আরসিআই তা খারিজ করে। আবার অনলাইনে আবেদন করা হয়। কিন্তু এখনও তার উত্তর আসেনি।

আরসিআই-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর রাজেশ কুমার বর্মার কথায়, ‘‘কেউ যদি সময়ের ভিতর এবং নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আবেদন না-পাঠায় তা হলে কিচ্ছু করার নেই।’’ মেম্বার সেক্রেটারিও বলেন, ‘‘পূর্বাঞ্চলে এমনিতেই ক্লিনিকাল সাইকোলজিতে এমফিল করার জায়গা কম। তায় পশ্চিমবঙ্গের এই অবস্থায় আমরা চিন্তিত।’’ বিশিষ্ট মনশ্চিকিৎসক জয়রঞ্জন রামের কথায়, ‘‘ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্টদের যেমন চাহিদা তেমন আকাল। জেলায় তো পাওয়াই যায় না। এই অবস্থায় আইওপি এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রভর্তি করতে না পারাটা রোগী ও চিকিৎসক উভয়ের পক্ষেই দুঃসংবাদ।’’

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন