Mamata Banerjee talk about political Issue

‘আমাকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরানোর চেষ্টা হয়েছিল আমার দলেই’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে অন্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানোর চেষ্টা হয়েছিল তাঁর দলের অন্দরেই! দলেরই কয়েক জনকে টোপ দিয়ে নেত্রীকে সরকারের মাথা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত হয়েছিল!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৭ ২৩:৪৪
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে অন্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানোর চেষ্টা হয়েছিল তাঁর দলের অন্দরেই! দলেরই কয়েক জনকে টোপ দিয়ে নেত্রীকে সরকারের মাথা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত হয়েছিল!

Advertisement

এমনই বিস্ফোরক তথ্য উঠে এল এবিপি আনন্দে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একান্ত সাক্ষাৎকারে। চক্রান্ত কারা করেছিলেন, কাদেরই বা টোপ দেওয়া হয়েছিল, সে বিষয়ে বিশদ তথ্য মুখ্যমন্ত্রী দেননি। তবে চেষ্টা যে হয়েছিল, তা স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি যে কোনও চক্রান্তের সামনেই মাথা নোয়াবেন না, আপোসের রাস্তাতেও যে হাঁটবেন না, সাক্ষাৎকারে সে কথাও বেশ স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।

আরও পড়ুন: শ্রীজাতর উদ্বেগের কারণ নেই: মমতা

Advertisement

উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রী করেছে বিজেপি। এই আদিত্যনাথই হয়তো কখনও মোদীকে সরিয়ে নিজে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। এমন সম্ভাবনার কথা এ দিন শোনা গিয়েছে মমতার মুখে। এ প্রসঙ্গেই তিনি জানান যে, তাঁর দলেও কেউ কেউ তাঁকে সরিয়ে নিজে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ছক কষেছিলেন। কে বা কারা এই ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলেন, তা মমতা স্পষ্ট করতে চাননি কিছুতেই। তবে তিনি জানান, তৃণমূলের কয়েক জনকে টোপ দেওয়া হয়েছিল। তাঁরাই মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে তাঁকে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। মমতা বলেন, ‘‘আমি কাউকে অপ্রস্তুতে ফেলতে চাই না, তাই কারও নাম বলব না।’’

নারদ কাণ্ডে সম্প্রতি সিবিআই তদন্তের রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেই রায় শোনার পর মমতা উষ্মাই প্রকাশ করেছিলেন। সিবিআই তদন্ত রুখতে তাঁর নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকার এবং তৃণমূল। কিন্তু লাভ হয়নি, সিবিআই তদন্তের নির্দেশই বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই সারদা এবং রোজভ্যালি কাণ্ডের তদন্তে ইতিমধ্যেই নাজেহাল করে রেখেছে এ রাজ্যের শাসক দলকে। তার মধ্যে নারদ কাণ্ডের তদন্তভারও সিবিআই-এর হাতে যাওয়ায় মমতা আরও চাপে পড়বেন বলে মনে করেছিল রাজনৈতিক মহলের একাংশ। কিন্তু বৃহস্পতিবারের একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বেশ স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিলেন, চাপ যতই বাড়ুক, মাথা নোয়ানোর রাস্তায় তিনি হাঁটবেন না। পাল্টা আক্রমণেই যাবেন তিনি।

এ দিন বিজেপি-র কঠোর সমালোচনা শোনা গিয়েছে তৃণমূলনেত্রীর মুখে। নারদ নিউজের স্টিং অপারেশন বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই করানো হয়েছিল বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। ২০১৪ সালে এই স্টিং অপারেশন হয়। ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে তা প্রকাশ করা হয়। মমতা জানান, ২০১৪ সালের ভোটের আগে বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষকে তাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল একটি দল (বিজেপি)। মমতা তার বিরোধিতা করেন। তার পরেই নারদকে কাজে লাগানো হয় এবং ২০১৬ সালের ভোটের আগে সেই সব ফুটেজ বাজারে ছাড়া হয়। বিজেপি দফতর থেকে কেন নারদের ফুটেজ দেখানো হয়েছিল, সে প্রশ্নও এ দিন ফের তুলেছেন তিনি। নারদ কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত হবে কি না, বিজেপি নেতারা আগে থেকে কী করে তা জানলেন, সে প্রশ্নও এ দিন ফের তুলেছেন।

ফাইল চিত্র।

তবে নারদ কাণ্ডে যে তৃণমূলের যে নেতা-মন্ত্রী-সাংসদদের নাম জড়িয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কিন্তু মমতা মুখ খোলেননি। ভোটের আগে অনুদান নেওয়া কোনও অপরাধ নয়, সাক্ষাৎকারে অত্যন্ত জোর দিয়ে ফের এ কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, নারদ নিউজের দেখানো ফুটেজে কয়েক লক্ষ টাকা করে নিতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল নেতাদের। কিন্তু কংগ্রেস, বিজেপি, মায়াবতীর বিএসপি এবং সিপিএমের কত শয়ে শয়ে কোটি টাকা রয়েছে, তার ঠিক নেই। হিসাব বহির্ভূত টাকার নিরিখে দেশে কংগ্রেস প্রথম, বিজেপি দ্বিতীয় এবং মায়াবতী তৃতীয় স্থানে রয়েছেন বলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর দাবি।

অন্য দিকে, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-র জয়কে ‘বিপুল’ আখ্যা দিতে নারাজ মমতা। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে বিজেপির বিপুল জয় হয়নি, ওটা একতরফা জয় হয়েছে।’’ কংগ্রেস-সপা জোট ঠিক মতো লড়াই দিতে পারেনি বলে তাঁর দাবি। বাংলায় কোনও ভাবেই বিজেপি উত্তরপ্রদেশের মতো ফল করতে পারবে না বলে মনে করছেন মমতা। যেখানে আঞ্চলিক দল শক্তিশালী, সেখানে বিজেপি কিছুতেই জিততে পারবে না বলে তাঁর মত। উত্তরপ্রদেশে সপা-বিএসপি এক হলে বিজেপি জিততে পারত না বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী শক্তি দানা বাঁধতে পারছে না, সাক্ষাৎকারে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এত ভয় পেলে চলবে কী করে?... শুধু আমিই লড়ব, আর কেউ কিছু বলবে না! বিড়ালের গলায় ঘণ্টাটা কাউকে তো বাঁধতে হবে!’’ তিনি প্রতিবাদ করেন বলেই সিবিআই-কে দিয়ে তাঁর দলকে হেনস্থা করার চেষ্টা চলছে বলে মমতা অভিযোগ করেছেন। তবে আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি নেই এখনও। বললেন, ‘‘ওঁরা যদি বাংলাকে টার্গেট করেন, আমরাও ভারতকে টার্গেট করব। চ্যালেঞ্জ রইল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন