চোলাই ঠেক নিয়ে প্রশ্ন তোলায় মারধর

বাড়ির সামনে চলছে চোলাইয়ের ঠেক— পুলিশ-প্রশাসনে অভিযোগ জানিয়েছিলেন সরকারি ইঞ্জিনিয়ার আরতি লক্ষ্মণ। গত ৮ জুলাই থেকে এ ব্যাপারে তাঁর তরফে বিস্তর তৎপরতা সত্ত্বেও পুলিশ তদন্তে নামে প্রায় তিন সপ্তাহ পরে, বৃহস্পতিবার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৬ ০৩:০৩
Share:

বিষ্ণুপুর হাসপাতালের সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে পুষ্পরানি লক্ষ্মণ। ছবি: শুভ্র মিত্র।

বাড়ির সামনে চলছে চোলাইয়ের ঠেক— পুলিশ-প্রশাসনে অভিযোগ জানিয়েছিলেন সরকারি ইঞ্জিনিয়ার আরতি লক্ষ্মণ। গত ৮ জুলাই থেকে এ ব্যাপারে তাঁর তরফে বিস্তর তৎপরতা সত্ত্বেও পুলিশ তদন্তে নামে প্রায় তিন সপ্তাহ পরে, বৃহস্পতিবার। আর ওই রাতেই বাড়িতে হামলা চালিয়ে আরতিদেবীর বৃদ্ধা মায়ের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল ঠেকের লোকজনের বিরুদ্ধে। মার খান মহিলার দাদাও।

Advertisement

বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহরের এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের ভূমিকা। স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা ব়ড় অংশের ক্ষোভ, ‘‘পাড়ার মধ্যে চোলাইয়ের ঠেক বন্ধ করার দায়িত্ব পুলিশের। পুলিশ নিজে থেকে ব্যবস্থা নিলে চোলাই ব্যবসায় জড়িতদের হামলার শিকার হতে হয় না সাধারণ নাগরিকদের।’’ তবে বিষ্ণুপুর থানার দাবি, ওই এলাকায় চোলাই ঠেক চলছিল বলে তাদের জানা ছিল না।

ঘটনার সূত্রপাত, গত ৮ জুলাই। সে দিন শহরের কাদাকুলি মহাপাত্রপাড়ার বাসিন্দা বছর তিরিশের আরতিদেবী বিষ্ণুপুর থানায় অভিযোগ করেন, তাঁর বাড়ির উল্টো দিকে ঝুপড়ি করে চোলাইয়ের ঠেক চালাচ্ছে এলাকারই বিল্টু মাঝি। পঞ্চায়েত দফতরের ইঞ্জিনিয়ার আরতিদেবী জানান, পুলিশ নড়েচড়ে না বসায় ১০ জুলাই এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) এবং ১৯ জুলাই মহকুমাশাসকের (বিষ্ণুপুর) দ্বারস্থ হন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ এলাকায় যায়। কর্মসূত্রে সে দিন আরতিদেবী ছিলেন হুগলিতে।

Advertisement

পরিবারটির দাবি, বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযোগ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করে তাঁদের বাড়ি থেকে ফিরে যায় পুলিশ। স্থানীয় সূত্রের খবর, পুলিশ আবার ওই পাড়ায় যায় রাত ৯টা নাগাদ। ধরপাকড় করেনি। শুধু শুক্রবার সকালের মধ্যে ঝুপড়ি ভেঙে দিতে বলে ফিরে যান পুলিশকর্মীরা।

আরতিদেবীর দাদা মাধববাবুর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ ঠেক তেকে বেরিয়ে তাঁদের বাড়িতে হামলা চালায় নেশা করে থাকা কিছু লোক। পেশায় হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী মাধববাবুর কথায়, ‘‘লোকগুলো লাঠি দিয়ে আমাকে বেধড়ক মারে। আমাকে বাঁচাতে গেলে মায়ের (পুষ্পরানি লক্ষ্মণ) মাথায় লাঠির বাড়ি মারে। ইট মেরে জানলার কাচ ভেঙে দেয়। আমার মোটরবাইক ভাঙচুর করে।’’

হামলা যখন চলছে, তখন বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে থানায় ফোন করেন মাধববাবুর স্ত্রী ময়নাদেবী। আধ ঘণ্টা বাদে পুলিশ পৌঁছয়। ততক্ষণে হামলাকারীরা চম্পট দিয়েছে। রাতে পুলিশ অভিযুক্ত বিল্টু মাঝি ও তার আত্মীয় মিলন মাঝিকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার বিষ্ণুপুর আদালতের বিচারক ধৃতদের ১৪ দিন পুলিশ-হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

বিষ্ণুপুর হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে বছর সাতষট্টির পুষ্পরানিদেবীর। আরতিদেবীর আক্ষেপ, ‘‘আমি সরকারি কর্মী। অন্যায় রুখতে অভিযোগ জানিয়ে যদি আমার পরিবারের এই দশা হয়, সাধারণ মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে কোন ভরসায়!’’ এলাকাবাসীর বক্তব্য, পুলিশ যদি বৃহস্পতিবার রাতেই অভিযান চালিয়ে ঠেক ভেঙে দিত, তবে দুষ্কৃতীদের আরতিদেবীর বাড়িতে হামলা চালানোর সাহস হতো না। তবে এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) লাল্টু হালদার বলেন, ‘‘থানা জানিয়েছে, তদন্তে গিয়ে পুলিশকর্মীরা দেখেছিলেন, এলাকার কিছু যুবক ঝুপড়িতে পিকনিক করছে। তাদের কয়েকজন মদ্যপ ছিল। তবে ওখানে চোলাই বিক্রি হচ্ছিল না।’’

আরতিদেবী প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানোর পরেও ব্যবস্থা হতে দেরি হল কেন? মহকুমাশাসক ময়ূরী বসুর মন্তব্য, ‘‘পুলিশ বলতে পারবে।’’ আর বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘কেন দেরি হল, খোঁজ নিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন