বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনর্নিয়োগ স্থগিত হওয়ার পরেও যাদবপুর তাদের সদ্য-অবসরপ্রাপ্ত তিন শিক্ষককে রেখে দেওয়ায় আরও কঠোর অবস্থান নিল রাজ্য সরকার। যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বিষয়টির এক দফা ব্যাখ্যা দেওয়ার পরেও আজ, মঙ্গলবার তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতর।
যাদবপুর সূত্রের খবর, অবসরের পরেও তিন শিক্ষককে কেন তিন মাসের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করে উপাচার্য সুরঞ্জনবাবু গত শনিবার উচ্চশিক্ষা সচিব বিবেক কুমারকে চিঠি দেন। আর সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, উচ্চশিক্ষা সচিবের তরফ থেকে যে-চিঠি উপাচার্যের কাছে গিয়েছে, তাতে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত সরকার মোটেই সমর্থন করছে না। এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
একই সঙ্গে উচ্চশিক্ষা দফতর জানিয়ে দিয়েছে, যাদবপুরে যে-ভাবে অবসরপ্রাপ্ত তিন শিক্ষককে রেখে দেওয়া হয়েছে, তা যথাযথ ও নিয়মানুগ নয়। যদি পঠনপাঠনের স্বার্থে শিক্ষকদের রাখতেই হয়, তা হলে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ‘গেস্ট টিচার’ হিসেবে ক্লাস-পিছু সম্মান দক্ষিণা দিয়ে রাখা যেতে পারে। এই মর্মে নির্দেশিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।
‘‘আমরা সরকারি নির্দেশিকার বাইরে কখনওই যাব না। এ ভাবে পুনর্নিয়োগ মেনে নেওয়া হবে না,’’ এ দিনও বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পুনর্নিয়োগ রদের সিদ্ধান্ত রূপায়ণে তাঁরা যে ‘শক্ত পদক্ষেপ’ করতে তৈরি, মন্ত্রী তা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। এক প্রস্ত ব্যাখ্যা দেওয়ার পরেও উপাচার্যকে তলব করাটা সরকারের সেই কঠোর অবস্থানেরই প্রমাণ বলে মনে করছে শিক্ষা শিবিরের একাংশ। পুনর্নিয়োগ রদের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন রাজ্য জুড়ে কর্মবিরতি আন্দোলনে নামায় খুবই রুষ্ট হয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। এই ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি কেন, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। মন্ত্রী তথা সরকারের ক্ষোভ বাড়ে যাদবপুর নিজেদের মতো করে অবসরপ্রাপ্ত তিন শিক্ষককে রেখে দেওয়ায়। এবং প্রয়োজনে নিজেরাই ওই তিন জনের বেতন দেবে বলে ঘোষণা করায়।
শাসক দলে তৃণমূলের সমর্থক শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা স্বাভাবিক ভাবেই সরকারি সিদ্ধান্তের পক্ষে। অবসরের পরে যাদবপুর যে-ভাবে তিন শিক্ষককে রেখে দিয়েছে, তার বিরোধিতা করে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছে তারা। ৩০ নভেম্বর অবসরের পরে পদার্থবিদ্যার অপরাজিতা ভট্টাচার্য, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সুজিত বিশ্বাস এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক অমিতাভ সরকারকে ১ ডিসেম্বরই পুনর্নিয়োগ দিয়ে সরকারের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে নেমেছে যাদবপুর। পুনর্নিয়োগ রদের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় প্রথম থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (জুটা)-ই বেশি সরব। তাদের তরফে সুর নরম করার কোনও ইঙ্গিত নেই। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পুনর্নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়ায় কী কী অসুবিধা হতে পারে, পড়ুয়া ও গবেষকদের তা বোঝানো হবে। ২৪ ডিসেম্বর, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের দিন এই বিষয়ে পুস্তিকা বিলি করা হবে পড়ুয়া, অভিভাবক এবং প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে।