Rajya Sabha Election

রাজ্যসভায় তিন সাংসদকে ফেরত পাঠাল না তৃণমূল, তাঁদের কাজে কি অসন্তুষ্ট ছিলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব?

তৃণমূলের রাজ্যসভার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ গিয়েছেন শুভাশিস চক্রবর্তী, আবীররঞ্জন বিশ্বাস ও শান্তনু সেন। খানিকটা ব্যতিক্রমী ভাবেই তৃতীয় বার রাজ্যসভায় যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছেন নাদিমুল হক।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৫২
Share:

রাজ্যসভা ভোটে টিকিট পেলেন না তৃণমূলের তিন বিদায়ী সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী, শান্তনু সেন ও আবিররঞ্জন বিশ্বাস। —ফাইল চিত্র।

তিন সাংসদকে রাজ্যসভায় ফেরাল না তৃণমূল। শুভাশিস চক্রবর্তী, আবির রঞ্জন বিশ্বাস ও শান্তনু সেন পুনরায় রাজ্যসভায় মনোনয়ন না পেলেও খানিকটা ব্যতিক্রমী ভাবেই তৃতীয় বার সংসদের উচ্চকক্ষে যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছেন নাদিমুল হক। কিন্তু নাদিমুল ছাড়া বাকিরা কেন মনোনয়ন পেলেন না? তাঁদের কাজে কি দলীয় নেতৃত্ব সন্তুষ্ট ছিলেন না? নাকি তাঁদের অন্যত্র ব্যবহার করার কথা ভাবা হচ্ছে?

Advertisement

২০১৮ সালের মার্চ মাসে নজরুল মঞ্চের কর্মসূচিতে রাজ্যসভার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘোষণার আগে তিনি বলেছিলেন, ‘‘এ বার আমি দলের কর্মীদের রাজ্যসভায় পাঠাব।’’ তার পরে একে একে শুভাশিস, আবির ও শান্তনুকে মঞ্চে ডেকে নিয়েছিলেন তিনি। দলীয় সূত্রের খবর, গত ছ’বছরে রাজ্যসভায় সেই ‘কর্মী’-দের কাজে সন্তুষ্ট হতে পারেননি মমতা। তাই বিকল্প প্রার্থী সন্ধান করে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছেন তিনি। অন্তত তিন সাংসদ বাদ পড়ার পরে শাসক শিবিরের অন্দরে এমনই আলোচনা।

শুভাশিস বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা (সদর) তৃণমূল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি। এই সাংগঠনিক জেলার অধীনে রয়েছে ডায়মন্ড হারবার এবং যাদবপুর লোকসভা। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ আবার দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আশির দশক থেকে মমতার রাজনৈতিক সঙ্গী শুভাশিস। তিনি যখন ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট পাননি, তখন তৃণমূল রাজনীতির অন্দরমহলে গুঞ্জন উঠেছিল। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে শুভাশিসের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন দলের নেতাদের একাংশ। কিন্তু ২০১৮ সালে শোভন চট্টোপাধ্যায় দলের সঙ্গে দূরত্ব রচনা করার পরে উল্কার গতিতে উত্থান হয় শুভাশিসের। প্রথমে রাজ্যসভার সাংসদ ও পরে অবিভক্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জয় পায় তৃণমূল। তার পরে সাংগঠনিক জেলার বিভাজন করে দু’টি লোকসভার সাংগঠনিক দায়িত্ব পান তিনি। শুভাশিসের স্ত্রী সোমা চক্রবর্তী কলকাতা পুরসভার ১২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। এমন একজন নেতা রাজ্যসভায় পুনরায় মনোনয়ন না-পাওয়ায় একটু হলেও ‘মনোকষ্ট’ হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্বের। তবে জেলার এক বিধায়কের কথায়, ‘‘দিদি হয়তো কোনও কারণে শুভাশিসদাকে রাজ্যসভার টিকিট দিতে পারেননি। কিন্তু দাদা পুরনো লোক। তাই আমরা চাই লোকসভা ভোটে যাদবপুর থেকে তাঁকে প্রার্থী করুন দিদি।’’

Advertisement

পেশায় চিকিৎসক শান্তনু যখন রাজ্যসভার সাংসদ হন, তখন তিনি কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর ছিলেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে কান্দি থেকে প্রার্থীও হয়েছিলেন শান্তনু। রাতারাতি কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ গিয়ে কান্দিতে জোড়াফুল ফোটাতে পারেননি তিনি। কিন্তু ২০১৮ সালে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠান মমতা। তবে কী কারণে তাঁকে দল আরও এক বার রাজ্যসভায় মনোনয়ন দিল না, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে। শুভাশিসের মতোই শান্তুনুর স্ত্রী কাকলি সেনও কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর। ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তিনি। দলের একাংশ মনে করছে, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূলের ২০টিরও বেশি আসনে নতুন প্রার্থীর প্রয়োজন। তাই শান্তনুকে কোনও লোকসভা আসন থেকে প্রার্থী করতে পারেন মমতা। দলের মুখপাত্র হওয়ায় শান্তনু খবরের চ্যানেলে নিয়মিত মুখ। তাঁকে লোকসভায় মনোনয়ন দিলে তিনি মানুষের কাছে পরিচিত মুখ হিসেবেই যেতে পারবেন।

আবিরের বাবা আনন্দমোহন বিশ্বাস ছিলেন নদিয়া জেলার প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা। কংগ্রেস জমানায় তফশিলি নেতা হিসেবে রাজ্যের মন্ত্রীও হয়েছিলেন। তৃণমূল গঠনের পর নবদ্বীপ লোকসভা থেকে সাংসদ হন আনন্দমোহন। বাবার হাত ধরেই আবিরের তৃণমূলে আসা। ২০১১ সালে রানাঘাট দক্ষিণ আসন থেকে প্রথম বারের জন্য বিধায়ক হন তিনি। কিন্তু ২০১৬ সালে সিপিএমের রমা বিশ্বাসের কাছে হেরে যান। ২০১৮ সালে রাজ্যের অন্যতম ‘তফশিলি মুখ’ হিসেবে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু তৃণমূল সূত্রের খবর, গত ছ’বছরে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে তাঁর ভূমিকায় ‘সন্তুষ্ট’ ছিলেন না দলের একাংশ। এ বার রাজ্যসভা নির্বাচনর সময় আসার অনেক আগে থেকেই তৃণমূলের অন্দরে রটে গিয়েছিল যে, আবিরকে আর সংসদের উচ্চকক্ষে ফেরানো হবে না। তবে রানাঘাট লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে আবিরের নাম আলোচনায় রয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ওই কেন্দ্রে বড় ব্যবধানে জিতেছিলেন বিজেপির জগন্নাথ সরকার। তাই রানাঘাটে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে বাংলার শাসকদল।

রবিবার রাজ্যসভার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হওয়ার পর তৃণমূলের এক শীর্ষনেতা বলেন, ‘‘কারও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সামনে লোকসভা নির্বাচন। ২০২৬ সালে রয়েছে বিধানসভা ভোট। তাই ভাল কাজ করে দেখালে দিদি আবার এঁদের নাম বিবেচনা করবেন। হতাশ না হয়ে নিজেদের কাজের ত্রুটি খুঁজে তা শুধরে নিতে পারলে সুযোগ আসবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন