মাটিতে পায়ের ছাপ! বাঘের?

রবিবার সকালে ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুরের মালাবতীর জঙ্গল লাগোয়া লোকালয়ে ওই পায়ের ছাপ দেখা যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিনপুর শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:০১
Share:

বিনপুরে পাওয়া সেই পায়ের ছাপ। ছবি: বনদফতরের সৌজন্যে

নরম মাটিতে অজানা প্রাণীর পায়ের ছাপে ফের জঙ্গলমহলে বাঘের আতঙ্ক ছড়াল।

Advertisement

রবিবার সকালে ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুরের মালাবতীর জঙ্গল লাগোয়া লোকালয়ে ওই পায়ের ছাপ দেখা যায়। কাঁকো অঞ্চলের লক্ষ্মণপুর গ্রামে সর্ষে ও গমের খেতে নরম মাটিতে বেশ কয়েকটি পায়ের ছাপ দেখতে পান বাসিন্দারা। ওই পায়ের ছাপ বাঘের বলে রটে যেতেই শোরগোল পড়ে। ডালপাতা জোগাড়ে যাওয়া বনবাসীরা ভয়ে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসেন। পুলিশ ও বনকর্মীরা এলাকায় যান। পায়ের ছাপ দেখতে পৌঁছন ডিএফও (ঝাড়গ্রাম) বাসবরাজ হলেইচ্চি।

বছর দুয়েক আগে ঝাড়গ্রাম জেলারই লালগড়ে বাঘের পায়ের ছাপ দেখা গিয়েছিল। পরে সাক্ষাৎ দর্শন দিয়েছিল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। শেষে পশ্চিম মেদিনীপুরের চাঁদড়ার বাগঘোরার জঙ্গলে শিকারীদের হাতে মৃত্যু হয়েছিল সেই বাঘের। এ দিন নজরে আসা পায়ের ছাপ নিয়ে ডিএফও (ঝাড়গ্রাম)-এর বক্তব্য, ‘‘এখনই সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে প্রাণীটি বিড়াল গোত্রের। রাজ্য বন্যপ্রাণ শাখার বিশেষজ্ঞদের কাছে পায়ের ছাপের ছবি ও মাপ পাঠানো হয়েছে। প্রাণীটিকে চিহ্নিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ এ দিন সন্ধ্যায় ছাগলের টোপ দিয়ে মালাবতীর জঙ্গলে দু’টি ফাঁদ-খাঁচা পাতা হয়েছে। জঙ্গলের বিশেষ জায়গায় ট্র্যাপ-ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জঙ্গল লাগোয়া গ্রামবাসীদের সতর্ক করা হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: মেট্রোর সুড়ঙ্গে নেমে দে দৌড়!

গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে জঙ্গল লাগোয়া মাটি এখন নরম রয়েছে। সেখানে পায়ের থাবার একাধিক স্পষ্ট ছাপ পাওয়া গিয়েছে। কয়েকটি বড় পায়ের ছাপ, কয়েকটি তুলনামূলক ভাবে ছোট। পরে খুঁজে জঙ্গলের ভিতরে এবং এলাকার জলাশয়ের ধারেও এমন পায়ের ছাপ মেলে। বনকর্মীরা জানাচ্ছেন, দু’রকম পায়ের ছাপ দেখে মনে হচ্ছে, ওই প্রাণীটির সঙ্গে শাবকও রয়েছে।

আরও পড়ুন: ক্যানসার-তথ্যে সমান অনাস্থা কেন্দ্র ও রাজ্যের!

অভিজ্ঞ বনকর্মীদের সন্দেহ, ওই পায়ের ছাপ বাঘ অথবা চিতাবাঘের হতে পারে। আর প্রাণীটি যদি বাঘ হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে ওড়িশার সিমলিপাল অথবা ঝাড়খণ্ডের সারান্ডার জঙ্গল থেকে তার আসার সম্ভাবনা বেশি। প্রাক্তন বনকর্তা সমীর মজুমদারের মতে, ‘‘ঝাড়গ্রামের বনাঞ্চলের সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের দলমা ও ওড়িশার সিমলিপাল বনাঞ্চলের যোগাযোগের জঙ্গলপথ রয়েছে। ফলে নানা ধরনের বন্যপ্রাণী এখানে আসতে পারে। তবে এমন সব বন্যপ্রাণীকে বাঁচাতে হলে ঝাড়গ্রামের বনাঞ্চলকে ‘ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি’ ঘোষণা করা ভীষণই প্রয়োজন।’’

আরও পড়ুন:

আর বনকর্মীদের একাংশ বলছেন, লালগড়ের বাঘটিকে বাঁচানো যায়নি। এই অজানা প্রাণীটিও যদি বাঘ হয়, তাহলে তাকে বাঁচাতে তৎপর হতে হবে। অবিলম্বে স্থানীয় জঙ্গলে মানুষের ঢোকা বন্ধ করতে হবে।

শনিবার সকালে বাঁকুড়া জেলার রানিবাঁধ ব্লকের মটগোদা রেঞ্জের খেজুরখেন্না ও সিন্দিরিয়াম গ্রামে চাষজমিতেও এক পশুর পায়ের ছাপ দেখে বাঘের ভয় ছড়িয়েছে। ডিএফও (বাঁকুড়া দক্ষিণ) দেবাশিস মহিমাপ্রসাদ প্রধান রবিবার বলেন, “ওই ছাপ আদৌ বাঘের কি না আমরা নিশ্চিত নই। পায়ের ছাপের ছবি তুলে তা পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন