আর্থিক অনটনের কারণে অনেক সময় কৃষকরা মহাজনের দ্বারস্থ হন। মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কৃষকেরা চাষ করে মহাজনি ফাঁদে পড়েন। ফসল ওঠার পরে সেই ঋণ শোধ করতে গিয়ে কৃষকদের নাকানি-চোবানি অবস্থা হয়। অনেক চাষি সর্বস্বান্তও হন। অথচ রাজ্যের কৃষি দফতর কিসান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কৃষকদের ঋণ দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। কিসান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ নিলেই কৃষকরা সরাসরি ফসল বিমা যোজনার আওতায় চলে আসেন।
প্রশ্ন: কিসান ক্রেডিট কার্ড কী?
উত্তর: ঋণ-সহ সরকারি সুযোগ সুবিধা দিতে কৃষকদের কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে এক ধরনের কার্ড দেওয়া হয়। এই কার্ড থাকলে কৃষকরা যেমন ব্যাঙ্ক থেকে কৃষি ঋণ পান, তেমনি কৃষি ঋণ নিলে কৃষকরা নিখরচায় সরাসরি ফসল বিমা যোজনার আওতায় আসেন।
প্র: কারা কিসান ক্রেডিট পেতে পারেন?
উ: যাঁদের চাষযোগ্য জমি আছে তাঁরাই কিসান ক্রেডিট কার্ডের যোগ্য। এ ছাড়াও বর্গাদাররাও কিসান ক্রেডিট কার্ড পেতে পারেন।
প্র: কৃষকরা কার্ড কী ভাবে পাবেন?
উ: ব্যাঙ্কে বা ব্লক কৃষি দফতরে গিয়ে কিসান ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করা যায়। সাদা কাগজে দরখাস্ত লিখতে হয়।
প্র: কী কী কাগজপত্র লাগে?
উ: জমির দলিল, সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র, আধার কার্ড, ব্যাঙ্কের পাশবই প্রয়োজন।
প্র: এই কার্ডের সুবিধা কী?
উ: স্বল্প সুদে কৃষি ঋণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া যে কৃষক কিসান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ নেবেন তিনি সরাসরি বিনা পয়সায় ফসল বিমা যোজনার আওতায় আসবেন।
প্র: এই কার্ডের মাধ্যমে নেওয়া ঋণের সুদের পরিমাণ কেমন?
উ: প্রথম বছরে বাজার চলতি সুদের থেকে দুই শতাংশ কম অর্থাৎ ৭ শতাংশ হারে সুদ নেওয়া হয়। প্রথম বছর ঠিক ভাবে এবং সময় মত ঋণ শোধ করতে পারলে সুদের হার আরও তিন শতাংশে কমে চার শতাংশে দাঁড়ায়।
প্র: কার্ডের মাধ্যমে কী ভাবে ঋণ পাবেন কৃষক?
উ: জমির বিবরণ সহ কৃষক ব্যাঙ্কে গিয়ে কৃষি ঋণের জন্য আবেদন করবেন। কৃষক আবেদন করলে ব্যাঙ্ক সেই ঋণ মঞ্জুর করে।
প্র: এক জন কৃষক কত টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন?
উ: কী চাষে, কি ধরনের খরচ হয় তা কৃষি দফতর ও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে নিয়ে তৈরি কমিটি নির্ধারণ করে। সেই অনুযায়ী কৃষি ঋণের পরিমাণ ধার্য করা হয়।
প্র: সারা বছরের সব ধরনের ফসলের জন্য কি একসঙ্গে ঋণ মঞ্জুর হয়?
উ: এক বছরে কৃষক যে ক’টি ফসলের জন্য ঋণের আবেদন করেন তার পুরোটাই একসঙ্গে অনুমোদন করা হয়। ফসল অনুযায়ী সেই ঋণ কৃষককে দেওয়া হয়।
প্র: কোন কোন ব্যাঙ্ক থেকে কিসান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কৃষি ঋণ পাওয়া যায়?
উ: কৃষকের যে ব্যাঙ্কের কিসান কার্ড রয়েছে, সেই ব্যাঙ্ক থেকে কৃষককে ঋণ নিতে হবে।
প্র: অনেক সময় ব্যাঙ্ক ঋণ অনুমোদন করলেও পুরো ঋণ দিতে চায় না। এ ক্ষেত্রে কৃষকের কী করণীয়?
উ: অনুমোদিত ঋণের পুরোটাই কৃষককে দিতে হবে। যদি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তা না দিতে চান, তা হলে কৃষি দফতর, জেলা প্রশাসন বা ওই ব্যাঙ্কের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
প্র: ঋণ কত দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে?
উ: ফসল ওঠার তিন মাসের পর থেকে পরবর্তী চাষ শুরু— এই সময়ে পরিশোধ করতে হবে।
প্র: প্রথম বছর ঋণ পরিশোধ না হলে কী হতে পারে?
উ: প্রথম বছর ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে কৃষকরা দ্বিতীয় বছরের সুবিধা পাবেন না। সময় মতো ঋণ পরিশোধ করা উচিত। তা হলে পরবর্তী সময়ে ব্যাঙ্কে তিনি ভাল গ্রাহকের মর্যদা পান। এ ছাড়া পরবর্তী বছরের সুদের হার কমে যায়।
প্র: একটি কৃষক পরিবার ক’টি কিসান ক্রেডিট কার্ড পেতে পারে?
উ: পরিবার পিছু একটি করে কিসান ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়।
প্র: জেলায় মোট কত কৃষক পরিবার আছে?
উ: মুর্শিদাবাদ জেলায় ৫ লক্ষ ৯৯ হাজার ১০৭টি কৃষক পরিবার আছে।
প্র: কিসান ক্রেডিট কার্ড কতগুলো পরিবারে আছে?
উ: এখনও পর্যন্ত জেলায় ৫ লক্ষ ৯৯ হাজার ১০০ টি পরিবারের কিসান ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। বাকি পরিবারগুলিকেও এর আওতায় আনা হচ্ছে।
প্র: জেলায় নিষ্ক্রিয় কিসান ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা কত?
উ: এটা চলমান প্রকল্প। ফলে এখানে নিষ্ক্রিয় কার্ডের সংখ্যা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবুও কয়েক মাস আগে এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে প্রায় ৭০ হাজার কিসান ক্রেডিট কার্ড নিষ্ক্রিয়।
প্র: কিসান ক্রেডিট কার্ড থাকলে কি ঋণ নিতেই হবে?
উ: ঋণ নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। প্রয়োজন থাকলে কৃষক ঋণ নিতে পারেন।
প্র: কিসান ক্রেডিট কার্ড থাকা সত্ত্বেও কৃষি ঋণ না নিলে কী হবে?
উ: কিসান ক্রেডিট কার্ড থাকা সত্ত্বেও ঋণ না নিলেই সেই কার্ডটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
প্র: নিষ্ক্রিয় কার্ড কী ভাবে সক্রিয় করতে হবে?
উ: নিষ্ক্রিয় কার্ডকে সক্রিয় করতে ব্যাঙ্ক কিংবা কৃষি দফতরে আবেদন করতে হবে। কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সচেতন করা হয়। কার্ড সক্রিয় রাখতেও কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হয়।
প্র: এই কার্ড নিষ্ক্রিয় হয় কী ভাবে?
উ: ঋণ না নেওয়া, ঋণ নিয়ে সময় মতো পরিশোধ না করে দীর্ঘ দিন ধরে ফেলা রাখার কারণে কার্ড নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
প্র: কৃষক ঋণ পরিশোধ করতে চায় না কেন?
উ: কারও আর্থিক সমস্যা, কেউ বা ব্যক্তিগত-সহ নানা কারণে ঋণ পরিশোধ করতে চান না। তবে আমরা শিবির করে কৃষকদের ঋণ গ্রহণের কথা যেমন বলি, তেমনি সময় মতো সেই ঋণ পরিশোধের কথাও বলি।
প্র: অনেকের ধারণা কৃষি ঋণ পরিশোধ না করলেও তা মকুব হয়ে যায়। এটা কি আদৌও ঠিক?
উ: এই ধরনের ধারণার কোনও ভিত্তি নেই। কৃষি ঋণ পরিশোধ না করার সঙ্গে কৃষি ঋণ মকুবের কোনও সম্পর্ক থাকে না। তাই কৃষকদের কৃষি ঋণ সময়মতো পরিশোধ করা অত্যন্ত জরুরি।
সাক্ষাৎকার: সামসুদ্দিন বিশ্বাস