TMC

জয় হিন্দ বাহিনীর নেতৃত্বে ব্রাত্য, বঙ্গ জননীর মাথায় কাকলি, দলে রদবদল আনলেন মমতা

এ বার মানদহে পর্যবেক্ষক করা হল দু’জনকে। তার মধ্যে অন্যতম রাজ্যের ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। অন্য জন উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের বিধায়ক গোলাম রব্বানি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ২০:৪৫
Share:

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র

লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের ধাক্কায় কার্যত টালমাটাল তৃণমূল শিবির। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে এক দিকে যেমন সংগঠনে বড়সড় রদবদল করলেন তৃণমূল নেত্রী, তেমনই নির্দেশ দিলেন মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকার।

Advertisement

শুক্রবার কালীঘাটে দলের কোর কমিটির বৈঠকে দায়িত্ব রদবদল হল বেশ কয়েক জন নেতার। দলনেত্রী গড়ে দিলেন জয় হিন্দ বাহিনী এবং বঙ্গজননী কমিটি বাহিনী। একই সঙ্গে বৈঠকে এ দিন ফের ইভিএমে কারচুপির প্রসঙ্গ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুলেছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর।

লোকসভায় ৩৪ থেকে আসন কমে দাঁড়িয়েছে ২২-এ। বিধানসভা ভিত্তিক ফল আরও শোচনীয়। ঘাড়ের উপর নিশ্বাস ফেলছে বিজেপি। লোকসভা ভোটের পর্যালোচনা বৈঠকেই বলেছিলেন এ বার দল এবং সংগঠনের কাজে আরও বেশি মন দেবেন। এ বার কার্যত সেই পথে হেঁটেই কার্যত ঢেলে সাজালেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আরও দায়িত্ব বাড়ল শুভেন্দু অধিকারীর। সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান করা হল সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার নৈহাটিতে ‘সত্যাগ্রহ’ আন্দোলনের মঞ্চ থেকেই ঘোষণা করেছিলেন ‘জয় হিন্দ বাহিনী’ এবং ‘বঙ্গজননী বাহিনী’ গঠন করা হবে। এ দিনের বৈঠকে সেই বাহিনীর রূপরেখাও আত্মপ্রকাশ করেছে। জয় হিন্দ বাহিনীর চেয়ারম্যান করা হয়েছে দমদমের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে। অন্য দিকে বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে বঙ্গজননী বাহিনীর চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নদিয়া জেলার পর্যবেক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে লোকসভা ভোটের কিছুদিন আগেই নিয়ে এসেছিলেন বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। তার পরেও জেলার রানাঘাট কেন্দ্র হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। সেই ধাক্কা সামলাতে মমতা আগেই জেলাকে সাংগঠনিক ভাবে দু’ভাগে ভেঙে জেলা সভাপতির দায়িত্বে রদবদল করেছিলেন পর্যালোচনা বৈঠকে। এ দিন জেলার পর্যবেক্ষকও পাল্টে দিলেন মমতা। এ বার দায়িত্ব দিলেন আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় ৪ ট্রাঙ্ক সারদার নথি সিবিআইয়ের হাতে, ফের রাজীবকে জেরার প্রস্তুতি

লোকসভা ভোটের আগেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে মালদহ উত্তরের প্রার্থী হয়েছিলেন মৌসম বেনজির নুর। তিনি হেরেছেন। জেলার অন্য কেন্দ্র মালদহ দক্ষিণেও জিতেছেন কংগ্রেস প্রার্থী। আগের বার মালদহের দুই লোকসভা কেন্দ্রের একটিও যদিও তৃণমূলে দখলে ছিল না, তবু মোটের উপর জেলায় দলের ফলে সন্তুষ্ট নন তৃণমূল নেত্রী। এ বার সেই জেলায় পর্যবেক্ষক করা হল দু’জনকে। তার মধ্যে অন্যতম রাজ্যের ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। অন্য জন উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের বিধায়ক গোলাম রব্বানি।

লোকসভা ভোটের পর্যালোচনা বৈঠকেই উল্লেখযোগ্য ভাবে শুভেন্দু অধিকারীর গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্য দিকে ডানা ছাঁটা হয়েছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শুধুমাত্র যুব তৃণমূলের সভাপতি পদেই অভিষেককে কার্যত গণ্ডি বেঁধে দিয়েছিলেন মমতা। রাজনৈতিক শিবিরে জল্পনা ছিল, কোর কমিটির বৈঠকে গুরুত্ব বাড়তে পারে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের। কিন্তু এ দিন তা হয়নি। বরং উল্টে উল্লেখযোগ্য ভাবে আরও গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীর। শুভেন্দু ছিলেন উত্তর দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ এবং জঙ্গলমহলের পর্যবেক্ষক। কিন্তু এ দিন তাঁকে সেই দায়িত্বের সঙ্গে কার্যত সারা রাজ্যেই সংগঠনের কাজে হস্তক্ষেপের ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা, নিজের দায়িত্বের পাশাপাশি অন্য যে কোনও জায়গায় প্রয়োজনে দলের কাজ দেখভাল করতে পারবেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু।

আরও পডু়ন: মোদীর সরকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত, প্রতিরক্ষায় রাজনাথ, অর্থে নির্মলা, দেখে নিন কে কী মন্ত্রী হলেন

লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গের আটটি আসনের মধ্যে একটিতেও জিততে পারেননি তৃণমূলের প্রার্থীরা। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের এই শোচনীয় পরাজয়ে ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন কোর কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেছেন বলেও খবর। বৈঠকে হাজির এক নেতার সূত্রে জানা গিয়েছে, দলীয় নেতাদের চাঙ্গা করতে মমতা এ দিন বলেছেন, দল ঘুরে দাঁড়াবেই। সে জন্য সবাইকে মাটি কামড়ে পড়ে থাকার বার্তাও দিয়েছেন দলনেত্রী।

ভোটের আগে তো ছিলই, লোকসভার ফল ঘোষণার দু’দিন পর পর্যালোচনা বৈঠকে ইভিএম কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় শীর্ষ নেতৃত্ব সূত্রে খবর, এ দিনও সেই প্রসঙ্গ ফের তুলেছেন তিনি। বলেছেন, ইভিএম-এ আগে থেকেই প্রোগ্রামিং করা ছিল। এ দিনও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, যদি প্রোগ্রামিং করা না থাকত, তাহলে বিজেপি কী ভাবে আগে থেকে দাবি করল যে তারা ৩০০ আসন পাবে।

ভোটে বিপর্যয়ের পাশাপাশি ফল ঘোষণার পর থেকেই কার্যত দলবদলের হিড়িক শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই চার বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এক ঝাঁক কাউন্সিলরের দলবদলে হাতছাড়া হওয়ার মুখে চার পুরসভা। এই প্রবণতা কী করে রোখা যায়, তা নিয়েও এ দিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন