আয়ুষ্মান কার্ড বিলিতে বাধা দিল শাসক দল

দু’দিন আগে নদিয়ার জেলাসদরে দাঁড়িয়েই আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেও ডাকঘর থেকে বিমার কার্ড বিলি বন্ধ হয়নি। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর ও কালনা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩৫
Share:

চলবে না: হেড পোস্ট অফিসে ঢুকে তৃণমূলের বিক্ষোভ। শনিবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

দু’দিন আগে নদিয়ার জেলাসদরে দাঁড়িয়েই আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেও ডাকঘর থেকে বিমার কার্ড বিলি বন্ধ হয়নি।

Advertisement

শনিবার সেই কৃষ্ণনগরেই জনা পঞ্চাশেক নেতা-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে হেড পোস্ট অফিসে গিয়ে সরাসরি তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত গিয়ে হুমকি দেন, “আয়ুষ্মান ভারত কার্ড যদি বিলি করা হয়, গোটা জেলায় সমস্ত পোস্ট অফিসে কর্মীদের ভিতরে রেখে তালা দিয়ে দেব!”

এই হুমকির জেরে ওই ডাকঘরের কর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে হেড পোস্টমাস্টার প্রণতকুমার বাগ বলেন, “আমরা আপাতত কার্ড বিলি বন্ধ রাখছি। গোটা বিষয়টা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। তাঁরা যা নির্দেশ দেবেন, সেই মতো পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।” তবে জেলার অন্য ডাকঘরগুলি থেকে যথারীতি কার্ড বিলি করা হয়েছে।

Advertisement

গত বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরের প্রশাসনিক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, কেন রাজ্য সরকারের ৪০ শতাংশ টাকা থাকা সত্ত্বেও ‘আয়ুষ্মান ভারত’ কার্ডে শুধু নরেন্দ্র মোদীর নাম থাকবে? সে দিনই নবান্ন থেকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রকে জানানো হয়, রাজ্য এই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসছে। তবে এ দিন পর্যন্ত রাজ্য বা কেন্দ্র কোনও তরফেই কার্ড বিলি বন্ধ করার নির্দেশ আসেনি। শুক্রবারও ডাকঘর মারফত কার্ড বিলি হয়েছে।

এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ জনা পঞ্চাশেক নেতাকর্মীকে নিয়ে স্লোগান দিতে-দিতে কৃষ্ণনগর হেড পোস্ট অফিসে ঢুকে পড়েন জেলা তৃণমূল সভাপতি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহা এবং অন্য কিছু কাউন্সিলরও। ডাকঘরের কর্মীরা হতচকিত হয়ে যান। হকচকিয়ে সরে যান কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রাহকেরাও। তুমুল স্লোগানের মধ্যেই ডাককর্তার ঘরে ঢুকে নেতারা কার্ড বিলি বন্ধ করতে বলেন।

এ দিনই পূর্ব বর্ধমানের কালনায় নিভুজিবাজার ও কৃষ্ণদেবপুরের দু’টি ডাকঘর থেকে হাজারখানেক আয়ুষ্মান কার্ড ছিনিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া ও নর্দমায় ফেলে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। কৃষ্ণদেবপুরের পোস্টমাস্টার অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কয়েক জন ঢুকে কার্ড নিয়ে বাইরে ফেলে দেয়। কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’ কিন্তু ডাকঘর কর্তৃপক্ষ বা বিজেপি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি।

তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে কি আয়ুষ্মান ভারত কার্ড বিলিতে বাধা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?

গৌরীশঙ্কর জানান, তেমন কোনও নির্দেশ আসেনি। তবে নেত্রী যেহেতু কৃষ্ণনগর থেকে কার্ডের বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁরা এই ‘দায়িত্ব’ কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘কার্ড বিলি করুন, অসুবিধা নেই। তবে যাঁরা তা করবেন, তাঁদের আরএসএসের পোশাক পড়তে হবে। ডাকঘরগুলোয় বিজেপির দফতর বলে লিখে দিতে হবে!” বিজেপির নদিয়া উত্তর জেলা সাংগঠনিক সভাপতি মহাদেব সরকার পাল্টা বলেন, ‘‘সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে ওঁরা গরিব মানুষের স্বার্থে আঘাত হানছেন।’’

বারবার চেষ্টা করেও নদিয়া

উত্তর পোস্টাল ডিভিশনের সুপার সুব্রত দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ডাক বিভাগের এক কর্তা জানান, এ দিনই তাঁদের কাছে নির্দেশ এসেছে বিষয়টি নিয়ে কথা না

বলার। পরবর্তী পদক্ষেপ সোমবার জানানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন