মহুয়ার ডাক অগ্রাহ্য, বৈঠক বয়কটে ১২ জন

দলীয় সূত্রের খবর, গত রবিবার রাতে কৃষ্ণনগর পুরসভার ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ২৪ জনের মধ্যে ১২ জন প্রাক্তন কাউন্সিলরই আসেননি।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৯ ০২:১১
Share:

—ফাইল চিত্র।

লোকসভা ভোটের বিপর্যয়ের কারণ পর্যালোচনার জন্য কৃষ্ণনগর পুরসভা এলাকার নেতা, কর্মী ও প্রাক্তন কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন সাংসদ তথা সদ্য জেলা সভাপতির দায়িত্বপ্রাপ্ত মহুয়া মৈত্র। কিন্তু তাঁর ডাক উপেক্ষা করে সেখানে অনুপস্থিত থাকলেন অর্ধেক প্রাক্তন কাউন্সিলর ও তাঁদের অনুগামীরা। গত কয়েক দিনে বারে-বারে প্রকাশ্যে চলে আসা তৃণমূলের অন্তর্কলহ তাতে আরও এক বার প্রকট হল।

Advertisement

দলীয় সূত্রের খবর, গত রবিবার রাতে কৃষ্ণনগর পুরসভার ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ২৪ জনের মধ্যে ১২ জন প্রাক্তন কাউন্সিলরই আসেননি। এই ‘বয়কট’-এর ধাক্কায় মহুয়াদেবীর নেতৃত্ব প্রথম থেকেই কার্যত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল বলে রাজনৈতিক মহলের অনেকে মনে করছেন। ইতিমধ্যে রানাঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত শঙ্কর সিংহের বিরুদ্ধেও দলের একটা অংশে বিদ্রোহ মাথা চাড়া দিচ্ছে। অনেকটা একই লক্ষণ কৃষ্ণনগরে দেখা দেওয়ায় একাধিক তৃণমূল নেতাই প্রমাদ গুনছেন। কারণ, বিধানসভা নির্বাচনের খুব বেশি দেরি নেই। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে না নিলে এবং নেতৃত্বে আস্থা না ফিরলে সেখানে আরও বড় বিপর্যয় হতে পারে।

অনুপস্থিত থাকা কাউন্সিলরদের কয়েক জন দাবি করেছেন, প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহার সঙ্গে তাঁরা কোনও দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না বলে ঠিক করেছেন। তাই মহুয়াদেবী ডাকা সত্ত্বেও বৈঠকে তাঁরা জাননি। কৃষ্ণনগর শহরের বুকে বাসস্ট্যান্ডের পাশে পুরসভার জমি পেট্রল পাম্পের জন্য একটি সংস্থাকে লিজ দেওয়া নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে গোলমাল চলছে। প্রাক্তন কাউন্সিলরদের একটা অংশ প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহা-র বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন। তাঁরা ওই পাম্প বন্ধের জন্য খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি দিয়েছেন।

Advertisement

কিন্তু একমাত্র এই কারণেই ১২ জনের অনুপস্থিতি বলে অনেকেই মানতে পারছেন না। দলের একাধিক নেতার কথায়, কৃষ্ণনগরের বেশ কিছু স্থানীয় প্রবীণ নেতার সঙ্গে মহুয়া দেবীর সম্পর্ক মধুর নয়। বেশ কিছু কাউন্সিলরকে তাঁকে পছন্দ করছেন না। মহুয়া মৈত্র ঔদ্ধত্য দেখান ও দুর্ব্যবহার করেন বলেও তাঁরা অভিযোগ করেছেন। সেই ক্ষুব্ধ অংশই মহুয়ার ডাক অগ্রাহ্য করেছে। এ ব্যাপারে মহুয়া নিজে এবং জেলার প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বেশ কিছু দিন ধরে চলে আসা প্রাক্তন কাউন্সিলরদের গোষ্ঠীকোন্দলও ভোটের ফল প্রকাশের পর বেশি করে প্রকট হতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিকে পুরোদমে কাজে লাগাতে চেষ্টা করছে বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের খবর, ইতিমধ্যে একাধিক বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করতে শুরু করেছে। এমনকি কোনও কোনও কাউন্সিলরের সঙ্গে সরাসরি মুকুল রায়ের কথা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

এর আগে শহর সভাপতি তথা উপ পুরপ্রধান শশীগোপাল সরকার বৈঠক ডাকলেও ৬ জন কাউন্সিলর তা বয়কট করেন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অসীত সাহা প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীমবাবুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনৈতিক কাজের অভিযোগ তোলেন। এমনকি, ফেসবুকে অসীমবাবুকে সরাসরি নির্দলের হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়ে জিতে আসতে চ্যালেঞ্জ করেন।

অসীমবাবু এ ব্যাপারে বলেছেন, “আমি তো বৈঠকে বলেই দিয়েছি যে, এই ফলের দায় আমার। এখন দল যা সিদ্ধান্ত নেবে মেনে নেব।” অসীতবাবুর অভিযোগ সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, “ওঁর মতো লোকের কথার উত্তর দিতে আমার রুচিতে বাধে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন