পরপর দুই সভায় প্রকাশ্যে কোন্দল

পরপর দু’দিনে দু’টি সভা। মঙ্গলকোটে তৃণমূলের সেই দুই সভার আয়োজক দলের দু’টি পক্ষ। চব্বিশ ঘণ্টার ব্যবধানে এই দুই সভাকে কেন্দ্র করে ফের কোন্দলের ছবি সামনে এল বলে মনে করছেন তৃণমূলেরই কর্মীদের একাংশ। রবিবার মঙ্গলকোটের পদিমপুরে যে সভাটি হয় তার আয়োজক তথা জেলা পরিষদের সদস্য বিকাশ চৌধুরী তৃণমূলের অন্দরে মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর অনুগামী বলে পরিচিত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৬ ০১:৩৪
Share:

নতুনহাটে তৃণমূলের সভা। নিজস্ব চিত্র।

পরপর দু’দিনে দু’টি সভা। মঙ্গলকোটে তৃণমূলের সেই দুই সভার আয়োজক দলের দু’টি পক্ষ। চব্বিশ ঘণ্টার ব্যবধানে এই দুই সভাকে কেন্দ্র করে ফের কোন্দলের ছবি সামনে এল বলে মনে করছেন তৃণমূলেরই কর্মীদের একাংশ।

Advertisement

রবিবার মঙ্গলকোটের পদিমপুরে যে সভাটি হয় তার আয়োজক তথা জেলা পরিষদের সদস্য বিকাশ চৌধুরী তৃণমূলের অন্দরে মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর অনুগামী বলে পরিচিত। তৃণমূল সূত্রে খবর, ওই সভার পরেই দলে বিকাশবাবুদের বিরোধী বলে পরিচিত গোষ্ঠী একটি সভা ডাকে। তাঁরা দলের ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর অনুগামী। সোমবার পদিমপুর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে নুতনহাটে সেই সভায় মঙ্গলকোট তো বটেই আউশগ্রাম, ভাতার থেকেও লোক আনা হয় বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। সভায় ঘোষণা করা হয়, আগামী রবিবার মঙ্গলকোটে আসবেন দলের এই এলাকার পর্যবেক্ষক তথা বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।

তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশই জানান, এর মধ্যে দিয়ে কার্যত মঙ্গলকোটের দুই গোষ্ঠীর কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এল। তাঁদের দাবি, এ বার বিধানসভা ভোটের প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মনোমালিন্যের সূত্রপাত। ২০১১-র বিধানসভা ভোটে মঙ্গলকোটের তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন অপূর্ববাবু। সে বার তিনি ১২৬ ভোটে হারেন সিপিএমের শাজাহান চৌধুরীর কাছে। এ বার দল তাঁকে প্রার্থী করেনি। বদলে টিকিট দেওয়া হয় কাটোয়ার করজগ্রামে বাসিন্দা সিদ্দিকুল্লাকে। যা অপূর্ববাবুর অনুগামীরা ভাল ভাবে নেননি বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। গোটা ভোট-পর্বে তাই তাঁদের তেমন সক্রিয়ও হতে দেখা যায়নি। উল্টো দিকে, সিদ্দিকুল্লার নির্বাচনী এজেন্ট হন বিকাশবাবু। ভোটের মরসুমে পদিমপুরে সিদ্দিকুল্লার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা হয়। দলেরই একটি অংশ অভিযোগ তোলে, এর পিছনে অপর গোষ্ঠীর হাত রয়েছে।

Advertisement

সিদ্দিকুল্লা ভোট জিতে মন্ত্রী হওয়ার পরে দ্বন্দ্ব কমা তো দূর, আরও বেড়েছে বলে তৃণমূলের ওই অংশের দাবি। অপূর্ববাবুর গোষ্ঠীর অনেকেই মন্ত্রীর গোষ্ঠীতে নাম লিখিয়েছেন বলে খবর। অপূর্ববাবুর অনুগামীদের অনেকের অভিযোগ, এলাকায় ব্লক সভাপতির দাপট কমাতেই মন্ত্রীর অনুগামীরা সভা ডেকেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে এ দিন অপূর্ববাবুদের সভা পাল্টা ‘শক্তি প্রদর্শন’ বলে কটাক্ষ করেছেন সিদ্দিকুল্লা। তাঁর কথায়, ‘‘শক্তি প্রদর্শন হচ্ছে। সামনে খুশির ইদ। উৎসব শেষ হোক, তার পরে দেখছি।’’ বিকাশবাবুও বলেন, ‘‘পাল্টা সভা করে শক্তি প্রদর্শনের কী যুক্তি জানি না! আমাদের তো কোনও গোষ্ঠী নেই।’’

এ দিনের সভা থেকে অনুব্রতর সভা করতে আসার ঘোষণাও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে তৃণমূলের একাংশ। দলে অনুব্রতর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অপূর্ববাবু। এ বার তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণার আগে অনুব্রত বেশ কয়েকটি সভায় অপূর্ববাবুকেই সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এ দিন অবশ্য অপূর্ববাবু বলেন, ‘‘সামনে পঞ্চায়েত ভোট। দলের কর্মীদের উৎসাহ দিতেই পর্যবেক্ষক আসছেন।’’

এ দিন সভায় যাওয়ার পথে তৃণমূলের কর্মীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। গোপালপুর, মাঝিখাড়া, চাকদা-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে বোমাবাজি, ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে বিকাশবাবুর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। গোপালপুরের জোৎস্না মাঝি, মাঝিখাড়ার রহমত কাজি, কলিম শেখদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। গোপালপুরের মনিরা খাঁ-র দাবি, ‘‘সভায় গেলে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়। ভয়ে গ্রামে ঢুকতে পারছি না।’’ অপূর্ববাবুর দাবি, বোমাবাজির বিষয়টি অনুব্রতবাবুকে জানানো হয়েছে। বিকাশবাবুর যদিও বক্তব্য, ‘‘এই ঘটনায় দলের কেউ জড়িত নন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন