নিজের ভাষণে বিজেপি-কে তীব্র কটাক্ষ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। —নিজস্ব চিত্র।
পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুতে পথে নেমে কার্যত লোকসভা ভোটের প্রচারের দামামাটা বাজিয়েই দিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার ধর্মতলার সভা থেকে অভিষেক হুঙ্কার দিলেন, “লোকসভা নির্বাচনে অমিত শাহ ২২ আসন পাবে বলেছেন। আমি তার থেকে একটা দুই বাদ দিয়ে দিলাম। চ্যালেঞ্জ করছি বাংলা থেকে দুটো আসন পেয়ে দেখাক।”
পাশাপাশি বিজেপিকে ‘জোকার পার্টি’ বলেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তাঁর কথায়, “দিল্লি, রাঁচী থেকে লোক আনছে। এখানে ওদের লোক নেই। এরা আবার বলছে বাংলা দখল করবে? বিজেপি কী পার্টি? ভারতীয়জোকার পার্টি না যাত্রা পার্টি? জানি না।”
অভিষেক যখন ভাষণ দিচ্ছেন, তখন মঞ্চে হাজির তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ হাকিম থেকে শশী পাঁজা, সুজিত বসু—সকলেই? মঞ্চে ছিলেন মদন মিত্রও। প্রত্যেকেই অভিষেকের বক্তব্যের সমর্থনে সুর চড়ান। পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি, কংগ্রেসের কোনও নীতি নেই। সিপিএমের ক্ষমতা হল না ২৪ ঘণ্টার বন্ধ করতে। ৩৪ বছরে শুধু অন্যায় অন্যায় আর অন্যায়। ঠিক একই ভাবে বিজেপিও চলছে। আমরা বলছি, কাজ করুন, নয়তো কেন্দ্রের ক্ষমতা থেকে সরুন।”
রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বাম-কংগ্রেস এবং তৃণমূল, দু’পক্ষকেই কটাক্ষ করেছেন। বলেছেন, ‘‘সিপিএম, কংগ্রেস, টিএমসি যে এক হয়ে গিয়েছে, এটা যাতে প্রমাণ না হয়, তার জন্যই পর্দার আড়ালে সব হল।’’ দিলীপের দাবি, বাম-কংগ্রেস বন্ধ করেছে আর তৃণমূল বন্ধের বিরোধিতা করেছে, এমন নয়। সবাই মিলেই বন্ধ করেছে, বিরোধিতাটা লোকদেখানো। বন্ধের সমর্থকরা স্কুল-কলেজে তালা লাগিয়েছেন, কিন্তু পুলিশ কিছু করেনি বলে দিলীপের অভিযোগ। রাস্তায় বেশি বাস নামানো হবে বলেও ইচ্ছাকৃত কম বাস নামানো হয়েছিল, অভিযোগ রাজ্য বিজেপির সভাপতির।
যে ইস্যুতে এই বন্ধ ডাকা হয়েছিল, সেই ইস্যুতে বন্ধ করার অধিকার কংগ্রেসের নেই বলে দিলীপের মত। ইউপিএ জমানায় বছরে গড়ে ৩টাকা ৮০ পয়সা হারে পেট্রলের দাম বেড়েছিল বলে দিলীপ দাবি করেন। মোদী জমানায় বছরে গড়ে ২টাকা হারে দাম বেড়েছে বলেও তাঁর দাবি।
দেখুন ভিডিয়ো
তৃণমূলের সভার শুরুতেই অবশ্য মূল সুরটা বেঁধে দিয়েছিলেন অভিষেক। তিনি বলেন, “তৃণমূল করতে গেলে আমাদের যুক্তি সহকারে কথা বলতে হয়। এফডিআই, নোটবন্দি, জিএসটি থেকে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, সব কিছুতেই তৃণমূল কংগ্রেস আগে রাস্তায় নেমেছে। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। সব সময় তৈরি।”
আরও পড়ুন
বীরভূমে তৃণমূলের পার্টি অফিসে বিস্ফোরণ, অনুব্রত বললেন, বিজেপি লোক ঢুকিয়ে করিয়েছে
এদিন মৌলালি থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মিছিল করেন তৃণমূল সমর্থকেরা। সভায় উপস্থিত সমর্থকদের বেশিরভাগই ছিলেন কমবয়সি। তাঁদের উদ্দেশে অভিষেক বলেন, “আপনাদের তৈরি থাকতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে মানুষ কর্মনাশা বন্ধকে ব্যর্থ করেছে। দিল্লির সরকার থেকে বিজেপিকেও উৎখাত করতে হবে। যখনই ডাক পড়বে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। যে যেমন ভাষা বোঝে, তাকে তেমন ভাষা বুঝিয়ে দিতে হবে। আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত। চুপ করে থাকতে পারব না। তৃণমূল গণআন্দোলের পথ বেছে নেবে। যোগ্য জবাব দেব।’’
আরও পড়ুন
ভাঙচুর, অবরোধ, তুলনায় কম গাড়ি, বিক্ষিপ্ত গোলমালেও মোটের উপর স্বাভাবিক জনজীবন
বাংলায় ভেদাভেদের রাজনীতি করছে বলে অভিষেকের কটাক্ষ। তাঁর কথায়, “এখানে শুধু ভেদাভেদ করতে চাইছে বিজেপি। কেউ ডিম কিনতে গিয়ে কি জিজ্ঞেস করেন, আপনি হিন্দু না মুসলমান? আপনার বাড়িতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে, অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে যাওয়ার সময় চালককে কি জিজ্ঞেস করেন, আপনি হিন্দু না মুসলমান? করেন না।’’
(শহরের প্রতি মুহূর্তের সেরা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।)