দলবদলে দখল দক্ষিণ দিনাজপুর, জেলা পরিষদ, বিধায়ক পেল বিজেপি

এই ভাঙন নিয়ে বলতে গিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রকারান্তরে মেনে নেন, তাঁদের দলের হয়েও লোক ভাঙানোটা ভুল ছিল। প্রশ্ন ওঠে, তা হলে তখন কেন বুঝতে পারেনি তৃণমূল? পার্থবাবুর জবাব, ‘‘সব কি এক দিনে বোঝা যায়?’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৯ ০১:৪৭
Share:

সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে গেরুয়া ঝড় দেখা গিয়েছে। সেই ধারা বজায় রেখেই বিজেপি প্রথম জেলা পরিষদ দখল করল আত্রেয়ী নদীর পাড়ে। সোমবার দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে গিয়ে কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের হাত থেকে গেরুয়া উত্তরীয় পরলেন তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র। সেখানে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়ও। সেই মঞ্চে বিজেপিতে যোগ দিলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভাধিপতি লিপিকা রায় এবং আরও ৯ জেলা পরিষদ সদস্য। ফলে ১৮ সদস্যের বোর্ডে ১০ জন নিয়ে জেলা পরিষদ দখলের দাবি তুলল বিজেপি। দলের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এক বার গঠনের পরে আড়াই বছর জেলা পরিষদ ভাঙা যায় না। ফলে এখন চেষ্টা করলেও কেউ কিছু করতে পারবে না।

Advertisement

এই ভাঙন নিয়ে বলতে গিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রকারান্তরে মেনে নেন, তাঁদের দলের হয়েও লোক ভাঙানোটা ভুল ছিল। প্রশ্ন ওঠে, তা হলে তখন কেন বুঝতে পারেনি তৃণমূল? পার্থবাবুর জবাব, ‘‘সব কি এক দিনে বোঝা যায়?’’

জেলা পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য নিয়ে বিপ্লব যে বিজেপিতে যাচ্ছেন, তা কয়েক দিন আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এক সময়ের কংগ্রেস নেতা বিপ্লব তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিলেন। গত কয়েক বছরে একাধিক বার তিনি দলের জেলা সভাপতি হয়েছেন, আবার অপসারিতও হয়েছেন। তবে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বিপ্লবের শেষ টক্করটা লাগে এ বারে লোকসভা ভোটে বালুরঘাট কেন্দ্রে অর্পিতা ঘোষকে প্রার্থী করার পরে। শীর্ষ নেতৃত্বকে তিনি জানান, অর্পিতাকে জিতিয়ে আনা কঠিন। তাঁর অনুগামীরা বলতে শুরু করেন, বিপ্লবকেই প্রার্থী করা হোক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন তাঁকে স্পষ্ট করে দেন, অর্পিতাকে বদলানো হবে না। ভোটে হারের পরে বিপ্লবকে দলীয় সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে অর্পিতাকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখনই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন বিপ্লব, দাবি অনুগামীদের।

Advertisement

রাজ্যে প্রথম জেলা পরিষদও তাদের দখল এসে গেল বলে দাবি করেছে বিজেপি। ওই মঞ্চ থেকেই অর্পিতাকে দোষী ঠাউরে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদ আমাদেরই জেতার কথা ছিল। সে দিন পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অর্পিতাই আমাদের কর্মীদের মেরে তুলে দেন। আমাদের হারিয়ে দেন।’’ এই অভিযোগ মানতে চাননি অর্পিতা। তাঁর শিবির উল্টে বিপ্লবের দিকে আঙুল তুলে জানিয়েছে, যাঁর ‘নির্দেশে’ সে দিন পুলিশ গিয়েছিল, তাঁকেই তো আজ সাদরে বরণ করলেন দিলীপবাবুরা।

জেলা পরিষদের দখল নিয়ে চাপান-উতোর শুরু হয় বিপ্লব আর অর্পিতার মধ্যে। অর্পিতা দাবি করেন, ‘‘যাঁরা গিয়েছেন, তাঁদের কয়েক জন আমাদের দিকে ফিরে আসবেন বলে জানিয়েছেন।’’ একই সঙ্গে তাঁর বার্তা, ‘‘উনি তো মমতার ছবি নিয়ে তৃণমূলের টিকিটে জিতেছিলেন। এ বারে পদত্যাগ করে বিজেপির টিকিটে জিতে আসুন।’’ এর জবাবে বিপ্লব বলেন, ‘‘সব সময় মমতার ছবি নিয়ে ভোট হয় না। তা হলে স্থানীয় সংগঠন থাকার দরকার হত না।’’ তিনি এর সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘মানুষের আস্থায় বরাবর ভোটে লড়েছি। মমতার ছবি দেখিয়ে কখনও ভোট করতে হয়নি।’’

এর পরেও কয়েকটি প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। প্রথমত, এত দিন ১২ জন নিয়ে যোগ দেওয়া হবে বলে দাবি করেও শেষে মঞ্চে ১০ জন কেন? বিজেপির দাবি, আরও ৪ জন সঙ্গে আছেন। যদিও তৃণমূলের দাবি, আরও কেউ দল ভাঙবে না। যাঁরা গিয়েছেন, তাঁরাও কেউ কেউ ফিরে আসবেন। দ্বিতীয়ত, গঙ্গারামপুর পুরসভা চেয়ারম্যান, বিপ্লবের ভাই প্রশান্ত এ দিন বিজেপিতে যোগ দিলেন না কেন? তৃণমূলের দাবি, ৯ কাউন্সিলরকে আটকে দিতে পেরেছে তারা। প্রশান্ত কিছু বলতে চাননি। বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘গঙ্গারামপুরে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে সেখানেই বিজেপিতে যোগ দিতে চান প্রশান্ত। আপত্তি করেননি দিলীপ এবং কৈলাসও।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন