ফাঁসিদেওয়ার ঘোষপুকুরে অনুষ্ঠানে মন্ত্রী গৌতম দেব।—নিজস্ব চিত্র।
শহর হাতছাড়া হয়েছে। পুরভোটে হারের কারণ নিয়ে দলের অন্দরে এখনও নানা বির্তক চলছে। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী দু’মাসের মধ্যে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোট হবে। শিলিগুড়ি পুরভোটের ফলের পরে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোট নিয়েও উজ্জীবিত বাম শিবির। এই অবস্থায়, গ্রামে যাতেশহরের পুনরাবৃত্তি না হয় সে জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ফাঁসিদাওয়া ব্লকের নানা প্রান্তে তাঁর চরকি-পাক খাওয়া কর্মসূচি যেন সে কথাই বলল। মন্ত্রী এদিন মোট ৫টি সরকারি অনুষ্ঠান গিয়েছিলেন তিনি। সরকারি সভা থেকেই মন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী মাস থেকেই বাসিন্দাদের কথা শুনতে গ্রামে ‘পদযাত্রা’র কর্মসূচি নেবেন তিনি, রাতও কাটাবেন গ্রামে।
গত সোমবার শিলিগুড়ি পুরবোর্ড গঠনের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত হাসমিচক লাগোয়া পূর্ত দফতরের বাংলোতেই কেটেছে মন্ত্রীর। পাঁচশো মিটার দূরে শিলিগুড়ি পুরসভায় মেয়র পদের ভোটাভুটির খবর রেখেছেন সেখান থেকেই। বাংলোয় বসেই তৃণমূলকে হারিয়ে মেয়র পদে অশোক ভট্টাচার্যের জয়ের খবর শুনতে হয়েছে। তৃণমলের জেলা সভাপতি হিসেবে মহকুমা পরিষদ ভোট পরিচালনার দায়িত্বও গৌতমবাবুর। তাই আপাতত তাঁর লক্ষ্য গ্রামের ভোট।
এ দিন সকালে প্রথমে ঘোষপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের পাশের মাঠে এসএসকে স্কুলের মাঠের অনুষ্ঠান থেকে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের চেক বিলি করেছেন মন্ত্রী। এর সঙ্গেই কৃষি এবং কৃষি বিপণন দফতরের কয়েকটি প্রকল্পে পাম্পসেট, স্প্রে-মেশিন, ভ্যানরিকশা, পাইপ সহ বিভিন্ন কৃষি সামগ্রী বিলি করা হয়। এই অনুষ্ঠান সেরে ঘোষপুকুরের বারোপুটিয়ায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তার উদ্বোধন করেছেন মন্ত্রী। তাঁর নিজের দফতরের থেকেই রাস্তাটি তৈরি হয়েছে। ঘোষপুকুরের অনুষ্ঠান সেরে মন্ত্রী গিয়েছিলেন বিধাননগরে। সেখানে লঘুগছ হাই মাদ্রাসার প্রস্তাবিত দো’তলা হস্টেল ভবনের শিলান্যাস করেন মন্ত্রী। অনুষ্ঠানের শেষে স্কুলের পড়ুয়া এবং বাসিন্দারা মাদ্রাসার সীমানা পাঁচিল তৈরির দাবি জানান। মাদ্রাসার মাঠ থেকেই পাঁচিল তৈরির প্রকল্প তৈরি করে জমা দেওয়া নির্দেশ দিয়েছেন ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের।
একই ভাবে চটহাটে রাস্তা উদ্বোধনে গিয়ে বাসিন্দাদের দাবি মেনে শিলিগুড়ি-চটহাট রুটে বেশি সংখ্যায় সরকারি বাস চালানো হবে বলেকথা দিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি নিজেই এনবিএসটিসির চেয়ারম্যান। তাই সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে সঙ্গে ফোনে ধরে রুটে নতুন বাস চালানোর নির্দেশ দিয়েছে।
মন্ত্রীর লক্ষ্য যে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ তাও লুকোনোর চেষ্টা করেননি। ফাঁসিদেওয়ার নয়াহাটে গৌতমবাবু বলেন, ‘‘ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ এলাকায় উন্নয়ন চলছে। আগামী দিনে মহকুমা পরিষদে ভোট হবে। আমরা মহকুমা পরিষদকে মডেল হিসেবে গড়তে চাই। মানুষের কাছে আরও বেশি করে পৌঁছতে চাই।’’ মানুষের কাছে পৌঁছতে আগামী মাস থেকে মহকুমা পরিষদের ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে পদযাত্রা করবেন বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মন্ত্রীর গাড়ির চাকা ১৪০ কিলোমিটার ঘুরেছে। যার বেশিটাই গ্রামের রাস্তায়। মন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, পঞ্চায়েত ভোটের আগে সেই গাড়ির চাকা গ্রামের পথে আরও গড়াতে চলেছে।