ব্যাগে বন্দুক, বিমানবন্দরে পাকড়াও তৃণমূল নেতা

এক্স-রে মেশিনের পর্দায় হঠাৎ চোখ আটকে গেল বিমানবন্দরের রক্ষীদের। ব্যাগটার জামাকাপড়ের মাঝখানে একটা রিভলভারের আদল! মনে হচ্ছে গোটা তিনেক গুলিও রয়েছে। ফের এক্স-রে হল বার দুয়েক। কোনও সন্দেহ নেই। ওটা রিভলভারই!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:১৫
Share:

পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল ব্লক সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।

এক্স-রে মেশিনের পর্দায় হঠাৎ চোখ আটকে গেল বিমানবন্দরের রক্ষীদের। ব্যাগটার জামাকাপড়ের মাঝখানে একটা রিভলভারের আদল! মনে হচ্ছে গোটা তিনেক গুলিও রয়েছে। ফের এক্স-রে হল বার দুয়েক। কোনও সন্দেহ নেই। ওটা রিভলভারই!

Advertisement

ব্যাগের মালিক আকাশ থেকে পড়লেন। বললেন, ‘‘আমি এর বিষয়ে কিছু জানি না!’’ কিন্তু আপনার ব্যাগেই তো রয়েছে বন্দুক আর গুলি! এ বার উত্তর, ‘‘আমি অত্যন্ত ভাল লোক।’’ নিজের পরিচয়টাও এ বার দিলেন। তিনি, নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী— বর্ধমান জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ। পাণ্ডবেশ্বরে তৃণমূলের ব্লক সভাপতিও বটে। নিয়মমাফিক আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেখতে চাওয়া হলে তা দেখাতে পারেননি নরেন্দ্রবাবু। বিমানবন্দরের এক অফিসারের কথায়, ‘‘ওটা দেশি রিভলভার। তার কোনও লাইসেন্সই হয় না!’’

রবিবার দুপুর সওয়া ৩টেয় বর্ধমান থেকে পুলিশের পাইলট কার সসম্মানে ও সস্ত্রীক তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল কলকাতা বিমানবন্দরে। রাতে সেই পুলিশের অতিথি হয়েছেন তৃণমূল কর্মাধ্যক্ষ। পুলিশ সূত্রের দাবি, নরেন্দ্রবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, বিমানে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যাওয়া যে একেবারেই নিষিদ্ধ, তা নয়। কিন্তু সেটিকে ‘চেক-ইন’ লাগেজে (যে সমস্ত মালপত্র বিমানের পেটে কার্গো হোল্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়) রাখা বাধ্যতামূলক। হাতব্যাগে সেটি নেওয়া যাবে না। আর বন্দুকের লাইসেন্স সঙ্গে থাকতেই হবে। আগে এমন ঘটনাও ঘটেছে, যেখানে লাইসেন্স আনতে ভুলে যাওয়া যাত্রীকে সেটি আবার বাড়ি থেকে আনাতে হয়েছে। কিংবা ফ্যাক্সে আনাতে হয়েছে প্রতিলিপি। নরেন্দ্রবাবুর ব্যাগের দেশি রিভলভারের ক্ষেত্রে সে সবের বালাই ছিল না। তাই ব্যাগ খোলার পর তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিল না বলে সিআইএসএফের দাবি।

বিমানবন্দর সূত্রের খবর, স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে চেন্নাই যাচ্ছিলেন নরেন্দ্রবাবু। ঘনিষ্ঠদের দাবি, মাঝে মাঝেই চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাজে তাঁরা ওই শহরে যান। এ দিন বিকেল ৪টে ২৫ মিনিটে স্পাইসজেটের উড়ান (এসজি ৬২৪) ধরার কথা ছিল তাঁদের। রিভলভার-কাণ্ডের জেরে নরেন্দ্রবাবুর বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় অস্ত্র আইনের ২৫ নম্বর ধারায় একটি মামলা হয়েছে। যদিও পুলিশের মুখে কুলুপ। বিমানবন্দর থানার দায়িত্বে থাকা বিধাননগর কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার জয় টুডু বলেন, ‘‘আমার কিছু জানা নেই।’’

তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই দলে রয়েছেন নরেন্দ্রবাবু। পাণ্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি রয়েছেন বছর দশেক। তার আগে পাণ্ডবেশ্বরের ছোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন। ২০১৩-য় বর্ধমান জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ হন। দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মাঝেমধ্যেই নাম জড়িয়েছে নরেন্দ্রবাবুর। ২০১১ সালে দলের শ্রমিক সংগঠনের একটি গোষ্ঠী তাঁর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনেছিল। ২০১২ সালে সিপিআই(এমএল)-এর সঙ্গে তৃণমূলের গণ্ডগোল চলার সময়ে গুলি ছোড়ার অভিযোগও উঠেছিল নরেন্দ্রবাবুর বিরুদ্ধে। এ দিন তৃণমূলের দুর্গাপুর জেলা সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খবরটা শুনেছি। কিন্তু নিশ্চিত নই। খোঁজখবর নিচ্ছি।’’

তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে উনি ব্যক্তিগত ভাবে যে কাজ করেছেন বলে শুনেছি, তা অনুচিত। আইন ভাঙলে যা শাস্তি হওয়ার, তা-ই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন