জয়নগর থেকে দিনহাটার দূরত্ব প্রায় আটশো কিলোমিটার। রবিবার রাতে একটি ঘটনায় যেন সেই দূরত্ব মুছে গেল। রবিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ জয়নগরের কায়দায় আক্রমণ চালানো হয় উদয়ন গুহ ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা ডিম্পল রায়ের গাড়িতে। এই হামলায় জখম হয়েছেন ডিম্পল ও তাঁর গাড়ির চালক আতাবুল হোসেন। নাজিরহাট-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য এবং ওই অঞ্চলে তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি ডিম্পলকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কোচবিহারের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার শালমারা বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন ডিম্পল। অভিযোগ, তাঁর বাড়ি থেকে পাঁচশো মিটার দূরে মাষানপাটের অন্ধকার এলাকায় কলাগাছ ফেলে তাঁর পথ আটকানো হয়। নেমে সেই গাছ সরাতে গেলে দুষ্কৃতীরা গাড়িতে হামলা চালায়। ডিম্পল ও তাঁর সঙ্গীদের অভিযোগ, গুলি চালানো হয়, বোমাও মারা হয় গাড়ি লক্ষ করে। ডিম্পলকে ধারালো অস্ত্রের কোপ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে হাসপাতাল সূত্রে অবশ্য বলা হয়েছে, দেহে গুলি লাগেনি। তবে স্প্লিন্টারের আঘাত রয়েছে। তাঁর পরিবারের দাবি, গুলি-বোমার শব্দে আশপাশের লোক ছুটে এলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।
ডিম্পলের স্ত্রী প্রতিমা দেবীর অভিযোগ, হামলার পিছনে তৃণমূলের অন্য গোষ্ঠী। অভিযোগের তালিকায় উঠে এসেছে তৃণমূলের নাজিরহাটের অঞ্চল সভাপতি তরণী বর্মণ-সহ তিন পঞ্চায়েত সদস্যের নাম। তৃণমূল সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে গোষ্ঠী লড়াইয়ে ঘরছাড়া তরণী। ওই অঞ্চলটি এখন পুরোপুরি ডিম্পলদের হাতে। কয়েক মাসের মধ্যে ডিম্পলের সঙ্গে তৃণমূলের আরও কয়েক জন পঞ্চায়েত সদস্যের বিরোধ চরমে ওঠে বলেও দল সূত্রে খবর। ওই পঞ্চায়েত সদস্যরা তৃণমূলের দিনহাটা-২ নম্বর ব্লকের সভাপতি মির হুমায়ন কবীরের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। তরণী-সহ সেই পঞ্চায়েত সদস্যদের ৩ জনের নাম উঠে এসেছে অভিযোগের তালিকায়।
হুমায়ুন বলেন, “ওই এলাকায় দ্বন্দ্ব ছিল, তা সবাই জানে। কিন্তু সম্প্রতি এমন কিছু সেখানে ঘটেনি যে, দলের মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটতে পারে। এর পিছনে বিজেপি থাকতে পারে।’’ তরণী বলেন, “গণ্ডগোল থেকে নিজের সম্মান বাঁচাতে আমি বহু আগেই এলাকা ছেড়ে দিয়েছি।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি মালতী রাভা বলেন, “তৃণমূল নিজেদের দ্বন্দ্ব ঢাকতে বিজেপির কথা বলে। ওই ঘটনা যে তৃণমূলের লড়াই তা সবাই জানে।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বক্তব্য, “ওই ঘটনায় কারা জড়িত তা পুলিশ দেখছে।’’