Jyotipriya Mallick

‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে গিয়ে ক্ষোভের মুখে জ্যোতিপ্রিয়! করজোড়ে চাইলেন ক্ষমা

বৃহস্পতিবার নদিয়ার চাকদহে গ্রামবাসীর বিক্ষোভের মুখে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। চাকদহে ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাকদহ ও পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:২৮
Share:

মন্ত্রীকে ঘেরাও। নিজস্ব চিত্র

লোকসভা ভোটের পরে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে গিয়ে পঞ্চায়েত স্তরে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের আগুন টের পেয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এ বারে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতেও জনতার ক্ষোভের আঁচ পাচ্ছেন শাসক দলের নেতারা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার নদিয়ার চাকদহে গ্রামবাসীর বিক্ষোভের মুখে হাতজোড় করে ক্ষমা চান রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। আবার পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় গিয়ে দলেরই ক্ষুব্ধ নেতার সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। পরে জ্যোতিপ্রিয় বলেন, “আমার দলের কোনও কর্মীর ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে আমি কুণ্ঠিত বোধ করি না।” কুণালও বলেন, ‘‘মানুষের অভাব-অভিযোগ শোনার জন্যই তো এই কর্মসূচি।’’

চাকদহে কী ঘটেছিল এ দিন? দল সূত্রে খবর, নানা এলাকা ঘুরে সহিসপুরে আসেন জ্যোতিপ্রিয়। সেখানেও বেশ কিছু মানুষ আগে থেকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। মন্ত্রীর আসার কথা ঘোষণা করতে করতে উপপ্রধানের গাড়ি আসতেই তা দাঁড় করিয়ে তাঁরা দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলতে যান। তাঁদের অন্যতম লক্ষ্মী মণ্ডল, সাবিত্রী বিশ্বাসদের অভিযোগ, “নানা কাজে পঞ্চায়েতে গেলে ওই উপপ্রধান সকলের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এ দিন মন্ত্রীর কাছে সমস্যার কথা জানানোর কথা বলতেই তিনি উল্টে আমাদের গালিগালাজ করে গাড়ি নিয়ে চলে যান।” ঘেঁটুগাছির উপপ্রধান পরেশ ঘোষ অবশ্য দাবি করেন, “ওরা আমার গাড়ি আটকায়। আমি ওদের কিন্তু কোনও খারাপ কথা বলিনি।”

Advertisement

সামান্য পরেই জ্যোতিপ্রিয় এসে উত্তেজিত গ্রামবাসীদের দেখে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। নামামাত্রই তাঁকে ঘেরাও করে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন গ্রামবাসীরা। মন্ত্রী তাঁদের শান্ত হতে বলেন। সকলের কথা মন দিয়ে শুনে সুরাহার আশ্বাস দেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রায় আধ ঘণ্টা লেগে যায়। এর পর গ্রামবাসী রাস্তা ছেড়ে দিলে গাড়িতে উঠে মন্ত্রী রওনা দেন। জনসভা করতে এসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সমবেত জনতার কাছে জানতে চেয়েছিলেন এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানদের কাছে কাজ পান কি না, নেতারা কথা শোনেন কি না। তখন জবাবে জোর গলায় ‘না’ বলেছিল হাজির জনতা। স্থানীয়দের দাবি, যাঁদের এ দিন বিক্ষোভে শামিল হতে দেখা গিয়েছে, তাঁরাও তৃণমূল সমর্থক বলেই পরিচিত। চাকদহের বিজেপি বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষের কটাক্ষ, “গত ১১ বছরে তৃণমূলের নেতা-প্রধানদের যা দম্ভ-ঔদ্ধত্য হয়েছে, তাতে ওদের মন্ত্রীদের ক্ষমা চাওয়ারই কথা।” জ্যোতিপ্রিয় বলেন, “উপপ্রধানের সঙ্গে আমি কথা বলব, তাঁকে সবার কাছে যেতে বলব।”

দলীয় কর্মসূচিতে বুধবার থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় ছিলেন কুণাল ঘোষ। এ দিন দলীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের সময়ে হাজির হন তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের প্রাক্তন নেতা শেখ মুজিবর রহমান ও তাঁর অনুগামীরা। দু’টি রাস্তা কেন ঢালাই হয়নি, তা নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। কুণাল সামনের রাস্তাটি পরিদর্শনের জন্য বেরোলে কার্যালয়ের সামনেই মুজিবরের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন দলের পাঁশকুড়ার ব্লক সভাপতি সুজিত রায় ও অন্যেরা। রাস্তা দেখে ফিরেই তড়িঘড়ি কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন কুণাল। মুজিবর বলেন, “রাজ্য নেতৃত্বকে সামনে পেয়ে ক্ষোভের কথা জানিয়েছি।’’ পরে কুণাল বলেন, ‘‘কোনও বিক্ষোভ নয়। মানুষের কী প্রয়োজন, তা উনি জানাতে এসেছিলেন। যে রাস্তা দু’টি ঢালাইয়ের দাবি উঠেছে, সেগুলি সেচ দফতরের হাতে রয়েছে। কথা বলে জানাব।’’ তাঁর কথায়, ‘‘মানুষের অভাব-অভিযোগ শোনার জন্যই তো দলের এই কর্মসূচি। তাতে বিক্ষোভ, ক্ষমা ইত্যাদি যাঁরা দেখছেন, তাঁদের বলি, এ নিয়ে তাদের পুলকিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।’’ তবে পাঁশকুড়ার ব্লক সভাপতি সুজিতের আক্ষেপ, ‘‘মুজিবর রহমান নিজেকে স্বঘোষিত নেতা মনে করেন। কুণালদার একটি সাংবাদিক সম্মেলন করার কথা ছিল। ঘটনাচক্রে, গত ডিসেম্বরে নদিয়াতেই ওই ভদ্রলোকের জন্য সেটা আমরা করতে পারিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন