খুন হওয়া নান্টুর মূর্তি বসল রবীন্দ্রনাথ, নজরুলদের বৃত্তেই!

পরনে ফেডেড নীল জিনস্‌ আর ফুল হাতা সাদা শার্ট। পায়ে ভারী বুট। পকেট থেকে উঁকি দিচ্ছে কলম আর চশমার ডাঁটি। চেনা চেহারাতেই এলাকায় ফিরলেন নান্টু প্রধান। মৃত্যুর বেশ কয়েক মাস পরে, মূর্তি হয়ে।

Advertisement

গোপাল পাত্র

ভগবানপুর শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:০৮
Share:

সেই বিতর্কিত মূর্তি। নিজস্ব চিত্র

পরনে ফেডেড নীল জিনস্‌ আর ফুল হাতা সাদা শার্ট। পায়ে ভারী বুট। পকেট থেকে উঁকি দিচ্ছে কলম আর চশমার ডাঁটি। চেনা চেহারাতেই এলাকায় ফিরলেন নান্টু প্রধান। মৃত্যুর বেশ কয়েক মাস পরে, মূর্তি হয়ে।

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর ব্লকের মহম্মদপুর ১ পঞ্চায়েতে তৃণমূলের উপপ্রধান ছিলেন নান্টু। সাধারণ কুয়োর মিস্ত্রি থেকে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এলাকার দাপুটে নেতা। মারধর করে জমি কেড়ে নেওয়া থেকে পুলিশের উপর হামলা— তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের ইয়ত্তা ছিল না। গিয়েছিলেন শ্রীঘরে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নান্টু খুনের পরেও অভিযোগ উঠেছিল, জোর করে চিংড়ি চাষের ভেড়ি বানাতে গিয়েই জনরোষে মরতে হয়েছে তাঁকে।

সেই নান্টুর মূর্তি বসানোর তোড়জোড়ের সময়ই শুরু হয়েছিল বিতর্ক। নান্টুর হাতে গড়া বিএড কলেজ চত্বরে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিদ্যাসাগর, স্বামী বিবেকানন্দের পাশে নান্টুর মূর্তি বসানোর সিদ্ধান্ত জেনে কটাক্ষ করেন বিরোধীরা। কতকটা চুপিসাড়েই গত ২৮ সেপ্টেম্বর নান্টুর মূর্তির অবরণ উন্মোচন হয়েছে। উদ্বোধনে তৃণমূলের বড় নেতারাও কেউ ছিলেন না।

Advertisement

আরও পড়ুন: সরকারি চাল-টাকা মিলছে না, ক্ষুব্ধ সিঙ্গুরের চাষিরা

নান্টুর বাবা চাঁদহরি প্রধান তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। তিনি মানছেন, ‘‘মূর্তি বসানোর অনুষ্ঠানে জাঁকজমকের কথা থাকলেও পরে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল হয়। তবে চুপিসাড়ে মূর্তি উদ্বোধনের ব্যাপার নেই।’’ চাঁদহরি জানান, স্থানীয় বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতিকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। জরুরি বৈঠক থাকায় তিনি আসতে পারেননি। তৃণমূলের ভগবানপুর -১ ব্লক সভাপতি মদনমোহন পাত্র মূর্তির উদ্বোধনে গিয়েছিলেন শেষবেলায়। মদনমোহন বলেন, ‘‘নান্টুকে নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তাঁর তৈরি কলেজ তো শিক্ষার প্রসারেই কাজ করছে।’’ এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই বলেও স্পষ্ট করেছেন তৃণমূল ব্লক সভাপতি।

বিরোধীরা অবশ্য বিঁধতে ছাড়ছে না। বিজেপির ব্লক সভাপতি দেবব্রত করের কটাক্ষ, ‘‘টাকা থাকলে এই রকম হাজারটা মূর্তি বসানো যায়। কিন্তু তাতে মানুষের শ্রদ্ধা পাওয়া যায় না। নান্টুর যে দুষ্কর্ম করেছে, তাতে তার মূর্তি বসালেও মানুষ ওকে ভুলতেই চাইবে।’’ এলাকায় ঘুরেও দেখা গেল, অনেকেই দ্রুত ভুলতে চাইছেন নান্টু-পর্ব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘নান্টুর অত্যাচার মাত্রা ছাড়িয়েছিল। সাধারণ মানুষের চোখে সে দুষ্কৃতী। তাই মূর্তি বসিয়ে তাকে মনীষী সাজানো সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন