—ফাইল চিত্র।
এক কালে যাঁরা রাজ্যে ‘পরিবর্তন’ ঘটিয়ে দলকে ক্ষমতায় আনতে পরিশ্রম করেছিলেন, সেই পুরনো নেতাদের গুরুত্ব কমছে এবং নব্য ও যুব নেতারা ছড়ি ঘোরাচ্ছেন, এই নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল তৃণমূলের অন্দরে। লোকসভা ভোটে তৃণমূল ধাক্কা খাওয়ার পরেই সেই ক্ষোভকে আরও উস্কে দিতে ‘নবজাগরণ’ নামে মঞ্চ গড়ে উঠল বিধাননগরে। নামে ‘অরাজনৈতিক’ হলেও উদ্যোক্তাদের লক্ষ্য, নানা ভাবে বঞ্চিত, উপেক্ষিত ও ‘চক্রান্তের শিকার’ পুরনো পরিবর্তকনকামীদের একজোট করা। এমন মঞ্চ গঠনের বৈঠক রবিবার বসেছিল বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের ‘আতিথ্যে’ এবং তাঁরই ওয়ার্ড অফিসে।
তৃণমূলে যে সব নেতার ভূমিকা কিছু দিন ধরেই আতস কাচের তলায় আছে, বিধাননগরের সব্যসাচী তার মধ্যে অন্যতম। ইতিপূর্বে তাঁর বাড়িতে মুকুল রায়ের লুচি-আলুর দম খেতে যাওয়া নিয়ে জল্পনাও হয়েছে বিস্তর। ভোটের সময়ে সমস্যা সামাল দিতে সব্যসাচীদের সঙ্গে কাজ চালানোর মতো রসায়ন তৈরি করে নিতে সচেষ্ট হয়েছিলেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু লোকসভা ভোটের ফল দেখে এই ধরনের নেতারা যে ফের তৎপর হবেন, তা-ও তৃণমূল নেতৃত্বের অজানা ছিল না। বাস্তবে ঘটছে তা-ই।
দু’দিন আগেই প্রকাশ্যে সরাসরি মুখ খুলে দল থেকে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) হয়েছেন বীজপুরের বিধায়ক, মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায়। তবু কালীঘাটে শনিবার বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই দলের ব্যাপারে বেশি মন দেওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়ার পরে যে ভাবে দলের এক বিধায়ক তথা মেয়রের ‘আতিথ্যে’ একটি ‘অরাজনৈতিক’ মঞ্চ গড়ে বিক্ষুব্ধ মুখেদের এক জায়গায় আনার চেষ্টা হল, তা যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ।
বিধাননগরে এ দিনের বৈঠকে ছিলেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ, মুকুল-ঘনিষ্ঠ অমিতাভ মজুমদার প্রমুখ। সব্যসাচীবাবুর বক্তব্য, ‘‘ওই মঞ্চ সম্পর্কে উদ্যোক্তারা বলতে পারবেন। আমি অতিথি আপ্যায়ন করেছি।’’ ঘণ্টাদুয়েক বৈঠকের পরে নবগঠিত মঞ্চের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক অবক্ষয়, প্রতিহিংসা, হানাহানির বিরুদ্ধে কাজ করবে ওই মঞ্চ। জেলায় জেলায় কমিটি তৈরি হবে। সঙ্গে প্রাক্তন সাংসদের সংযোজন, ‘‘এক সময়ের পরিবর্তনকামীদেরও সামিল করার চেষ্টা করা হচ্ছে সেখানে। বিশেষত, যাঁরা অপমানিত, বঞ্চিত, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হছে।’’ উদ্যোক্তাদের দাবি, পরিবর্তন আনতে যাঁদের ভূমিকা ছিল, তাঁদের অনেকেরই মতামতের এখন দাম নেই শাসক শিবিরে। স্বাধীন মত জানাতে গিয়ে দল বা প্রশাসনের হাতে হেনস্থার শিকারও হয়েছেন অনেকে। যাঁরা দলকে বড় করতে পরিশ্রম করেছিলেন, নব্য-যুবদের দাপটে তাঁরা এখন কোণঠাসা। এই রকম সকলকে নিয়ে মঞ্চ গড়ার চেষ্টায় কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, সারা রাজ্য থেকেই তাঁরা সাড়া পাচ্ছেন বলে উদ্যোক্তাদের দাবি।
এই উদ্যোগকে তাঁরা কী ভাবে দেখছেন? দলের নেতা ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কুণাল তো সকলের সঙ্গেই দেখা করতে যান। কিছু তো একটা করতে হবে, তা-ই নতুন মঞ্চ বানাচ্ছেন! সব্যসাচীর সঙ্গে মুকুল রায় দেখা করতে গেলে গুরুত্ব দিতাম!’’
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বিধাননগরের মেয়রের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের পরিচয়ের সুবাদেই তাঁরা গিয়েছিলেন। মেয়রও গৃহকর্তার মতো আপ্যায়ন করেছেন! আর সব্যসাচীবাবুর বক্তব্য, ‘‘অতিথিরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেছেন। ওই মঞ্চ সম্পর্কে ওঁরাই বলতে পারবেন। শুনলাম, সামাজিক এবং রাজনৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে তাঁরা কাজ করবেন।’’
মুকুলবাবুকে বাড়িতে আপ্যায়ন করে দলের কাছে ‘ভুল’ স্বীকার করতে হয়েছিল সব্যসাচীকে। বিধাননগরে এ দিনের ঘটনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে মুকুলবাবু অবশ্য বলেছেন, ‘‘ওই মঞ্চ বিষয়ে কিছু জানি না। সব্যসাচীর রাজনৈতিক অবস্থান ও-ই বলতে পারবে।’’