পিংলা

বিরোধীদের পাল্টা সভার প্রস্তুতি তৃণমূলে

বিস্ফোরণের পরদিনই পিংলার ব্রাহ্মণবাড়ে গিয়ে গ্রামবাসীর বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কার্যকরী সভাপতি অজিত মাইতি। তারপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা পিংলায় গেলেও যাননি শাসক দলের কোনও নেতা। বিরোধীদের অভিযোগ, বিস্ফোরণে নিহত রামপদ মাইতিকে সামনে রেখে বকলমে কারখানা চালাতেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা রঞ্জন মাইতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৫ ০৩:৩৮
Share:

বিস্ফোরণের পরদিনই পিংলার ব্রাহ্মণবাড়ে গিয়ে গ্রামবাসীর বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কার্যকরী সভাপতি অজিত মাইতি। তারপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা পিংলায় গেলেও যাননি শাসক দলের কোনও নেতা। বিরোধীদের অভিযোগ, বিস্ফোরণে নিহত রামপদ মাইতিকে সামনে রেখে বকলমে কারখানা চালাতেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা রঞ্জন মাইতি। বিস্ফোরণের ঘটনায় দলীয় নেতার নাম জড়ানোয় প্রথম থেকেই অস্বস্তিতে শাসক দল। যদিও রঞ্জন মাইতি দলের কেউ নয় বলেই তৃণমূল দায় ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছে বলে বিরোধীদের দাবি।

Advertisement

সোমবার ব্রাহ্মণবাড়ে মিছিল করে কংগ্রেস। মিছিলে পা মেলান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, মানস ভুঁইয়া প্রমুখ। শাসক দলকে আরও ব্যাকফুটে ঠেলে দিতে এ বার পিংলায় সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপিও। চলতি সপ্তাহের শুক্রবার বা শনিবার এই সভা হতে পারে। সভায় উপস্থিত থাকতে পারেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, সুভাষ সরকার, রীতেশ তেওয়ারিরা। বিরোধীদের মোকাবিলা করতে মরিয়া তৃণমূলও। আগামী শনিবার শাসক দলও পিংলায় সভা করতে পারে বলে দলীয় সূত্রে খবর। সভায় অবশ্য দলের জেলা নেতৃত্বদেরই উপস্থিত থাকার কথা।

পিংলা কাণ্ডে তৃণমূল যে কতটা অস্বস্তিতে তা স্পষ্ট শাসক দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের কথাতেই। তাঁর কথায়, “পিংলা নিয়ে অপপ্রচার চলছে। মানুষ যে তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছে, তা সভাই প্রমাণ করে দেবে!” সভায় কি রাজ্য নেতৃত্ব থাকবেন? দীনেনবাবুর মন্তব্য, “এতদিন নেতারা (বিরোধী দলের) এসেছেন। রাজ্য নেতারা এসেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা এসেছেন! মানুষ ছিল না! এ বার মানুষ থাকবে!” তৃণমূলের দাবি, তাঁরা আগেই এই এলাকায় সভা করতে চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশ- প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। তাঁদের আরও দাবি, পিংলার মানুষের মনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ নেই। এলাকার মানুষের সঙ্গে দলের যোগাযোগ রয়েছে।

Advertisement

দলের এক সূত্রে খবর, মঙ্গলবার পিংলায় গিয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি অজিত মাইতি। প্রস্তাবিত সভা সফল করতে কী কী করণীয়, বৈঠকে সেই নিয়েই আলোচনা হয়। পরে অজিতবাবু বলেন, “হাজার হাজার মানুষ সভায় থাকবে। সভার ভিড়ই সব কুত্‌সা-অপপ্রচারের জবাব দেবে!”

এতদিনেও কোনও তৃণমূল নেতা কেন বিস্ফোরণের গ্রামে গেলেন না? জেলা তৃণমূলের এক নেতা মানছেন, “এ ক্ষেত্রে চটজলদি কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়! একটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গিয়েছে। সেখানে মানুষের ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক। কারণ, সরকার আমাদের। পুলিশ আমাদের!” তাঁর কথায়, “পরিস্থিতি দেখে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে দল ‘ধীরে চলো’ নীতিই নিয়েছে।”

তাহলে এ বার কেন সভা করার সিদ্ধান্ত? এলাকায় সভা করার দাবি জানাচ্ছিলেন পিংলার নেতা- কর্মীরাই। তাঁদের মতে, রাজনৈতিক ভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে দেরি হলে পরে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে। তখন এলাকার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়া বেশ কঠিন হবে। সংগঠনকে চাঙ্গা রাখতে হলে বড় কর্মসূচি করা জরুরি। শাসক দলের এক নেতা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “বীরভূমের পাড়ুইয়ে কী হয়েছে আমরা জানি। ওখানে বিজেপি এত বাড়ল কী করে? আমরা চাই না পিংলাও পাড়ুই হোক!”

গত ৬ মে রাতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয় ব্রাক্ষ্মণবাড়ে। মৃত্যু হয় ১২ জনের। জখম হয় ৪ জন। এরপর থেকেই বিস্ফোরণ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর অব্যাহত। বিরোধী শিবির মনে করছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পিংলায় তৃণমূল- বিরোধী হাওয়া তৈরি হয়েছে। একে কাজে লাগানো উচিত। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “পিংলায় আমাদের আন্দোলন যেমন চলছে, তেমন চলবে। সত্যিটা চাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে মানুষ বুঝে গিয়েছে কারা বোমার কারবার করে।” প্রমাণ লোপাট করার জন্যই বিস্ফোরণস্থল তড়িঘড়ি সাফাই করা হয়েছে বলে বিজেপির দাবি।

দলের এক নেতা বলছেন, “এতদিন রাজ্য নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসেছেন। এ বার রাজ্য নেতারা এসে সভা করবেন। পরে পিংলায় আরও বৃহত্তর আন্দোলন হবে।” তাঁর মন্তব্য, “মনে রাখতে হবে এই একটা সময় যখন বিজেপি এগোচ্ছে। তৃণমূল পিছোচ্ছে। আমাদের আটকানোর সাহস ওদের নেই। এখন সময় এগোনোর। প্রতিরোধের ব্যুহ তৈরি করেই আমরা ওদের জনবিচ্ছিন্ন করে দেবো!” পিংলার মুণ্ডমারিতে সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। তাত্‌পর্যপূর্ণ ভাবে মুণ্ডমারিতেই সভা করবে তৃণমূল। ভিড়ের নিরিখে বিজেপির সভাকে ছাপিয়ে যাওয়াই এখন একমাত্র লক্ষ্য শাসক দলের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন