Amit Shah

করোনা সঙ্কটের মধ্যেও রাজনীতি! প্রশ্ন তুলে শাহকে পাল্টা আক্রমণ তৃণমূলের

অমিত শাহকে নিশানা করে অমিত মিত্রের আক্রমণ ছিল ত্রিমুখী— নকল করার প্রবণতা, অসত্য কথা বলা এবং যা বলা উচিত, সেটা না বলা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২০ ২০:১৪
Share:

অমিত শাহের ভার্চুয়াল র‌্যালির পর পাল্টা আক্রমণ ডেরেক ওব্রায়েন, অমিত মিত্র এবং দীনেশ ত্রিবেদীর। —ফাইল চিত্র

ভার্চুয়াল র‌্যালিতে অমিত শাহ চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু জবাব দিলেন দুই সাংসদ এবং রাজ্যের এক মন্ত্রী। অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘‘মমতাদিদি, আগামিকাল হিসেব নিয়ে আসুন।’’ জবাব দিতে ‘কাল’ পর্যন্ত অপেক্ষা নয়, মঙ্গলবারই সাংবাদিক সম্মেলন করলেন ডেরেক ও’ব্রায়েন, দীনেশ ত্রিবেদীঅমিত মিত্র। করোনার এই সঙ্কটকালে কেন রাজনীতি নিয়ে মাতামাতি, সেই প্রশ্ন তুলে অমিত শাহকে আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। একযোগে তাঁদের তোপ, যে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তার উত্তর তো দিলেনই না, উল্টে অসত্য, বিভ্রান্তিকর কথা বলেছেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি।

Advertisement

সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই অমিত শাহকে কটাক্ষ করে তৃণমূলের সংসদীয় দলনেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘উনি সত্যিই ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে আছেন।’’ শ্রমিক স্পেশালে পরিযায়ী শ্রমিকদের যে ভাবে ফেরানো হচ্ছে, তাকে ‘করোনা এক্সপ্রেস’ বলে মন্তব্য করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবারের ভার্চুয়াল র‌্যালিতে সেই বিষয়টিকে ইস্যু করে অমিত শাহ বলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের অপমান করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তার জবাবে এ দিন ডেরেক বলেন, ‘‘কে ভারতীয় রেল চালায়? পরিযায়ী শ্রমিকদের আপনারা ৫০ দিন ধরে পাঠাচ্ছেন। আমরা বাস্তববাদী পরামর্শ দিয়েছিলাম, সামাজিক দূরত্ব মেনেও পাঁচ দিনে ৩ কোটি শ্রমিককে বাড়িতে পাঠানো সম্ভব। কে পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকার কেড়েছে? কে পরিযায়ী শ্রমিকদের গবাদি পশুর মতো পাঠিয়েছে? কোনও খাবার ছাড়াই? মোদী-অমিত শাহের পরিকল্পনাহীনতার জন্যই ১৮ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।’’

অমিত শাহ তাঁর র‌্যালিতে মমতার উদ্দেশে হিসাব দেওয়ার কথা বলেছিলেন। পাল্টা তথ্য পরিসংখ্যান নিয়ে ডেরেক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের হিসেবে আমপানে ১ লক্ষ ২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্ত ৫ লক্ষ পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্র দিয়েছে মাত্র ১ হাজার কোটি।’’ কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের পাওনা নিয়ে বার বার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন ডেরেক সেই বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘‘বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প, জিএসটি, খাদ্যের ভর্তুকি-সহ সব মিলিয়ে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের পাওনা ৫৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সেই টাকা মেটানো হচ্ছে না।’’ করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় অর্থ সংগ্রহের জন্য গঠিত ‘পিএম কেয়ার্স’- নিয়ে ডেরেকের কটাক্ষ, ‘‘ওটা পিএম প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘করোনা এক্সপ্রেসেই’ মমতার প্রস্থান: ভোট-দামামা বাজিয়ে দিয়ে চ্যালেঞ্জ শাহের

অমিত শাহকে নিশানা করে অমিত মিত্রের আক্রমণ ছিল ত্রিমুখী— নকল করার প্রবণতা, অসত্য কথা বলা এবং যা বলা উচিত, সেটা না বলা। রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৬ সালে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প শুরু করেছিলেন। এই প্রকল্পে দেড় কোটি পরিবার পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুবিধা পান। তার দেড় বছর পর দেখা গেল একই রকম প্রকল্প এল আয়ূষ্মান ভারত।’’ কেন্দ্র অভিযোগ করছে, কেন আয়ূষ্মান ভারত গ্রহণ করল না রাজ্য? অমিত মিত্রের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘যে প্রকল্প প্রায় দু’বছর আগে থেকে সাফল্যের সঙ্গে চলছে, একই রকম প্রকল্প কেন নেওয়া হবে?’’ শৌচাগার তৈরি, বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়ার মতো একাধিক বিষয়ে অমিত শাহ ভুল বা অসত্য তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী।

‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রকল্পে ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই প্রসঙ্গ টেনে অমিত মিত্র বলেছেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিক হোক বা ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ী— কাউকে নগদ অর্থসাহায্য করা হয়নি। অথচ বিশ্বের প্রায় সব দেশই নগদ আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে।’’ প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, এই ২০ লক্ষ কোটি টাকা দেশের জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ। এই প্যাকেজকে বিগ জিরো বলে মন্তব্য করে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর কটাক্ষ, ‘‘এখন তো অর্থনীতিবিদদের মধ্যে বিতর্ক হচ্ছে যে, এই প্যাকেজ জিডিপি-র ০.৯ শতাংশ নাকি ১.১ শতাংশ।’’

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড মৃত্যু, দেশে করোনায় আক্রান্ত ২.৬৬ লক্ষ

প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা রাজ্যসভার সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী আবার এই সময় রাজনৈতিক বার্তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আজ দেশের সামনে তথা বিশ্বের মূল সমস্যা কী? আজ ভার্চুয়াল র‌্যালি কেন করতে হল অমিত শাহকে? কারণ আজ আমরা এক নজিরবিহীন সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আজ দেশবাসীকে একজোট হতে হবে। কিন্ত এই সময় রাজনীতি কেন? এই সময় রাজনীতির কথা বলা শোভা পায় না।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক মাস ধরে আপনি যে টুইটার-ফেসবুক এবং নানা মন্তব্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গকে আক্রমণ করে যাচ্ছেন, আজ বোঝা গেল, সে সব পুরোপুরি রাজনৈতিক ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন