TMC

ফের ধস তৃণমূলে, দঃ দিনাজপুর জেলা পরিষদের দখল নিল বিজেপি, গেলেন কালচিনির বিধায়কও

তৃণমূলের জন্য ধাক্কাটা আরও বড় অবশ্য দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়। সেখানে জেলা পরিষদের বোর্ড হাতছাড়া হয়ে গেল তৃণমূলের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৯ ১৮:০৫
Share:

দিল্লিতে বিজেপি কার্যালয়ে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল নেতারা। —নিজস্ব চিত্র

বড়সড় ধাক্কা শাসক শিবিরে। আবার ভাঙন ধরল তৃণমূলের পরিষদীয় দলে। ভাঙন ধরল জেলা পরিষদ স্তরে তৃণমূলের একচ্ছত্র আধিপত্যেও। আর এক দিনে এই জোড়া ধাক্কা তৃণমূলকে দিল উত্তরবঙ্গ। আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনির তৃণমূল বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারি সোমবার যোগ দিলেন বিজেপিতে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি-সহ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে চলে গেলেন। যদিও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, এই দলবদলে রাজ্যে কোনও প্রভাব পড়বে না।

Advertisement

উইলসন চম্প্রমারি ১০ বছর ধরে কাচলিনির বিধায়ক। ২০০৯ সালে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সমর্থিক নির্দল প্রার্থী হিসেবে কাচলিনি থেকে জেতেন তিনি। ২০১১ সালেও সে ভাবেই। ২০১৬ সালে সরাসরি তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে জেতেন। তিন বারের বিধায়ক এ বার তৃণমূল ছেড়ে দিলেন। নয়াদিল্লিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সদর দফতরে হাজির হয়ে এ দিন গেরুয়া পতাকা হাতে তুলে নিলেন উইলসন। ফলে আলিপুরদুয়ার জেলার ৫ বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ২টির দখল নিল বিজেপি।

তৃণমূলের জন্য ধাক্কাটা আরও বড় অবশ্য দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়। সেখানে জেলা পরিষদের বোর্ড হাতছাড়া হয়ে গেল তৃণমূলের। সভাধিপতি লিপিকা রায়-সহ জেলা পরিষদের মোট ১০ সদস্য এ দিন নয়াদিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। ফলে ১৮ আসনের জেলা পরিষদে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে গিয়েছে। সভাধিপতি নিজে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় নতুন করে বোর্ড গঠনের প্রয়োজনও পড়বে না।

Advertisement

আরও পড়ুন: কোচবিহারে বিক্ষোভের মুখে সুব্রত বক্সী, ঢুকতে পারলেন না শীতলকুচিতে

দক্ষিণ দিনাজপুরে তৃণমূলের ধাক্কা অবশ্য শুধু জেলা পরিষদের হাতবদলেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি তথা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতাদের অন্যতম বিপ্লব মিত্রও সোমবার বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনে বালুরঘাট লোকসভা আসনে তৃণমূল হারায় বিপ্লব মিত্রকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বালুরঘাটের প্রাক্তন সাংসদ তথা এ বারের পরাজিত প্রার্থী অর্পিতা ঘোষকে সভাপতি করেন তিনি। তার পর থেকেই বিপ্লব মিত্রের দলবদল নিয়ে জল্পনা চলছিল। সোমবার সে জল্পনা সত্যি হয়ে গেল।

কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষ এবং মুকুল রায়ের উপস্থিতিতে এ দিন দলবদল করেন এই জনপ্রতিনিধি এবং তৃণমূল নেতারা। তবে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের দখল নেওয়াকে এ দিনের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে বাখ্যা করেছেন দিলীপ ঘোষ এবং মুকুল রায়। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম কোনও জেলা পরিষদের দখল নিল বিজেপি।

আরও পড়ুন: মমতার সরকারের পুলিশই তাঁর প্যারোল আটকেছিল, ফেসবুকে বিস্ফোরক মদন

তৃণমূল অবশ্য বলছে, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদ তাদের হাতছাড়া হয়নি। জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী অর্পিতা ঘোষের দাবি, ১০ জন জেলা পরিষদ সদস্য বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। ১০ জেলা পরিষদ সদস্যকে সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির করে বিজেপি নেতারা এ দিন উত্তরীয় পরিয়ে দিয়েছেন সর্বসমক্ষেই। কিন্তু অর্পিতা মানতে নারাজ। তিনি বলেছেন, ‘‘জেলা পরিষদের ১০ জন সদস্যকে বিজেপি পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে দেখাতে পারবে না।’’ অর্পিতা আরও বলেছেন, ‘‘যাঁরা দিল্লিতে গিয়েছেন, তাঁরা সবাই স্বেচ্ছায় যাননি। ভয় দেখিয়ে অনেককে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জেলায় ফিরেই ওঁরা আবার তৃণমূলে যোগ দেবেন। আমার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে।’’

অন্য দিকে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্যান্ডেল খাটিয়ে খাটিয়া নিয়ে মুকুল রায় যেমন ভাবে অন্য দলের লোকদের পতাকা ধরিয়ে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে তৃণমূলকে শেষ করেছেন, ঠিক তেমন কাজ দিল্লি বসে বিজেপিতে গিয়ে করছেন। তার মানে বোঝা যাচ্ছে এখানে বিজেপির ফুল ফুটবে না, বিজেপি সেটা অচিরেই বুঝবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন