Calcutta High Court

অবসরের পরেও পিএফ মেলেনি! হাই কোর্টের দ্বারস্থ রাজ্য পরিবহণ দফতরের কর্মী, রুল জারির পরে হাজির মদনও

বিচারপতি মুখোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, প্রত্যেক দফতর একে অপরের উপর দায় চাপাচ্ছে। আর মামলাকারী অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি জানেন না, তাঁর প্রাপ্য টাকা আদৌও পাবেন কি না!

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৫ ১৬:০৬
Share:

শুক্রবার হাই কোর্টে উপস্থিত মদন মিত্র। — নিজস্ব চিত্র।

কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন কলকাতা স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএসটিসি)-এর এক প্রাক্তন কর্মী। তাঁর অভিযোগ, অবসর নেওয়ার পরেও অবসরকালীন সুবিধা (প্রভিডেন্ট ফান্ড) এখনও পাননি তিনি। এই নিয়ে একে অপরের দিকে ‘দায়’ ঠেলেছে রাজ্য, পিএফ ট্রাস্ট এবং সিএসটিসি। শেষ পর্যন্ত সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের হাজিরার জন্য ‘রুল জারি’ করে হাই কোর্ট। তা মেনে শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টে হাজিরা দেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। তিনি সিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং ‘এমপ্লয়িজ় প্রভিডেন্ট ফান্ড ট্রাস্ট’-এর চেয়ারম্যান।

Advertisement

মামলাকারীর নাম অমরেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সিএসটিসি-র প্রাক্তন কর্মী। তাঁর বক্তব্য, অবসর নেওয়ার পর পিএফ এখনও পাননি। গত বছর ৯ জুলাই কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় সিএসটিসি-কে মামলাকারীর সমস্ত অবসরকালীন পাওনা সুদ-সহ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই নির্দেশ কার্যকর না করার জন্য আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়। এই মামলায় সিএসটিসি-র যুক্তি, রাজ্য এবং নিজেদের তহবিলের থেকে যা টাকা জোগাড় করা গিয়েছে, তা পিএফে জমা করা হয়েছে। পিএফ ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ জানান, ওই কর্মীর নামে যথাযথ টাকা জমা না দেওয়ায় পিএফ বাবদ টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। রাজ্য জানিয়েছে, ২০১৫ সাল থেকে ৭৫% টাকা এবং কোভিডের পরে ১০০% অর্থ পিএফ ট্রাস্টে দেওয়া হচ্ছে।

এই নিয়ে বিচারপতি মুখোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, প্রত্যেক দফতর একে অপরের উপর দায় চাপাচ্ছে। আর মামলাকারী অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি জানেন না, তাঁর প্রাপ্য টাকা আদৌও পাবেন কি না!

Advertisement

গত ৮ মে আদালত জানিয়েছিল, রাজ্য সরকারের পরিবহণ দফতর, অর্থ দফতর এবং পিএফ কর্তৃপক্ষকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একটি সমাধান সূত্র বার করতে হবে। গত ২০ মে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, কোনও পক্ষই মামলাকারীর পাওনা মিটিয়ে দিতে চাইছে না। এক জন প্রাক্তন কর্মীর বার বার হয়রানি হচ্ছে।

সিএসটিসি-র বক্তব্য, এর আগে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মীদের অবসরকালীন পাওনা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু সরকার সেই প্রকল্প মাঝপথে একতরফা ভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছে। ফলে টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। পাল্টা রাজ্যের তরফে সওয়াল করে জানানো হয়, প্রকল্প অনুযায়ী পদ্ধতি মেনে প্রয়োজনীয় টাকা দেওয়া হয়েছে সিএসটিসি-কে। তাই এখন রাজ্য সরকারের উপর আদালতের নির্দেশ কার্যকর করার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।

এই অবস্থায় গত শুনানিতে আদালত সিএসটিসি, রাজ্য এবং পিএফ ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ‘রুল’ জারি করে। ওই মামলাতেই শুক্রবার দুপুর ২ টোয় হাই কোর্টে হাজিরা দিতে যান সিএসটিসির ম্যানেজিং ডিরেক্টর তথা এমপ্লয়িজ় প্রভিডেন্ট ফান্ড ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মদন। বিচারপতির মন্তব্য, "কোনও ইগো থেকে আপনাদের তলব করিনি। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের মাসিক বেতন থেকে ওই টাকা কেটে নিয়েছিল। এখন তাঁরা সেই টাকা পাচ্ছেন না। কারও মেয়ের বিয়ে, কারও স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য টাকা দরকার। কেন টাকা দেওয়া হচ্ছে না।" মদনদের উদ্দেশে তাঁর আরও মন্তব্য, "আপনাদের ডেকে আমার কোনও আনন্দ নেই। বকেয়া টাকার কথা ভাবছি।" অর্থসচিবের উদ্দেশে বিচারপতি জানান, ধরুন আপনি যৌথ পরিবারের কর্তা। তাই প্রশ্ন উঠলে আপনার বিরুদ্ধেই উঠবে। এর পরেই আদালত আলোচনার মাধ্যমে কর্মীদের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement