TMC MLA Shampa Dhara

‘জানতে পেরে বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করেছিল!’ বললেন স্বামী, ‘এমএলএ’ পরিচয় লুকিয়েই পাত্র পেলেন শম্পা

সাদামাটা প্রাথমিক শিক্ষক তাই দাদাকে বলেওছিলেন, ‘থাক। এ বিয়ে করে কাজ নেই আমার। অন্য জায়গায় দেখ’।

রবিশঙ্কর দত্ত

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৫০
Share:

শম্পা ধাড়া। —নিজস্ব চিত্র।

ভয় করেনি আপনার!

প্রশ্ন শুনে হেসেই চলেছেন গজানন রায়। স্ত্রীর উপস্থিতিতে লজ্জা-লজ্জা ভাব নিয়েই স্বীকার করলেন, ‘‘পরিচয় জানতে পেরে বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করেছিল ঠিকই।’’ সাদামাটা প্রাথমিক শিক্ষক তাই দাদাকে বলেওছিলেন, ‘থাক। এ বিয়ে করে কাজ নেই আমার। অন্য জায়গায় দেখ’।

কিন্তু তত ক্ষণে বিধায়ক পছন্দ করে ফেলেছেন ঝকঝকে তরুণ অঙ্কের শিক্ষককে। আর জেনে গিয়েছেন, তাঁরও একটু একটু ভাল লেগে গিয়েছে তরুণীকে। একটু একটু সাহস হওয়ায় সেই গজাননই এখন বলেন, ‘‘কাজকর্ম খারাপ দেখলে বলব। ভাল হলেও।’’

পরিচয় গোপন রেখে পূর্ব বর্ধমানের রায়না বিধানসভা থেকে নির্বাচিত বিধায়ক শম্পা ধাড়া বিয়ের কথা ভেবেছিলেন এ ভাবেই। কেন? শম্পার আশঙ্কা ছিল, ‘‘বিধায়ক জেনে অনেকেই বিয়ে করতে চাইবেন। কিন্তু আমি একদম সাধারণ মেয়ে। গরিব ঘরের মেয়ে। খড় কেটে, গরু চরিয়ে, ধান রুয়ে বড় হয়েছি। সে রকমই জীবন চেয়েছি আমি। সংসার চেয়েছি। দাম্পত্যে আবার এমএলএ কী!’’

পরিচয় গোপন করে ‘পাত্র দেখা’র ভাবনা যে একেবারে ভুল ছিল না, তা-ও টের পেয়েছেন শম্পা। বিধায়কের পরিচয় লুকিয়ে রাখা এমনিতেই কঠিন। রাজনীতিক, তা-ও আবার শাসক শিবিরের পদাধিকারীর সেই অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? শম্পা বললেন, ‘‘ছবি দেখে অনেকে না করে দিয়েছিল। বলেছিল, ‘মেয়ে কালো’। পছন্দ নয় তাঁদের। তার পরে কোথা থেকে এমএলএ জানতে পেরে বিয়ের জন্য হুড়োহুড়ি!’’ দৈনন্দিন রাজনীতির এই অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলে গিয়েছিলেন সেই রকম অন্তত ১০ জন। শম্পার কথায়, ‘‘এক প্রোমোটার তো নাছোড়! বিয়ে করবেন। পছন্দই না, আবার বিয়ে কেন!’’

গতি-প্রকৃতি যা ছিল, শুধু কি স্বামীরই বুক ঢিপঢিপ করেছিল? বিধানসভার লবিতে হেসে গড়িয়ে পড়লেন তৃণমূলের বিধায়ক, ‘‘আর বলবেন না! শাশুড়ি এসেছিলেন ঘরে। হাতে লোহা-বাঁধানোর মাপ জানতে। তা জেনেই চলে গেলেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমিই বেরিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আর কোনও কথা বললে না কেন গো?’’ জবাবও পেয়েছিলেন নববধূ। ‘‘শাশুড়িমা একটু হেসে বলে ফেললেন, কী কথা যে বলব, বুঝতে পারছি না!’’

শুধু বিধায়কই নন। গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে পর্যন্ত শম্পা ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার সভাধিপতিও। রাজনীতির বাইরের লোকেরাও জানেন, সেই চেয়ার আরও এক ‘কাঠি’ উপরে। অনেক দফতরের পূর্ণমন্ত্রীর থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এখন আর সেই পদ নেই তাঁর। নতুন শাঁখা, চওড়া সিঁদুর আর গা-জোড়া গয়না। বৌভাতের পরদিনই ছুটতে হয়েছে বিধানসভায়। তৃণমূলের ধর্নায় বসার আগে বললেন, ‘‘পঞ্চায়েতের আগে বিয়েটা ঠিক হয়েছিল। কিন্তু ভোটের জন্য নেতারা পিছোতে বললেন। এ বার সেরেই ফেললাম।’’ বিয়ের ছুটি তিন দিন। এখনও ঘরে লোকজন। সেই সব ফেলেই চলে এসেছেন। তাঁর মতে, ‘‘দলও আমার কম নয়।’’

বর্ধমানে ফিরেও গেলেন তড়িঘড়ি। বলে গেলেন, ‘‘শ্বশুরমশাই চান, রাতে বাড়ির সবাই একসঙ্গে খেতে বসি। এই একটা কথা, রাখতে তো হবেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন