তাপসের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ মমতাজ সঙ্ঘমিতা

আট বছর আগে মহিলাদের মসজিদে এনে নমাজ পড়ানোর শুরুটা করেছিলেন নিজের হাতে। এখনও সেই ধারা অব্যাহত। অথচ তিনি যে দলের, সেই দলেরই এক সাংসদ সম্প্রতি মহিলাদের নিয়ে কটূক্তি করেছেন। মঙ্গলবার খুশির ঈদের দিনে ওই মন্তব্যের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করলেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ মমতাজ সঙ্ঘমিতা চৌধুরী। সাংবাদিকদের একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “দেখুন এই ধরনের কটূক্তি সে এমপি হোক, আর যেই হোক, যে কোনও মানুষ হোক, যে কোনও ধর্মের বা যে কোনও রাজনৈতিক মানুষ হোক শুধু মেয়ে বলে নয়, কোনও মানুষই আমার মনে হয় এটাকে ঠিক ভাবে মেনে নেবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০২:৩৫
Share:

আট বছর আগে মহিলাদের মসজিদে এনে নমাজ পড়ানোর শুরুটা করেছিলেন নিজের হাতে। এখনও সেই ধারা অব্যাহত। অথচ তিনি যে দলের, সেই দলেরই এক সাংসদ সম্প্রতি মহিলাদের নিয়ে কটূক্তি করেছেন। মঙ্গলবার খুশির ঈদের দিনে ওই মন্তব্যের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করলেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ মমতাজ সঙ্ঘমিতা চৌধুরী।

Advertisement

সাংবাদিকদের একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “দেখুন এই ধরনের কটূক্তি সে এমপি হোক, আর যেই হোক, যে কোনও মানুষ হোক, যে কোনও ধর্মের বা যে কোনও রাজনৈতিক মানুষ হোক শুধু মেয়ে বলে নয়, কোনও মানুষই আমার মনে হয় এটাকে ঠিক ভাবে মেনে নেবে না। তিনি কী অবস্থায় কেন বলেছেন তা জানি না। কিন্তু যে কোনও পরিস্থিতিই হোক এই ধরনের একটা মন্তব্য বাঞ্ছনীয় নয়। এটুকুই আমি বলতে পারি।”

২০০৬ সালে ২৩ অক্টোবর বীরভূমের মাড়গ্রামে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে পাড়ার গুদামপাড়ার মসজিদে প্রথম বাড়ির মহিলাদের বাইরে এনে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের নমাজে অংশগ্রহণে সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি। তখন শ্বশুরবাড়িতে এসে নিজে এবং মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ার আত্মীয়দের মধ্যে বাড়ির মহিলাদের, বাড়ির কাজের মেয়েদের মসজিদে গিয়ে মহিলাদের নমাজে আপত্তি না থাকার কথা বুঝিয়ে ছিলেন। কিন্তু তখন নিজেদের আত্মীয়দের মধ্যে অনেকেই তাঁদের মহিলাদের বাড়ির বাইরে গিয়ে মসজিদে নমাজ পড়তে আপত্তি করেছিল। যার ফলে প্রথমে তিরিশ জন মহিলাকে পেয়েছিলেন। তাতে কিন্তু তিনি থেমে যাননি। পরে বছরের পর বছর সেই সংখ্যাটা তিনি বাড়িয়ে তুলতে পেরেছিলেন। এ বছর সেই সংখ্যাটা একশো ছাড়িয়ে গিয়েছে। এ বার মাড়গ্রামে গুদামপাড়ার মসজিদে নমাজে অংশগ্রহন করলেন ১২০ জন মহিলা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সব মহিলারা জানালেন, “প্রথম দিকে স্বামী বা বাড়ির অন্য পুরুষদের বোঝাতে পারিনি এবং তাঁরা আমাদের কথা বুঝতেও চাইতেন না। তারপর যখন তাঁরা দেখলেন পাশের বাড়ির মহিলারা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে নমাজে অংশগ্রহণ করছেন তখন তাঁদের মধ্যেও ধারণা জন্মায় ‘আমরাও বাড়ির মহিলাদের আর ঘরে বেঁধে রাখব না।” বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত নিয়ে এমএ পড়ছে সাবানা বেগম। মাড়গ্রামের গুদামপাড়ায় বাপেরবাড়ি। কলকাতায় বিয়ে হয়েছে তাঁর। তিনি বললেন, “ঈদ এবং কুরবানির দিন পুরুষদের পাশাপাশি জামাতে অংশগ্রহণ করতে বাপেরবাড়ি চলে আসি। স্বামী বা শ্বশুর ও বাপেরবাড়িতে এতে কোনও আপত্তি নেই।”

Advertisement

নমাজে অংশগ্রহণকারী আর এক মহিলা মেহেরান্নুষা বেগম জানালেন, “ঝাড়খণ্ডে বাপেরবাড়িতে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের নমাজের প্রচলন আছে। এখানে এসে সেই সুযোগটা পেয়ে ভাল লাগছে।” মাড়গ্রামের বাসিন্দা কেনিজা বেগম, আয়েষা খাতুনদের কথায়, “হজ করতে গিয়ে পুরুষদের সঙ্গে মহিলারা একসঙ্গে জামাতে অংশগ্রহণ করতে পাই। আগে মনে মনে খুব ইচ্ছে জাগত আমরাও কেন পুরুষদের পাশাপাশি মসজিদে গিয়ে জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারব না। সেই সুযোগটা এনে দিয়েছেন মমতাজ সঙ্ঘমিতা চোধুরী আর নুরে আলম চৌধুরী।” সংখ্যাটা বাড়ছে দেখে আনন্দিত প্রাক্তন মন্ত্রী নুরে আলম চৌধুরীর স্ত্রী তথা সাংসদ মমতাজ সঙ্ঘমিতা চৌধুরী। তিনি বলেন, “আজ অনেক জায়গায় মহিলারা বাড়ির বাইরে এসে নমাজ পড়ছে। সব জায়গায় ছড়িয়ে যাচ্ছে বলে ভাল লাগছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন