ছবি: এপি।
নির্বাচনী ফল বিশ্লেষণের পরে পাহাড়ের দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়েছে তৃণমূল। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ না থাকলে প্রশাসনিক কাজকর্ম কতটা স্বাভাবিক রাখা যাবে, তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে শাসক শিবিরে। তাই দল ও নবান্নের নতুন ‘প্রতিনিধি’র কথাও ভাবা হচ্ছে।
দার্জিলিং নিয়ে তৃণমূল যে স্বস্তিতে ছিল এবারের নির্বাচনের পরে তাতে আপাতত ছেদ পড়েছে। পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য নবান্ন যে সব প্রকল্প নিয়েছিল, তার তালিকা দীর্ঘ। কিন্তু তাতে যে পাহাড়ের সাধারণ মানুষকে পাশে পাওয়া যায়নি এবারের ভোটে। সেই সঙ্গে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন অংশের জন্য আলাদা বোর্ড-ও তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সে সবের কোনও প্রভাবে যে জনসমর্থনে পড়েনি, এখন তা স্বীকার করে নিচ্ছেন শাসক শিবিরের শীর্ষনেতৃত্ব। কলকাতায় এসে পাহাড়ের ভোট পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন জিটিএ-এর প্রধান বিনয় তামাং ও তৃণমূলের প্রার্থী অমর সিংহ রাই। তার পরই পাহাড়ের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শে পাহাড়ের নেতারা কথা বলেছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। পার্থবাবু বলেন, ‘‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণের পরে প্রয়োজনমতো পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। তবে ভোটের ফল যাই হোক, পাহাড়ের উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী কোনও খামতি রাখবেন না।’’
প্রশাসনিক কাজে গতি আনতে কালিম্পংকে আলাদা জেলা ঘোষণা করা হয়েছে অল্প কিছুদিন আগেই। কিন্তু সেখানে মোর্চার বিনয়পন্থী নেতাদের সঙ্গে জোট করেও তৃণমূলের ভোট সামান্যই। সেই কালিম্পং বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের থেকে ৬২৫৭৫ ভোট বেশি পেয়েছে বিজেপি। দার্জিলিং বিধানসভা কেন্দ্রে শাসকদলের অবস্থা আরও খারাপ। এখানে ১৬২৬৭০ ভোটের মধ্যে বিজেপির থেকে তৃণমূল ৮৫৮২৪ ভোট কম পেয়েছে। আর কার্শিয়াংয়ে বিজয়ী বিজেপি বেশি পেয়েছে ৮৭৫৯৭ ভোট।
একইভাবে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি, শিলিগুড়ি ও ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা আসনে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। মাটিগাড়া-নকশালবাড়িতে বিজেপি এগিয়ে ৯৮৮৯৮ ভোটে। এমন কী শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রেও বিজেপির জয়ের ব্যবধান ৬৫৪৮৬।
দার্জিলিং লোকসভা আসনের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের ৬ টিতেই জিতেছে বিজেপি। একমাত্র চোপড়া বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল বিজেপিকে পিছনে ফেলতে পেরেছে। এখানে তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার ভোটে।
মোর্চার একাংশ তৃণমূলের সঙ্গে এলেও ভোটের ফলে প্রমাণ হয়েছে, বিমল গুরুংয়ের গোষ্ঠীর প্রভাব অনেক বেশি। বিজেপির এই বিপুল জয়ের পিছনেও সেই প্রভাবই কাজ করেছে বলে নিশ্চিত তৃণমূল। ফলে বিজেপির জয়ে বিমলগোষ্ঠী নতুন করে অক্সিজেন পেতে পারেও বলেও আলোচনা হয়েছে শাসক শিবিরে।
পাহাড়ের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ রাখতে যে তিনটি আসনে তৃণমূলের আরও এগোনর প্রয়োজন ছিল সেখানে তা হয়নি। ফলে সেখানে বিনয় তামাংরা ঠিক কতটা বদল করতে পারবেন, তা নিয়েও নিশ্চিত হতে পারছেন না শাসক শিবির।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।