রেলে বঞ্চনা নিয়ে আজ সরব হবে তৃণমূল

বিজেপি বলছে, ঢেলে দেওয়া হয়েছে বাংলাকে। অর্থপ্রাপ্তির নিরিখে সর্বাগ্রে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। সেই দাবি মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। এই প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির খতিয়ান নিয়ে আগামিকাল সংসদে রেল বাজেট বিতর্কে সরব হতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩৯
Share:

বিজেপি বলছে, ঢেলে দেওয়া হয়েছে বাংলাকে। অর্থপ্রাপ্তির নিরিখে সর্বাগ্রে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। সেই দাবি মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। এই প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির খতিয়ান নিয়ে আগামিকাল সংসদে রেল বাজেট বিতর্কে সরব হতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।

Advertisement

গত শুক্রবারই লোকসভায় রেল বাজেট বিতর্কের সূচনায় রাজ্যের প্রকল্পগুলির প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছিলেন প্রাক্তন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। তৃণমূল সূত্রের খবর, তাদের হয়ে রেল বাজেট বিতর্কে বলবেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী এবং শুভেন্দু অধিকারী। এক সময়ে বাজেটে ভাড়া বাড়িয়ে দলনেত্রীর বিরাগভাজন হয়ে রেলমন্ত্রীর পদ খুইয়েছিলেন দীনেশ। ব্যারাকপুরের ওই সাংসদকেই এ বার বাজেটের ঠিক আগে রেলভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। অন্য দিকে বাংলার একাধিক বড় রেল প্রকল্পে অর্থ দেওয়ার যে দাবি বিজেপি শিবির করছে, লোকসভায় তার সমালোচনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শুভেন্দুকে। রাজ্যসভায় ওই দায়িত্বে থাকবেন ডেরেক ও’ব্রায়েন।

ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে তৃণমূল বিরোধিতা করবে, সেটাই স্বাভাবিক। কারণ সেটিই দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু অধীরবাবু নিজে মন্ত্রী থাকার সময়েও এক বার ভাড়া বেড়েছিল। এ বার প্রায় ১৪ শতাংশ হারে ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে তিনিও সরব। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির মতে, স্লিপার বা সাধারণ শ্রেণিতে যাতায়াত করা মানুষদের উপরে ‘অহেতুক’ বোঝা চাপানো হয়েছে। সব শ্রেণিতে এ ভাবে বৃদ্ধি মেনে নেওয়া যায় না।

Advertisement

ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকল্পের দিক থেকেও চলতি বাজেটে বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ অধীরবাবু। মন্ত্রী থাকাকালীন হাওড়া ও শিয়ালদহ লাইনে নিত্যযাত্রীদের সমস্যার সুরাহা করতে তৎপর ছিলেন তিনি। ওই দুই শাখায় লাইনের সংখ্যা বাড়িয়ে ট্রেন চলাচল নিয়মিত করার বিষয়টিতে বিশেষ জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু শিয়ালদহ (মেন, উত্তর ও দক্ষিণ) ও হাওড়া (মেন ও কর্ড) শাখার পরিকাঠামো উন্নয়নে যখন যথাক্রমে প্রায় ৭৭ কোটি ও ২৬ কোটি টাকা প্রয়োজন, তখন চলতি বাজেটে ওই দুই খাতে এক কোটি টাকা করে মোট দু’কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। নতুন প্রকল্পও পায়নি পশ্চিমবঙ্গ। অধীরবাবুর কথায়, “রেল বাজেট আমদাবাদ থেকে শুরু হয়েছে। তারপর নাগপুর হয়ে কর্নাটকে এসে থেমে গিয়েছে। বাকি দেশ বঞ্চিত।”

অধীরবাবুর মতোই এক দিকে ভাড়া বৃদ্ধি অন্য দিকে রাজ্যের মেট্রো প্রকল্পগুলি ও রেল কারখানাগুলির জন্য যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ না হওয়ার যুক্তিতে সরব হতে চলেছেন তৃণমূল সাংসদরা। দলের বক্তব্য, মমতার ঘোষণা করা চারটি মেট্রো প্রকল্প শেষ করতে দরকার মোট ১১ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। অথচ, সদানন্দ গৌড়ার বাজেটে সেই খাতে মাত্র ৫৩৮ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে। তৃণমূলের এক সাংসদের কথায়, “এ তো মরুভূমিতে এক বিন্দু জল!” পাল্টা যুক্তিতে বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র বক্তব্য, সব ক’টি মেট্রো প্রকল্প জমি জটে আটকে রয়েছে। জমি জট না কাটলে শুধু অর্থ বরাদ্দ করে লাভ কী!” বস্তুত, খোদ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও বাজেটের পর বলেছিলেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি দিলেই কেন্দ্র বরাদ্দ বাড়াবে। বর্তমানে জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রোর কাজ অর্থ মন্ত্রক ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ছাড়পত্র না পাওয়ায় থমকে রয়েছে। ওই ছাড়পত্র দিতে গড়িমসির কারণ জানতে চাওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে তৃণমূল শিবিরের।

চারটি মেট্রো প্রকল্প ছাড়াও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ১৬টি রেল কারখানার ঘোষণা করেছিলেন। এর মধ্যে কাঁচরাপাড়া রেল কারখানার জন্য বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৪০ লক্ষ টাকা। দরকার এখনও ৭৩৯ কোটি। আদ্রা কোচ কারখানা ও খড়্গপুর ওয়াগন কারখানার জন্য ঘোষণা করা হয়েছে এক হাজার টাকা করে (হ্যাঁ, এক হাজার টাকা করেই)! অথচ, দু’টি কারখানা নির্মাণের কাজ শেষ করার জন্য প্রয়োজন যথাক্রমে ১৭৬ কোটি ও ১০০ কোটি টাকা। যা দেখে তৃণমূল সাংসদ ডেরেকের বক্তব্য, “বিজেপির দাবি, প্রাপ্তির তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ নাকি প্রথম! এটা হাস্যকর। প্রকল্প-পিছু কত অর্থ দরকার, আর কত বরাদ্দ করা হয়েছে সেই তুলনা টানলেই বিজেপির চালাকি স্পষ্ট হয়ে যায়।”

এ ছাড়া মালদহে নার্সিং কলেজ, বেলুড়ে হাসপাতাল, টিকিয়াপাড়ার কোচ ইয়াডের পুনর্গঠন, সোনারপুর কারশেড নির্মাণের মতো একাধিক প্রকল্পে কেন এক পয়সাও বরাদ্দ হয়নি, সরকারের কাছে সেই জবাবও চাইতে মুখিয়ে রয়েছে তৃণমূল। তবে অফিসারদের একাংশের যুক্তি, রেলের আর্থিক স্বাস্থ্যের প্রেক্ষিতে সব প্রকল্পে উদারহস্ত হওয়া সম্ভব ছিল না। বস্তুত, অতীতে লাগাতার পরিকল্পনাহীন প্রকল্প ঘোষণার জন্যই এই রেল বাজেটে বাংলার প্রাপ্তি কম হল কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন অনেকে। ক্ষুব্ধ মমতা বলেছিলেন, “ভিক্ষা চাই না।” সংসদে তাঁর দল কী ভাবে সুর চড়ায়, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন