Sovan Chatterjee

শোভন-বৈশাখী নিয়ে রত্নাকে আপাতত নীরবই থাকতে নির্দেশ তৃণমূলের

শোভন-বৈশাখীর মিছিল বিভ্রাটের পর বিজেপি শিবিরে তৈরি হওয়া অস্বস্তি প্রসঙ্গেও তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ব মৌনতাই অবলম্বন করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:০৪
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

শোভন-বৈশাখী প্রসঙ্গে রত্না চট্টোপাধ্যায়কে আপাতত নীরব থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ব। সেই নির্দেশ নিয়ে দলের অন্দরে জল্পনা শুরু হয়েছে। যে জল্পনা বলছে, বিজেপি-র সঙ্গে এখনও ‘সুরে সুর’ না-মেলায় শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে আগ বাড়িয়ে ‘উত্ত্যক্ত’ করতে চাইছে না তৃণমূল। যদি ভোটের আগে সমীকরণ বদলায়!

Advertisement

বিজেপি অবশ্য তাদের মতো করে শোভন-বৈশাখী জুটির সঙ্গে ‘শান্তি-স্বস্ত্যয়নে’ নেমেছে। আপাতত বরফ গলেছে বলেই তাদের দাবি। বৈশাখীও বাইক র‌্যালিতে না যাওয়ায় প্রকাশ্যেই ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন। কিন্তু এই জুটির সঙ্গে বিজেপি-র সম্পর্কের ক্রমাগত ওঠাপড়ার যে ইতিহাস, তা নজরে রেখেই রত্নাকে আপাতত মুখে কুলুপ এঁটে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি ভোটের আগে সমীকরণ বদলায়!

দীর্ঘ বিরতির পর সোমবার বিজেপি-র রোড-শো করার কথা ছিল কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ও তাঁর বান্ধবীর। পুত্র-কন্যাকে নিয়ে আপাতত অমরকন্টক বেড়াতে গিয়েছেন রত্না। শোভন-বৈশাখীর ওই কর্মসূচির কথা জানামাত্রই প্রতিক্রিয়ায় শোভন-জায়া রত্না কটাক্ষ করেছিলেন তাঁদের। আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই। যখন ফ্ল্যাট থেকে নেমে বিজেপি-র কর্মসূচিতে যোগ দিতে গাড়িতে উঠবেন, তখন বুঝতে পারব উনি শুরু করলেন। অনেক নাটক তো এর আগে দেখেছি! এই হল না ওই হল,পদ দিল না। আমাকে দিল, বৈশাখীকে দিল না। এভাবেই তো দেড়-দু’বছর কেটে গেল।’’ পাশাপাশিই রত্না আরও বলেছিলেন, ‘‘ওঁকে র‌্যালি নিয়ে বেহালায় আসতে অনুরোধ করুন। বেহালায় এলে ওঁকে আমরা স্বাগত জানাতে পারতাম।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: শোভন-বৈশাখী নাট্যে যবনিকা চেয়ে দৌত্য বিজেপি-র, প্রথমাঙ্ক সমাপ্ত ডাল-ভাতে

আরও পড়ুন: বেইমান কে: সরব বৈশালী

শেষ পর্যন্ত রত্নার ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি করে মিছিলে যোগ দেননি শোভন-বৈশাখী। যা নিয়ে চরম অস্বস্তিতে পড়েছিল বিজেপি। সূত্রের খবর, তার পরেই তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ব অমরকণ্টকে রত্নার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়, শোভন-বৈশাখী প্রসঙ্গে আপাতত সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলা যাবে না। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, তার পর থেকেই সংবাদমাধ্যমের কাছে অধরা হয়ে গিয়েছেন রত্না। আনন্দবাজার ডিজিটালের ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ দেখেছেন। কিন্তু উত্তর দেননি।

এর পরেই তৃণমূলে জল্পনা তীব্রতর হয়েছে। কারণ, শোভন-বৈশাখী পর্বে যে কোনও লড়াইয়ে রত্নার পাশেই থেকেছে দল। শোভন দল ছাড়ার পর থেকেই রত্নাকেই তাঁর যাবতীয় দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। শোভনের ছেড়ে-যাওয়া ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বও আপাতত রত্নার হাতেই। কিন্তু রত্না যখন শোভন-বৈশাখীর বিজেপি-র হয়ে রাজনীতির ময়দানে সরাসরি নামার বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, তখন তাঁকে মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলের তরফে।

প্রসঙ্গত, মিছিলে না এলেও মঙ্গলবার রাতে শোভন-বৈশাখী সার্দান অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন বলে খবর। পাশাপাশিই, শোভন যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন আরও অনেকের সঙ্গে। তৃণমূলের অন্দরে একাংশের ধারনা, রত্না শোভন-বৈশাখীকে নিয়ে এখন কোনও মন্তব্য করলে শোভন আরও ‘সক্রিয়’ হয়ে উঠতে পারেন। সে কারণেই শোভন-জায়াকে নীরব থাকতে বলা হয়েছে। ঘটনাচক্রে, শোভন-বৈশাখীর মিছিল বিভ্রাটের পর বিজেপি শিবিরে তৈরি হওয়া অস্বস্তি প্রসঙ্গেও তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ব মৌনতাই অবলম্বন করেছেন। কিছু না বলে অনেক কিছু বলার কৌশল রাজনীতিতে চিরকালীন। তৃণমূলের একাংশের ধারণা, শোভন সম্পর্কে নীরব থেকে এবং বিভিন্ন মহলকে নীরব রেখে দল আপাতত তাঁকে সেই ‘বার্তা’ই দিতে চাইছে। আপাতত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন