ডায়মন্ড হারবার

পড়াশোনা শুরুর আগেই ঘেরাও, বিস্মিত উপাচার্য

যাদের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশি “প্রাণশক্তি, উদ্দীপনা এবং উচ্ছ্বলতা” দেখেন, সেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) অন্য চেহারা ধরা পড়ল এক উপাচার্যের চোখে। শুক্রবার সদ্য গঠিত ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শমিতা সেনের বিস্ময়, “পড়ুয়ারা এখনও এল না। পড়াশোনা শুরু হল না। অথচ, আমি ঘেরাও হয়ে গেলাম!”

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩২
Share:

যাদের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশি “প্রাণশক্তি, উদ্দীপনা এবং উচ্ছ্বলতা” দেখেন, সেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) অন্য চেহারা ধরা পড়ল এক উপাচার্যের চোখে। শুক্রবার সদ্য গঠিত ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শমিতা সেনের বিস্ময়, “পড়ুয়ারা এখনও এল না। পড়াশোনা শুরু হল না। অথচ, আমি ঘেরাও হয়ে গেলাম!”

Advertisement

শমিতাদেবী জানান, এ দিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় ঘণ্টা দেড়েক তাঁর ঘরের দরজা আটকে দাঁড়িয়েছিলেন টিএমসিপি-র সদস্যেরা। করা হয় বিস্তর চেঁচামেচি। শেষ পর্যন্ত উপাচার্য টিএমসিপি-র দাবি রাজ্য সরকারকে জানানোর প্রতিশ্রুতি দিলে ঘেরাও ওঠে। টিএমসিপি অবশ্য দাবি করেছে ঘেরাও করা হয়নি উপাচার্যকে। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার কথায়, “আমাদের প্রতিনিধিরা উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন। তার মানে ঘেরাও নয়।”

অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার ছাত্র পরিষদের সঙ্গে সংঘর্ষের পরে, শুক্রবার মেদিনীপুর কমার্স কলেজে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। কলেজের টিচার ইনচার্জ বিবেকানন্দ দাসমহাপাত্র বলেন, “গোলমালের জেরে কলেজ আপাতত বন্ধ থাকবে।”

Advertisement

পড়াশোনা শুরু না হলেও ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কাজ চলছে জোরকদমে। শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে। ৫ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার কথা। নিজস্ব ক্যাম্পাস তৈরি না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম আপাতত চলছে ডায়মন্ড হারবার ফকিরচাঁদ কলেজ ক্যাম্পাস থেকে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, শুক্রবার বেলা আড়াইটে নাগাদ উপাচার্য শমিতা সেনের ঘরের সামনে হাজির হন টিএমসিপি-র বেশ কিছু নেতা-কর্মী। নেতৃত্বে ছিলেন ফকিরচাঁদ কলেজের টিএমসিপি নেতা অমিত সাহা, যাঁর বিরুদ্ধে ক’দিন আগেই গণ সংগঠন ‘আমরা আক্রান্ত’-র সভায় হামলার অভিযোগ উঠেছিল। ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা টিএমসিপি-র সাধারণ সম্পাদক মিলন হালদারও।

ওই টিএমসিপি নেতা-কর্মীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিলে অন্তত এক জন স্থানীয় প্রতিনিধিকে সামিল করতে হবে। কমিটির এক সদস্যের বিরুদ্ধে নানা আপত্তি তুলে তাঁকে কাউন্সিল থেকে সরানোর দাবিও তোলা হয়। উপাচার্য তাঁদের জানান, কাউন্সিল গঠন বা পরিবর্তনের বিষয়টি তাঁর এক্তিয়ারভুক্ত নয়। ছাত্রদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন তিনি। স্মারকলিপি দেন আন্দোলনকারীরা। বিকেল ৪টে নাগাদ বিক্ষোভ থামে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রায় প্রতিদিন নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখতে রাজ্যবাসী অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল ওঠে টিএমসিপি-র দিকে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রাজ্যের নতুন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা বজায় রাখায় জোর দিয়ে আসছেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ও টিএমসিপি-কে সংযত হওয়ার বার্তা দিয়েছেন। অথচ, দলের ছাত্র সংগঠনের বাৎসরিক সমাবেশে খোদ তৃণমূল নেত্রী ছাত্র নেতৃত্বকে সংযত হতে না বলায় টিএমসিপি এ বার কী করবে তা নিয়ে সংশয় ছিল। এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাস বলেন, “শুক্রবারের পরে আমরা নিশ্চিত, এ বার টিএমসিপি-র গুন্ডামি আরও বাড়বে।” সহমত ছাত্র পরিষদের (সিপি) রাজ্য সভাপতি আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়ও।

মেদিনীপুরের কলেজটির ছাত্র সংসদে ক্ষমতায় রয়েছে সিপি। বৃহস্পতিবার সিপি-টিএমসিপি দু’টি সংগঠনেরই প্রতিষ্ঠা দিবস ছিল। তাই পতাকা তোলা নিয়ে দুই সংগঠনের সদস্যরা হাতাহাতিতে জড়ান। শুক্রবার ফের দু’পক্ষের গোলমাল বাধে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন