ডেবরায় টিএমসিপি-র সভায় অশোক রুদ্র।—নিজস্ব চিত্র।
তদন্ত শেষের আগেই সংগঠনের ধৃত কর্মীদের ‘ক্লিনচিট’ দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার। পাল্টা প্রশংসা ফিরিয়ে দিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-ও।
সোমবার সংগঠনের এক সভায় টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরির মন্তব্য, “আমরা ধন্যবাদ জানাই পুলিশ- প্রশাসনকে। তারা সত্যিটা প্রকাশ করে দিয়েছেন। ভিডিও ফুটেজ থেকে আসল ঘটনা পশ্চিমবাংলার মানুষ জেনে গিয়েছে। দু’ঘন্টার ফুটেজ আছে। আরও যত দিন যাবে, আরও সত্য প্রকাশ হবে!” তাঁর দাবি, “আমাদের ওখানে ১০ জন কর্মী আছে। সকলেই আক্রান্ত! আমার তিনটে ভাই গ্রেফতার হয়ে গিয়েছে। আমার ভাইয়েরা নির্দোষ প্রমাণিত হোক। ওদের শাস্তি হবে না। এটা প্রমাণিত! টিএমসিপির কোনও কর্মী এই কাজ করতে পারে না!” যা শুনে ছাত্র পরিষদের রাজ্য সহ- সভাপতি মহম্মদ সইফুলের কটাক্ষ, “দিদির গুনগান ভাইয়েরা করবে, এ আর নতুন কি!”
এ দিন ডেবরার এক গেস্ট হাউসে টিএমসিপি-র এক সভা হয়। সাংগঠনিক সভা। উপস্থিত ছিলেন টিএমসিপির রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র, সংগঠনের জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি, তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় প্রমুখ। মূলত, ২৮ অগস্টের কলকাতার সভার প্রস্তুতি হিসেবেই এই সভা ডাকা হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন টিএমসিপি-র বিভিন্ন কলেজের ইউনিট সভাপতিরা। ছিলেন সংগঠন পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকেরা। গত শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ দাবি করেছিলেন, ‘যে ছ’জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তাঁদের সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়নি। ওই ছ’জনকে লাঠি হাতে দেখা যায়নি। একদমই দেখা যায়নি। যারা গ্রেফতার হয়েছে, তাদেরও দেখা যায়নি।” পুলিশ সুপারের এও মত ছিল, প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের মনে হয়েছে, যে তিনজন গ্রেফতার হয়েছে, সেই তিনজন ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়। এখানেই বৈপরীত্য খুঁজে পেয়েছিলেন বিরোধীরা।
প্রশ্ন ওঠে, যদি যুক্তই না- হয় তাহলে পুলিশ গ্রেফতার করল কেন? কেনই বা তদন্তের প্রয়োজনে নিজেদের হেফাজতে নিল? তাহলে কি ধরে নিতে হবে সবং থানার পুলিশ ঠিক কাজ করেনি? কারণ, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা যাচাই করেই তো পুলিশ গ্রেফতার করে। তার আগে নয়। পুলিশ সুপার এ- ও জানিয়েছিলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজ বদলায় না। এটা তৈরি করা যায় না। এটা বুঝতে হবে! এটা স্পর্শকাতর ঘটনা। তদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটন করাটা পুলিশের কাজ। সাধারণ মানুষের জানার অধিকার আছে ঠিক কি হয়েছে।’ আরও জানিয়েছিলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজে যাদের দেখা যায়নি, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ না- করে, যাদের দেখা গিয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করাটা জরুরি।’ সভায় টিএমসিপির রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রও বলেন, “ছাত্রগত ভাবে আমাদের বিরোধী রাজ্যে প্রায় শূন্য। এ জেলার দু’টো কলেজ গা- জোয়ারি করে দখল করে রাখা হয়েছে। ওখানে (সবং) আমরা ঢুকতে পারি না। গুণ্ডামি- মস্তানি হয়। কলেজের উন্নয়নের জন্য আমাদের ছেলেরা বুক চিতিয়ে গিয়েছিল। আমাদের ছেলেরা উন্নয়নের জন্য গেলে সেখানে আপত্তির কিছু নেই।”
তাঁর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গে ছিলেন। এসেই বলেছেন, মর্মান্তিক ঘটনা। তদন্ত চলছে। প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পাবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের সর্বোচ্চ নেত্রী। দলের মা যেখানে বলে দিয়েছেন, সেখানে এর উপরে আর কোনও কথা হয় না!” মৃত ছাত্রের পরিচয় নিয়ে দাবি- পাল্টা দাবি চলছে দাবি করে অশোক বলেন, “ছাত্রের প্রথম পরিচয় সে ছাত্র। এরপর মতাদর্শ। প্রকৃত ভাবে যারা ছাত্রের পাশে দাঁড়ায়, তারা এই ভেদাভেদ করে না। বলা হচ্ছে, আমাদের ছেলেরা আঘাত করেছে। এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। তদন্ত চলছে। তদন্তে প্রকৃত দোষী শাস্তি পাবে।” পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, “দলনেত্রীর পথ থেকে বিচ্যুতি ঘটলে তার টিএমসিপিতে ঠাঁই নেই। এটা সব কর্মী জানে। আমিও জানি! আমরা শৃঙ্খলাপরায়ণ ভাবে চলি। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জেলার একজন বিধায়কও যেন অন্য দল থেকে না- যায়, তার জন্য ছাত্রসমাজকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে!” সবং কলেজের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের চরম শাস্তির দাবিতে আগামী ১৭ অগস্ট সবংয়ে তৃণমূলের সভা হবে বলেও জানিয়ে দেন নেতৃত্ব। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “মানুষ যা জানার ভিডিও ফুটেজ থেকে জেনে গিয়েছে। ইউনিয়ন রুমে লাঠি- বোমা ছিল! তুমি (মানস ভুঁইয়া) সিপিএমকে চমকাতে পারো। তৃণমূলকে পারবে না!”