সস্তায় বিদ্যুৎ কিনে রাজ্যের চাহিদা মেটাচ্ছে বণ্টন সংস্থা

জাতীয় বাজার থেকে সস্তায় বিদ্যুৎ কিনে নিজেদের চাহিদা মেটাল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। তাদের দাবি, এতে যেমন ঘাটতি মেটানো গিয়েছে, তেমনই গ্রাহকদের বিদ্যুৎ মাসুলও নিয়ন্ত্রণে রাখা গিয়েছে।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ১৮:৩৬
Share:

জাতীয় বাজার থেকে সস্তায় বিদ্যুৎ কিনে নিজেদের চাহিদা মেটাল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। তাদের দাবি, এতে যেমন ঘাটতি মেটানো গিয়েছে, তেমনই গ্রাহকদের বিদ্যুৎ মাসুলও নিয়ন্ত্রণে রাখা গিয়েছে।

Advertisement

দেশের বাজারে এখন ইউনিট পিছু গড়ে ৩ টাকা ২৫ পয়সা দরে অঢেল বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এর সুযোগ নিচ্ছে অনেক রাজ্যই। বণ্টন সংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘বাজার (জাতীয় গ্রিড) থেকে বিদ্যুৎ কিনে চাহিদা মেটাতে পারলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির উপর কম চাপ পড়ে। কয়লাও কম কিনতে হয়। সব মিলিয়ে লাভই হয়।’’

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘গত কয়েক মাস ধরেই বাজারে বিদ্যুতের দাম যথেষ্ট কম। যে কারণে আমাদের বিদ্যুতের প্রয়োজন হলে বাজার থেকে কিনে নিচ্ছি। এতে টাকার সাশ্রয় হচ্ছে।’’ তিনি জানান, বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হলে গ্রাহকদের মাসুলে তার প্রভাব পড়ত।

Advertisement

তবে সব সময় এই সুযোগ আসে না বলে জানান বিদ্যুৎকর্তারা। কী রকম? তাঁদের ব্যাখ্যা, স্বল্পমেয়াদি সময়ের জন্য বিদ্যুৎ কিনলে চড়া দাম দিতে হয়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এর সুফল মেলে। তাঁরা জানান, দেশের বিদ্যুৎ শিল্পে এখন চরম আর্থিক অনটন চলছে। কয়েক লক্ষ কোটি টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ধুঁকছে দেশের একাধিক বণ্টন সংস্থা। অনেকেই নগদ টাকায় বিদ্যুৎ কিনতে পারছে না। তাই গ্রিডের বিদ্যুতের দামও অনেকটাই সস্তা মিলছে। কিন্তু যাদের হাতে নগদ টাকা রয়েছে, তারা এর সুযোগ নিয়ে সস্তার বিদ্যুৎ কিনছে। যেমন কিনেছে এ রাজ্যের বণ্টন সংস্থা।

বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের চাহিদা মেটাতে প্রতি দিন ৯ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ লাগে। এর মধ্যে বণ্টন সংস্থাকে অর্ধেক বিদ্যুৎ দিচ্ছে উন্নয়ন নিগম। বাকি বিদ্যুৎ এনটিপিসি এবং এনএইচপিসি-র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দিচ্ছে। এক কোটি ইউনিটের মতো বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে বাজার থেকে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের খনিগুলির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লার টানাটানি চলছে। মূলত কোল ইন্ডিয়ার কয়লার উপরেই নিগমকে নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে। ফলে এ বার গ্রীষ্মে নিগমের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। উৎসব মরসুম কাটিয়ে এখন শীত চলে আসায় রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা তুলনামূলক কম। যার ফলে আরও কিছুটা চাপ কমেছে নিগমের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে। যদিও নিগম কর্তৃপক্ষের দাবি, কয়লার কোনও সঙ্কট নেই। যথেষ্ট পরিমাণ কয়লা মজুত রয়েছে। কিন্তু গত কয়েক মাসে নিগমের বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, এই দাবি ঠিক নয়। সূত্রের খবর, নিগম এখন বণ্টন সংস্থাকে প্রতি দিন গড়ে চার কোটি ৬০ লক্ষ ইউনিট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। কিন্তু অন্যান্য সময় তারা দিয়েছে গড়ে ৬ কোটি ৫০ লক্ষ ইউনিট। মূলত কয়লার সঙ্কটের কারণেই বিদ্যুৎ সরবরাহ কমেছে বলেই সূত্রটি জানাচ্ছে।

বণ্টন সংস্থার কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, গত এক-দেড় বছর ধরেই জাতীয় বাজারে বিদ্যুতের দাম ক্রমশ কমছে। ফলে সঙ্কটের সময়ে তাঁরা পার পেয়ে যাচ্ছেন। বাজার থেকে সস্তার বিদ্যুৎ কিনে চাহিদা মেটাতে পারছেন। আগমী মার্চ মাস পর্যন্ত কোথা থেকে কত বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকদের চাহিদা মেটানো হবে তার পরিকল্পনা করে চুক্তিও সেরে ফেলা হয়েছে বলে ওই কর্তাদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন