মুখ্যমন্ত্রীর সফরের জন্য ঘুরপথে চালাতে বলায় বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত

মুখ্যমন্ত্রীর সফরের জন্য ঘুরপথে বাস চালাতে বলেছে প্রশাসন। কিন্তু সে ভাবে বাস চালাতে গিয়ে নানা ঝক্কির কথা ভেবে আজ, মঙ্গলবার বালুরঘাট-রায়গঞ্জ রুটে বাস চালাবেন না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাস-মালিকেরা। সব ঠিক থাকলে আজ, মঙ্গলবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রায়গঞ্জে বৈঠক করে সড়কপথে যাবেন গঙ্গারামপুর। সেখানে দুপুরে প্রশাসনিক বৈঠক এবং জনসভা করার কথা তাঁর।

Advertisement

অনুপরতন মোহান্ত ও গৌর আচার্য

বালুরঘাট ও রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৪৭
Share:

মুখ্যমন্ত্রীর সফরের জন্য ঘুরপথে বাস চালাতে বলেছে প্রশাসন। কিন্তু সে ভাবে বাস চালাতে গিয়ে নানা ঝক্কির কথা ভেবে আজ, মঙ্গলবার বালুরঘাট-রায়গঞ্জ রুটে বাস চালাবেন না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাস-মালিকেরা।

Advertisement

সব ঠিক থাকলে আজ, মঙ্গলবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রায়গঞ্জে বৈঠক করে সড়কপথে যাবেন গঙ্গারামপুর। সেখানে দুপুরে প্রশাসনিক বৈঠক এবং জনসভা করার কথা তাঁর। তাঁর সফরের দিন বালুরঘাট-রায়গঞ্জ ভায়া গঙ্গারামপুর রুটে সরকারি ও বেসরকারি বাস চালানো বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। তবে তার বদলে মালদহের গাজল হয়ে বাস চালাতে বলা হয়েছে। রায়গঞ্জের বাস মালিকদের সংগঠনের জেলা সম্পাদক প্লাবন প্রামাণিক বলেন, “ঘুরপথে বাস চালালে একাধিক সমস্যা হতে পারে। তাই মঙ্গলবার রায়গঞ্জ-বালুরঘাট রুটের সমস্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।”

উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর হয়ে জেলা সদর বালুরঘাটের দুরত্ব ১১০ কিলোমিটার। প্রতিদিন রায়গঞ্জ-বালুরঘাট রুটে (ভায়া গঙ্গারামপুর) ২৫টি বাস যাতায়াত করে। অন্তত ১২ হাজার যাত্রী চলাচল করেন। যাতায়াতের পথে বাসগুলি কর্ণজোড়া, হেমতাবাদ, কালিয়াগঞ্জ, কুশুমণ্ডি, গঙ্গারামপুর, রামপুর, পতিরাম ও ফুলবাড়িতে থামে। এ দিন সকালে বাস-মালিকদের সংগঠনগুলি বাস চলাচল নিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরীর একটি নির্দেশ পায়। নির্দেশ অনুযায়ী, বালুরঘাট-রায়গঞ্জ রুটের বাসগুলিকে মঙ্গলবার গঙ্গারামপুরের পরিবর্তে গাজল হয়ে চালাতে হবে। সরকারি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সফরের জন্য নিরাপত্তারক্ষীদের থাকার ব্যবস্থা করতে গঙ্গারামপুরের একাধিক স্কুলও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন জেলাশাসক।

Advertisement

ঘুরপথে বাস চালানোর সরকারি নির্দেশ পেয়েই রায়গঞ্জে পুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন বাস-মালিক সংগঠনের সদস্যরা। তাঁদের আলোচনায় উঠে আসে ঘুরপথে বাস চালানো হলে সম্ভাব্য সমস্যার কথা। যেমন১) গাজল হয়ে বাস চালালে ৫০ কিলোমিটারের মতো বাড়তি পথ পেরোতে হবে। অতিরিক্ত ডিজেল পুড়বে। কিন্তু রায়গঞ্জ থেকে বালুরঘাট যাওয়ার জন্য যাত্রীদের থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া যাবে না। একেই রাজ্য সরকার বাসভাড়া বাড়াতে না দেওয়ায় এবং ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাস-মালিকদের লাভ প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। সে ক্ষেত্রে এই ক্ষতি বরদাস্ত করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। ২) নির্ধারিত রুটের বাইরে চালানোর ছাড়পত্র না থাকায় কোনও ভাবে দুর্ঘটনা ঘটলে বিমার সুবিধা পাওয়া যাবে না। ৩) গাজল রুটে নিয়মিত চলাচলকারী বাসের সঙ্গে রেষারেষির জন্য গোলমাল হতে পারে। ৪) গাজল হয়ে চলাচল করতে গেলে রায়গঞ্জ, তপন ও বালুরঘাট ছাড়া এই রুটের অন্য জায়গার নিয়মিত যাত্রীদের বাসে তোলা যাবে না। ফলে, যাত্রীসংখ্যা নিয়েও সন্দেহ থাকছে।

এই সব বিষয় নিয়ে আলোচনার পরেই মঙ্গলবার বাস চালানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান মালিকপক্ষ। বালুরঘাট বাস-মালিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি অশোক চৌধুরীর সংযোজন, “গঙ্গারামপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি অনুষ্ঠান ও প্রশাসনিক সভার জন্য প্রায় সমস্ত বাস তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে, ঘুরপথে যাওয়ার মতো বাস-ই অবশিষ্ট নেই।”

লাগোয়া দুই জেলার সদর শহরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী এই রুটের বাস চলাচল বন্ধ থাকলে যাত্রীদের ভোগান্তি হবে বলে মেনে নিয়েছেন বাস-মালিকেরা। তবে তাঁদের বক্তব্য, “আমরাও নিরুপায়।”

রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সির টিপ্পনী, “প্রধানমন্ত্রী কোথাও গেলে, নিরাপত্তার খাতিরে সাময়িক ভাবে সেখানে যান চলাচল বন্ধ রাখা হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য গোটা দিন একটা রুটের বাস বন্ধ থাকলে কত মানুষের কত দুর্ভোগ হবে সে কথা কি মা-মাটি-মানুষের সরকার ভাবছে!” তৃণমূলের উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি তথা ইটাহারের বিধায়ক অমল আচার্য বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন যা ভাল বুঝেছে, করেছে।”

দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী এবং পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝরিয়া এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। তবে উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক স্মিতা পান্ডের দাবি, “সরকারি নির্দেশ মেনে ঘুরপথে চালাতে গিয়ে বাস-মালিকদের সমস্যা হলে প্রশাসন দেখবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন