পাক খাওয়া ধোঁয়ার মতো ধেয়ে এল ঝড়

মাত্র ৪০ সেকেন্ড। তাতেই বদলে গেল হাবরা-অশোকনগরের চেহারা। আর পাঁচটা বর্ষার দিনের টিপটিপ বৃষ্টি ছিল সকালে। হঠাৎ কালো হয়ে এল, শুরু হল শোঁ শোঁ শব্দ। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আকাশটা হয়ে গেল টকটকে লাল। বাসিন্দারা দেখলেন, কালো ধোঁয়ার মতো কিছু একটা ঘুরতে ঘুরতে ধেয়ে আসছে।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও সীমান্ত মৈত্র

কলকাতা ও বনগাঁ শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ০৪:২৯
Share:

মাত্র ৪০ সেকেন্ড। তাতেই বদলে গেল হাবরা-অশোকনগরের চেহারা।

Advertisement

আর পাঁচটা বর্ষার দিনের টিপটিপ বৃষ্টি ছিল সকালে। হঠাৎ কালো হয়ে এল, শুরু হল শোঁ শোঁ শব্দ। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আকাশটা হয়ে গেল টকটকে লাল। বাসিন্দারা দেখলেন, কালো ধোঁয়ার মতো কিছু একটা ঘুরতে ঘুরতে ধেয়ে আসছে। টিনের চাল, বড় বড় গাছ শনশন করে উড়ছে হাওয়ায়। সবাই দিশাহারা, প্রাণ বাঁচাতে ঘরের ভিতরে ঢুকবেন, না ছুটে গিয়ে দাঁড়াবেন বাইরে?

আধ-মিনিটের ঝড়ের পর দেখা গেল, কেউ যেন পেঁচিয়ে রাস্তা থেকে তুলে ফেলেছে নলকূপ, বিদ্যুতের খুঁটি। অসংখ্য প্রাচীন গাছ কাত হয়ে পড়ে আছে। কোনওটা উপড়ে গিয়েছে শিকড় থেকে, কোনওটাকে মাঝখান থেকে দেশলাই কাঠির মতো ভেঙে দিয়েছে ঝড়। কলাবাগান, পেঁপে খেত, সব্জি খেত শুয়ে পড়েছে। মাটিতে মিশেছে অগণিত কাঁচা বাড়ি।

Advertisement


সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

আস্ত মানুষকেও এ দিন উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে ঝড়। অশোকনগরের মোহনপুরে রশিদা বিবি সাড়ে চার বছরের মেয়েকে নিয়ে বাড়ির দাওয়ায় দাঁড়িয়েছিলেন। কী করে প্রাণ বাঁচাবেন, ভাবতে ভাবতেই ঝড় এসে মেয়ের পাশ থেকে উড়িয়ে নিয়ে যায় রশিদাকে। তার পর আর কিছু মনে নেই তাঁর। জ্ঞান ফিরতে দেখেন বাড়ি থেকে কয়েকশো মিটার দূরে ঝোপঝাড়ের মধ্যে পড়ে আছেন। গায়ে অসহ্য ব্যথা। মাঝখানের ঘটনাটার সাক্ষী প্রতিবেশী রোজিনা বিবি, রাজু মণ্ডল, সাহেনা বিবিরা। তাঁরা দেখেন, হাওয়ায় উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে রশিদাকে। তাঁরাও প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে হাওয়ার পিছু ধাওয়া করেন। কিছু দূর গিয়ে দেখেন, এক ঝাপটায় রশিদাকে মাটিতে ছুড়ে ফেলল ঝড়। তাঁরাই উদ্ধার করেন রশিদাকে।

বাড়ি চাপা পড়েও আহত হয়েছেন অনেকে। অশোকনগরের কাজলার বাসিন্দা কবিতা সরকার আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে রান্না করছিলেন। ঝড়ের ধাক্কায় টিনের চাল, বাঁশ, গাঁথনির ইট হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে মা-ছেলের গায়ে। কবিতাদেবী পরে বলেন, ‘‘ছেলেটাকে গোটা শরীর দিয়ে আগলে রেখে চিৎকার করছিলাম। ছেলেটাও তারস্বরে কাঁদছিল। কিন্তু শোনার মতো কেউ ছিল না।’’ নিজেই কোনও মতে বেরিয়ে আসেন তিনি। ছেলে অক্ষত, কবিতাদেবীকে পাঠাতে হয় হাসপাতালে। ঝড়ে জখম হয়ে ১৪ জন ভর্তি হন বারাসত জেলা হাসপাতালে। প্রাণহানির খবর নেই।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এ দিন নদিয়ার হরিণঘাটা থেকে অশোকনগর-হাবরা হয়ে ঝড় চলে গিয়েছে দেগঙ্গার দিকে। তবে ঝড়ের দাপট বাড়ে অশোকনগর-কল্যাণগড় এবং হাবরায় এসে। বুধবার সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার ১ এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তিন কিলোমিটার অংশে তাণ্ডব চালিয়ে ঝড় সরে যায় লাগোয়া হাবরা পুরসভার দিকে। সেখানেও ৫টি ওয়ার্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রচুর। চারটি ত্রাণ শিবিরে শ’দুয়েক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

কিন্তু ঝড় চলে গেলেও তার ছাপ রয়ে গিয়েছে বাসিন্দাদের চোখেমুখে। যখন দেখা যাচ্ছে লোহার নলকূপ উপড়ে গিয়ে পড়েছে প্রায় একশো মিটার দূরে, গাছের মগডাল থেকে ঝুলছে টিনের চাল, কিংবা পুকুরের পাশের মাঠে থিকথিক করছে মরা মাছের দেহ, তখন বোঝা যাচ্ছে, এ ঝড় কাটতে সময় লাগবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন