বাতিল নোট

পর্যটকদের মাথায় হাত, ঘুরতে এসে খাবেন কী?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণায় অকূল পাথারে পড়েছেন পর্যটকেরা। কলকাতা থেকে ৩৯ জন পর্যটককে নিয়ে উত্তরাখণ্ড সফরে এসে বিপদে পড়েছেন কলকাতার এক পর্যটন সংস্থার ম্যানেজার আশিস বিশ্বাস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:২৬
Share:

হাওড়া স্টেশনে এটিএম এর সামনে লম্বা লাইন। নিজস্ব চিত্র।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণায় অকূল পাথারে পড়েছেন পর্যটকেরা।

Advertisement

কলকাতা থেকে ৩৯ জন পর্যটককে নিয়ে উত্তরাখণ্ড সফরে এসে বিপদে পড়েছেন কলকাতার এক পর্যটন সংস্থার ম্যানেজার আশিস বিশ্বাস। টিভিতে মঙ্গলবার রাতে নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণা শোনার পর থেকে পর্যটকদের প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে জেরবার ওই ম্যানেজার।

কৌশানির হোটেলে এ দিন রাতে আশিসবাবুকে যখন ধরা গেল তখন তিনি হোটেল মালিকের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত। ওই হোটেলে তাঁকে দু’দিনের মোট এক লক্ষ টাকা বিল মেটাতে হবে। কিন্তু হাতে সব হাজার টাকার নোট। আশিসবাবু বলেন, ‘‘সুবিধার জন্য আমরা সাধারণত এক হাজার টাকার নোট রাখি নিজেদের কাছে। এখন কী ভাবে হোটেলের বিল মেটাব, দৈনন্দিন বাজার করব, এতগুলি লোককে কী ভাবে খাওয়াবো, বাস ভাড়াই বা কী ভাবে দেব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’’

Advertisement

আচমকা ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল হতেই আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকাতেও। উদ্বিগ্ন হয়ে অনেকেই রাস্তায় নেমে পড়েন। সকলেরই লক্ষ্য, যত দ্রুত সম্ভব এটিএমে গিয়ে কিছু ১০০ টাকার নোট সংগ্রহ করা। দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং, সিকিমে থাকা পর্যটকেরা অনেকেই বুঝতে পারছেন না কী ভাবে দু’দিন চলবে!

পর্যটন প্রসারে যুক্ত রাজ বসু হঠাৎ এই ঘোষণাকে অনভিপ্রেত বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতাল ও নানা ক্ষেত্রের টিকিট কাটায় ছাড় দিলেও কেন পর্যটকদের ছাড় দেওয়া হল না!’’ ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘একটা নোটিস দেওয়া উচিত ছিল। পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা সকালে উঠে খাবারের বিল দিতে না পারলে কী হবে! তাঁদের টাকা পাঠানোও তো যাবে না। বিদেশের পর্যটকদের কাছেই বা কী বার্তা যাবে!’’

দার্জিলিং বা বড় শহরগুলিতে অনলাইন পেমেন্টের ব্যবস্থা থাকলেও লাভা, লোলেগাঁও বা সিকিমের প্রত্যন্ত এলাকায় নেট সংযোগ নেই। বিপদ সেখানেই।

রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘বিজেপি নেতারা আগেভাগে নিজেদের কালো টাকা বদলে ফেলে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলছে।’’ পর্যটকদের ভোগান্তি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গৌতমবাবু। তিনি বলেন, ‘‘নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানোর পরেই, ব্যাঙ্ক বন্ধ করে দেওয়া হল। বাড়ি ছেড়ে যাঁরা বেড়াতে গিয়েছেন, সেই পর্যটকরা কী করবেন? তাদের অনেকে তো আটকে পড়তে পারেন। কী করা যায় দেখা হচ্ছে।’’

শিমলায় বেড়াতে গিয়েছেন যাদবপুরের তন্ময় দত্ত চৌধুরী। টিভিতে নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ তিনি শোনেননি। তবে ফোন পেয়েছেন শ্যালকের কাছ থেকে। তার পরেই সকলের ব্যাগ উপুড় করে ঢেলে দেখেছেন ১০০, ৫০, ২০ আর ১০ টাকার নোট মিলিয়ে ৬০০ টাকা রয়েছে। শিমলা কালীবাড়িতে পুজো দেওয়ার জন্য এক প্রতিবেশী ২০০ টাকা দিয়েছিলেন। সেটা ধরে সাকুল্যে ৮০০ টাকা সম্বল।

শিমলার হোটেল থেকে ফোনে অসহায় তন্ময়বাবু বলেন, ‘‘হোটেল ম্যানেজারকে আমরা হোটেল ভাড়া ক্রেডিট কার্ডে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। কিন্তু গাড়ি ভাড়া, রাস্তায় খাবার টাকা কী ভাবে মেটাব তা মাথায় ঢুকছে না।’’ রাতে হোটেল থেকে বেরিয়ে কাছের একটা এটিএম কাউন্টারে গিয়েছিলেন কলকাতার ওই ব্যবসায়ী ভিড় দেখে লাইনে দাঁড়াতে সাহস পাননি। কলকাতায় ফিরতে চাইছেন ওই পর্যটকেরা।

বারাণসীতে গিয়ে অন্য বিপদে পড়েছেন কামারহাটি বিজয় দত্ত। ঘুরতে যাওয়ার জন্য সন্ধ্যাতেই গাড়িওয়ালাকে তিন হাজার টাকা অ্যাডভান্স করেছিলেন। ছ’টা ৫০০ টাকার নোট। রাতে গাড়িওয়ালা টাকা ফেরত দিতে এসেছেন, ‘খুচরো টাকা দিন, না হলে ট্রিপ বাতিল।’

মধ্য কলকাতার এক পর্যটন সংস্থার কর্তাদের দেখা গেল রাত ১০ টায় আলো জ্বালিয়ে অফিসে বসে থাকতে। মাথায় হাত এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘টিভি-তে ওই একটা ঘোষণা সব চৌপাট করে দিল। বুধবার আমাদের চারটি দল যাবে চার জায়গায়। ম্যানেজারদের ৫০০ আর হাজার টাকার নোট দেওয়া হয়েছে। এখন কী ভাবে বুধবার আমরা রওনা হব বুঝতেই পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন