শিল্প: তালসারির সৈকতে বালির ভাস্কর্য। —নিজস্ব চিত্র।
বালুশিল্পী সুদর্শন পট্টনায়কের খ্যাতি রয়েছে দেশ-বিদেশে। পুরীর সৈকতে দেখা যায় তাঁর শিল্প নমুনা।
বালু শিল্পের দেখা মিলছে তালসারির সৈকতেও। জগন্নাথ মন্দির, দুর্গার মুখ, তাজমহল থেকে গৌতম বুদ্ধ, গণেশ ফুটে উঠছে বালির ভাস্কর্যে। এখানে শিল্পী বিশ্বজিৎ শ্যামল।
বছর কুড়ির তরুণ বিশ্বজিতের বাড়ি তালসারির সৈকত থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে, ওড়িশার বালেশ্বর জেলার ভোগরাই থানার চণ্ডীপুরে। বছর ছয়েক আগে কিশোর বয়সেই বালির কাজে হাতেখড়ি তাঁর। আর এখন বিশ্বজিতের কাছে কাজ শিখছেন বেশ কয়েকজন যুবক। বিশ্বজিতের মা সুমিত্রা শ্যামল ছেলের শিল্পকর্মে সহযোগিতা করেন।
অভাবের সঙ্গে যুঝেই এগোচ্ছেন বিশ্বজিৎ। বাবা জয়কৃষ্ণ শ্যামল মেলায় রকমারি মাছ দেখিয়ে রোজগার করতেন। পরে সৈকতে খেলনা ফেরি করতেন তিনি। একটা সময় বিশ্বজিৎও খেলনা বিক্রি করেছেন। পরে বিশ্বজিৎ বালু ভাস্কর্যের কাজ শিখে সংসারের হাল ধরেন। এখন তালসারিতে তাঁর শিল্পকর্ম দেখতে ১০ টাকার টিকিট কাটতে হয়। সেই রোজগারেই চলে সংসার। বিশ্বজিৎ জানালেন, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় এক শিক্ষক তাঁকে বালুশিল্পে উৎসাহিত করেছিলেন। পরে অনুশীলনেই এই কাজ রপ্ত করেছেন তিনি।
শুধু তালসারি নয়, বিশ্বজিতের বালুশিল্পের কথা ছড়িয়ে পড়েছে দিঘা, শঙ্করপুর ও মন্দারমণির পর্যটকদের কাছেও। অনেকে তালসারিতে আসছেন তাঁর হাতের কাজ দেখতে। বেহালা থেকে আসা পর্যটক সন্দীপ সরকার বলছিলেন, “দিঘায় এসে এই বালি ভাস্কর্যের কথা শুনেছিলাম। এখানে না এলে সত্যি এমন সুন্দর জিনিস দেখা থেকে বঞ্চিত হতাম।’’
বালুশিল্পী বিশ্বজিৎ চান দিঘায় তাঁর সৃজনকর্ম নিয়ে আসতে। শিল্পীর কথায়, “দিঘার বহু পর্যটক এত দূরে আমার হাতের কাজ দেখতে আসেন। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা পশ্চিমবঙ্গ সরকার যদি দিঘার সমুদ্র সৈকতে আমাকে জায়গা দেয়, তাহলে সেখানে স্থায়ী বালির ভাস্কর্যের শিবির করতে চাই। এতে পর্যটকরাও খুশি হবেন।’’ এ ব্যাপারে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এমন প্রস্তাব বা আবেদন আমাদের কাছে আসেনি। এলে বিবেচনা করা হবে।’’