গরম পিচের ট্যাঙ্কার উল্টে দুই শিশু-সহ মৃত ৭

গাড়ির উপরে উল্টে গেল গলানো পিচ ভর্তি একটি ট্যাঙ্কার। গাড়ির আরোহীদের বাঁচাতে জান লড়িয়ে দিল তামাম জনতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৭ ০৩:৩৫
Share:

অসহায়: উদ্ধারের চেষ্টা ব্যর্থ। বুধবার বর্ধমানের রথতলাতে। —নিজস্ব চিত্র।

গাড়ির উপরে উল্টে গেল গলানো পিচ ভর্তি একটি ট্যাঙ্কার। গাড়ির আরোহীদের বাঁচাতে জান লড়িয়ে দিল তামাম জনতা। কিন্তু বহু চেষ্টায় যত ক্ষণে সেই ট্যাঙ্কার সরানো গেল, তত ক্ষণে সাত আরোহীর কারওর দেহেই প্রাণ নেই। বুধবার ফের প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার সাক্ষী রইল দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে (এনএইচ-২)।

Advertisement

রেল রক্ষী বাহিনীর (আরপিএফ) ইনস্পেক্টর রাজন কুমার (৩৯) হাওড়ার গোলমোহর কলোনির কোয়ার্টার থেকে এ দিন সদ্য কেনা গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন বিহারের ভোজপুরে দেশের বাড়ির উদ্দেশে। গাড়িতে ছিলেন তাঁর স্ত্রী রেশমি সিংহ (৩৩), দুই মেয়ে—ঋত্বিকা (১৩), অন্বেষা (৮) ও ছেলে আরভ (৬)। সঙ্গে ছিলেন রাজনের বাবা, শেষনাথ সিংহ (৬০) ও মা নির্মলা সিংহ (৫৮)।

বর্ধমান শহরের রথতলা আন্ডারপাসের আগে সকাল ৯টা নাগাদ ঘটে দুর্ঘটনা। পুলিশকে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গাড়িটি ওভারটেক করতে গিয়ে রাস্তার ডান দিকে চলে আসে। গা ঘেঁষে ছিল ট্যাঙ্কারটি। তার চালক গাড়িটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সামনের চাকা ডিভাইডারে উঠে যেতে ট্যাঙ্কার গিয়ে পড়ে গাড়ির ঘাড়ে। আবার কিছু লোকের দাবি, একটি ট্রেলার ধাক্কা মারে ট্যাঙ্কারটিকে। চালক টাল সামলাতে না পারায় গাড়ির উপরে উল্টোয় ট্যাঙ্কার।

Advertisement

আরও পড়ুন: আঙুলও ধরেছিল ছেলেটা, পারলাম না তা-ও

ঘটনাস্থলে দেখা যায়, ট্যাঙ্কারের নীচে চেপ্টে গিয়েছে ধূসর রঙের গাড়িটি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ‘‘বাচ্চা ছেলেটা গাড়ির ভিতর থেকে ‘আঙ্কল, আঙ্কল, হেল্প মি’ বলে কাঁদছিল। কিন্তু বহু চেষ্টাতেও ওকে বার করা যায়নি। কারণ, সামান্য নড়াচড়ার চেষ্টা করলেই গলানো‌ পিচ গড়িয়ে পড়ছিল গাড়ির ভিতরে।’’ ট্যাঙ্কার সরাতে আনা চারটি ক্রেনের ‘হুক’ও গলে যায় পিচের উত্তাপে। প্রায় তিন ঘণ্টা পরে যখন ট্যাঙ্কার সরানো হয়, ততক্ষণে গাড়ির সব আরোহীই নিথর।

পুলিশ সূত্রের খবর, ট্যাঙ্কার ফেলে পালানোর আগে চালক ও খালাসির কাছ থেকে কিছু স্থানীয় বাসিন্দা জানতে পেরেছেন, নাগাল্যান্ডের গাড়িটি ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে যাচ্ছিল।

দুর্ঘটনা প্রবণতার জন্য বারবার খবর হয়েছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে। সম্প্রতি এই রাস্তায় গুড়াপে গাড়ি উল্টে মৃত্যু হয়েছে সঙ্গীতশিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের।

গলানো পিচ বোঝাই ট্যাঙ্কার কেন দিনের ব্যস্ত সময়ে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যাবে, সে প্রশ্ন তোলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের দুর্গাপুরের প্রকল্প অধিকর্তা অরিন্দম হান্ডিক বলেন, ‘‘এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে পিচের ট্যাঙ্কার যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে একটা ট্যাঙ্কারে কতটা গলানো পিচ ভরা যাবে, তা নিয়ে কিছু নির্দেশিকা রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন