প্রতীকী ছবি।
আগে লেট হতো দু’তিন ঘণ্টা। এখন সেটাই বাড়তে বাড়তে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ ঘণ্টায়। ‘রেলের গর্ব’ রাজধানী, দুরন্ত এক্সপ্রেস শুরু করে প্রায় যাবতীয় দূরপাল্লার ট্রেনেরই এই হাল। তিতিবিরক্ত যাত্রীরা দাবি তুলছেন, সময়ে পৌঁছে দিতে না পারলে ফ্লেক্সি ফেয়ার (ট্রেন ছাড়ার সময় যত এগোবে, ততই বাড়বে ভাড়া) নেওয়া বন্ধ করুক রেল।
শুনে রেলকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে মাত্রাছাড়া দেরির অভিযোগ মেনে নিয়ে কার্যত হাত তুলেই দিয়েছেন তাঁরা। এক রেলকর্তা বললেন, ‘‘অনেক সময়ে সাত-আট ঘণ্টা দেরিতে আসা ট্রেনগুলি ফিরতি পথে সে দিন রওনাই দিতে পারছে না। যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে ফেলে যাত্রা শুরু করছে পরের দিন।’’
কেন এত দেরি? রেল কর্তাদের বক্তব্য, নতুন রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের নির্দেশে দুর্ঘটনা ঠেকাতে রেললাইন সংস্কারের কাজে হাত পড়েছে। সেটাই প্রধান কারণ। এই অবস্থা চলবে আরও মাস তিনেক।
মূলত উত্তর ভারতের ট্রেনগুলিই আপাতত লেটলতিফের তালিকার শীর্ষে। কিন্তু লাইন সংস্কার করতে গিয়ে ট্রেনের সময়-সূচি এমন তালগোল পাকিয়ে যাবে কেন? রেলকর্তাদের যুক্তি, গত ছ’দশকে যত রেললাইন তৈরি হয়েছে, তার চেয়ে ১৫০ শতাংশ বেশি ট্রেন চালু হয়েছে। ফলে লাইনে একটি ট্রেন আটকে গেলে পরের ট্রেনগুলি দাঁড়িয়ে পড়ে পিছনে। এখন আবার ট্রেন আটকে রেখেই লাইন পাল্টানোর কাজ করতে হচ্ছে। রেল সূত্রের খবর, কলকাতা, অসম, বিহার— এই তিনটি রাজ্য থেকে যত ট্রেন উত্তরের দিকে যাতায়াত করে, সেই সব ট্রেনেরই বেশি দেরি হচ্ছে। কারণ, উত্তর ভারতের বিভিন্ন স্টেশনে এখন সংস্কারের কাজ হচ্ছে। মোগলসরাই থেকে ইলাহাবাদ রুটে সবচেয়ে বেশি ট্রেন চলাচল করে। সেখানেও লাইন মেরামতি অথবা পাল্টানোর কাজ চলছে। তাই রোজই জট ছাড়াতে এক বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে।
যাত্রীরা কিন্তু মনে করিয়ে দিচ্ছেন, শীত পড়ল বলে। ডিসেম্বর থেকে তার দোসর হবে কুয়াশা। শীতে লাইনের দৃশ্যমানতা অনেক কমে যায়। তাই অনেকটা সময়েই ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকে, অথবা গতি কমে যায়। এ সবের নিট ফল দীর্ঘ লেট। এই অবস্থা চলে প্রায় মার্চ পর্যন্ত। তার ওপর এখন লাইন সংস্কারেরও যুক্তি দিচ্ছে রেল। কাজেই যাত্রীদের প্রশ্ন, সময়ে পৌঁছতে না-পারাটাই যখন প্রায় ভবিতব্য, তখন কোন যুক্তিতে ফ্লেক্সি-ফেয়ার চাইছে রেল?