প্রবল ঝাঁকুনি, থমকে গেল ঐতিহ্যের ট্রেন

ট্রেন চলছিল বেশ। হঠাৎ প্রবল ঝাঁকুনি। জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখলাম, শেষ কামরার এক দিকের চাকা লাইনের বাইরে ঝুলছে। দার্জিলিং হিমালয়ান হেরিটেজ রেলে এমন অভিজ্ঞতা হবে ভাবিনি কখনও। গরমের ছুটি কাটাতে ২৭ মে কাটোয়া থেকে আমরা দু’জন আর বন্ধু ও তাঁর স্ত্রী দল বেঁধে রওনা দিয়েছিলাম দার্জিলিং। মিরিকে দু’দিন কাটানোর পরে মঙ্গলবার ভোর ৫টা নাগাদ পৌঁছই কার্শিয়াং।

Advertisement

শ্যামল পাল

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০১:২৯
Share:

ট্রেনে চড়ার আগে স্টেশনে শ্যামলবাবু। নিজস্ব চিত্র।

ট্রেন চলছিল বেশ। হঠাৎ প্রবল ঝাঁকুনি। জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখলাম, শেষ কামরার এক দিকের চাকা লাইনের বাইরে ঝুলছে। দার্জিলিং হিমালয়ান হেরিটেজ রেলে এমন অভিজ্ঞতা হবে ভাবিনি কখনও।

Advertisement

গরমের ছুটি কাটাতে ২৭ মে কাটোয়া থেকে আমরা দু’জন আর বন্ধু ও তাঁর স্ত্রী দল বেঁধে রওনা দিয়েছিলাম দার্জিলিং। মিরিকে দু’দিন কাটানোর পরে মঙ্গলবার ভোর ৫টা নাগাদ পৌঁছই কার্শিয়াং। গোড়া থেকেই শখ ছিল, ‘হেরিটেজ’ আখ্যা পাওয়া দার্জিলিং-হিমালয়ান রেলওয়ের ট্রেনে চড়ব। শুনেছিলাম, এই ট্রেনে চড়ে নিসর্গ দেখার অভিজ্ঞতা নাকি অসামান্য। আমাদের নিয়ে কার্শিয়াং স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করল তিন কামরার ট্রেনটি। ১৮৮১ সালে তৈরি হওয়া, ঐতিহ্যের সফরে সওয়ার হতে পেরে বেশ ভাল লাগছিল সবারই। কামরায় নিজেদের মধ্যে গল্পে জমে গিয়েছিলাম আমরা। কিছুটা যেতে না যেতেই বিপত্তি ঘটল।

গোথলস্‌ কলেজের কাছে সেতু পার হওয়ার সময় প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল ট্রেনটি। সেতুর উপর আটকে গিয়ে আতঙ্কে তখন চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেছেন সহযাত্রীরা। জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখলাম শেষ কামরার এক পাশের চাকা লাইনচ্যুত হয়ে ঝুলছে। বুকটা শুকিযে গিয়েছিল। কোনও মতে সঙ্গীদের এবং কামরার সবাইকে আশ্বস্ত করতে শুরু করি। কিছুক্ষণ পরেই দেখা মেলে ট্রেনের চালক ও গার্ডের। তাঁরা জানান, রেলের উদ্ধারকারী দলকে খবর দেওয়া হয়েছে। নামার চেষ্টা না করে অপেক্ষা করতে বলেন তাঁরা। শুরু হয় নিঃস্তব্ধ অপেক্ষা।

Advertisement

প্রায় এক ঘণ্টা পরে আসে উদ্ধারকারী দল। লাইনে মই লাগিয়ে একে একে কামরার সবাইকে নামিয়ে আনা হয়। কেউই তেমন আহত হননি। ড্রাইভার জিওন গ্যাং ও গার্ড সনৎকুমার লামা জানান, সম্ভবত লাইনের ফিসপ্লেটটি খোলা ছিল। ইঞ্জিন ও প্রথম দু’টি কামরা পেরিয়ে গেলেও শেষ কামরাটি যাওয়ার সময় তা লাইনচ্যুত হয়ে যায়। তবে রেল কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট তৎপর হয়েই উদ্ধার কাজ করেছে।

শেষ পর্যন্ত আমাদের দুর্ঘটনায় পড়া কামরাটিকে আলাদা করে দিয়ে দু’টি কামরায় সব যাত্রীদের বসিয়ে রওনা দেয় হেরিটেজ ট্রেন। বাকি পথটুকু আর প্রকৃতি রূপ-রস কিছুই সেভাবে বুঝতে পারিনি। দার্জিলিং পৌঁছে মনে হল, স্বস্তি পেলাম।

(কাটোয়া ঘোষহাট পাড়ার বাসিন্দা)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement