বয়স্কদের দেখভালে প্রশিক্ষণ আয়াদের

বৃদ্ধাশ্রমে থাকাকালীন মস্তিষ্কের স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন বছর পঁয়ষট্টির অণিমা দাস। পূর্ব মেদিনীপুরের বৃদ্ধাশ্রম থেকে তাঁকে তমলুক হাসপাতালে পাঠানো হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৬
Share:

বৃদ্ধাশ্রমে থাকাকালীন মস্তিষ্কের স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন বছর পঁয়ষট্টির অণিমা দাস। পূর্ব মেদিনীপুরের বৃদ্ধাশ্রম থেকে তাঁকে তমলুক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সুস্থ হয়ে আশ্রমে ফেরার পরে এক দিন মাথা ঘুরে পড়ে যান তিনি। হোম-কর্মীরা বুঝতেই পারেননি যে, ফের স্ট্রোক হয়েছে তাঁর। ফলে ডাক্তার ডাকা হয়নি। নিয়ে যাওয়া হয়নি হাসপাতালেও। কয়েক মাস অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকার পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, চিকিৎসকেরা জানান, সময়মতো চিকিৎসা পাননি তিনি। হাসপাতালে মারা যান অণিমাদেবী।

Advertisement

মাসখানেক আগেকার এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে চায় রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতর। সেই শিক্ষাটা হল, চাই সেবার প্রশিক্ষণ। শিক্ষাপটু হাতের পরিষেবা ছাড়া অশক্ত বৃদ্ধবৃদ্ধাদের যত্ন হবে না।

রাজ্যে তিন ধরনের বৃদ্ধাশ্রম আছে।
১) সরকারের পরিচালনাধীন বৃদ্ধাশ্রম। এমন আশ্রম একটিই আছে, দক্ষিণ কলকাতায়।
২) সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বৃদ্ধাশ্রম।
৩) বেসরকারি বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে বেশ কয়েকটি। সহায়সম্বলহীন বৃদ্ধবৃদ্ধারা দ্বারস্থ হন ওই সব আস্তানার। কিছু ক্ষেত্রে সন্তানেরা দেখভাল করেন না বলে অভিযোগ ওঠে। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায়, নিঃসন্তান বৃদ্ধবৃদ্ধাদের দেখভাল করার জন্য তাঁদের তিন কুলে কেউই নেই।

Advertisement

যথাসময়ে চিকিৎসার অভাবে অণিমাদেবীর মৃত্যুর পরে যে-সব প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে, তার মধ্যে আছে: যাঁরা টাকা দিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন, সেখানে তাঁদের ঠিকমতো দেখভাল হচ্ছে তো?

তত্ত্বাবধানে গাফিলতির অভিযোগ অজস্র। সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন বৃদ্ধাশ্রমে থাকা বৃদ্ধবৃদ্ধা এবং তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে এই ধরনের অভিযোগ আসছে ভূরি ভূরি। প্রায় সব অভিযোগের মূল কথা একটাই, জীবনসায়াহ্নে পৌঁছনো মানুষগুলোর ঠিকমতো দেখভাল করা হচ্ছে না। সেই জন্যই বৃদ্ধাশ্রমের আয়াদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতর।

সোমবার প্রবীণ নাগরিকদের দেখভাল ও সুরক্ষা সংক্রান্ত আইন নিয়ে এক আলোচনাসভায় আয়া-প্রশিক্ষণের কথা জানান ওই দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা। তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই নীল পাড় সাদা শাড়ি পরে চলে আসেন বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের দেখভাল করতে। কিন্তু ওষুধ কখন দিতে হবে, সেই ধারণাটুকুও নেই তাঁদের। বৃদ্ধবৃদ্ধাদের দেখভাল করার কাজে নিযুক্ত ওই সব পুরুষ-মহিলার জন্য ডিসেম্বর থেকেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে নতুন যুবক-যুবতীদেরও। যাতে তাঁরা বৃদ্ধবৃদ্ধাদের সেবাকাজে যোগ দিতে পারেন। প্রশিক্ষণের পরে বিভিন্ন বৃদ্ধাশ্রমে তাঁদের কাজের ব্যবস্থা করবে সমাজকল্যাণ দফতরই। ‘‘এতে দু’টো কাজ হবে। অনেক বেকারকে স্বাবলম্বী করা যাবে। বৃদ্ধবৃদ্ধারা বৃদ্ধাশ্রমে ভাল পরিষেবা পাবেন,’’ বললেন মন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন