ফাইল চিত্র।
স্টেশনে নেমে রিকশায় উঠতেই চালক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘কোন হোটেলে যাবেন?’’ আগাম বুকিং নেই শোনামাত্র চালক জানান, ‘‘তা হলে তো এখানে হোটেল পাবেন না। এখন দিঘায় একা কাউকে হোটেলের ঘর দেওয়া হচ্ছে না।’’
রিকশা চালকের কথা সত্যি হল পরের কয়েক ঘণ্টায়। গত রবিবার কলকাতা থেকে দিঘায় একা বেড়াতে রীতিমতো হেনস্থা হতে হয় অলোক মহাপাত্র (নাম পরিবর্তিত) নামে মাঝবয়সী ওই ব্যক্তিকে। অভিযোগ, বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও নিউ দিঘার একটি হোটেলে শুধুমাত্র একা বলে তাঁকে ঘর দেওয়া হয়নি। শেষে হোটেলের প্যাডে নাম-পরিচয়, কেন দিঘায় এসেছেন, সঙ্গী কেউ অন্য হোটেলে রয়েছেন কিনা, কত দিন থাকবেন— সব লেখার পরেই হাতে পেয়েছেন ঘরের চাবি। আপাতত ওই হোটেলেই রয়েছেন অলোকবাবু।
মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে বলছিল থানা থেকে লিখিয়ে আনতে হবে। শেষে হোটেলের প্যাডে মুচলেকা লিখে ঘর পেয়েছি।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘অন্য কেউ গোলমাল বাধিয়েছেন বলে সবাইকে হেনস্থা হতে হবে কেন?’’
আরও পড়ুন: স্কুলপাঠ্যে ফারহানই মিলখা, সরব অভিনেতা
স্থানীয় সূত্রে খবর, দিঘায় এমন ঘটনা আকছার ঘটছে। একা বেড়াতে এলে ঘর পেতে হন্যে হতে হচ্ছে। বছর তিনেক আগেও একা দিঘায় গিয়ে গোটা তিন-চারেক হোটেল ঘুরে একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়ের। কলকাতার বাসিন্দা রাজর্ষিবাবু পেশায় গৃহশিক্ষক। তিনি বলেন, ‘‘বৈধ পরিচয়পত্রের কোনও গুরুত্ব নেই। আমাকে তো একটা হোটেলে বলেছিল, ‘যে কোনও এক জন মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে আসুন। ঘর পেতে আর সমস্যা হবে না।’ কী অবস্থা ভাবতে পারেন!’’
হোটেল কর্তৃপক্ষ অবশ্য অভিযোগ মানছেন না। নিউ দিঘার যে হোটেলে মুচলেকা দিয়ে ঘর পেতে হয়েছে বলে অভিযোগ, তার ম্যানেজার বেদপ্রকাশ পাণ্ডে বলেন, ‘‘প্রশাসনের তরফে মৌখিক ভাবেই বলা হয়েছে কোনও পর্যটক একা এলে যেন পরিচয় যাচাই করা হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে এটা জরুরি। হয়তো কর্মচারীরা বিষয়টা বোঝাতে পারেননি। তাই অসুবিধা হয়েছে।’’ কাঁথির এসডিপিও পার্থ ঘোষেরও বক্তব্য, ‘‘কোনও পর্যটক একা এলে বৈধ পরিচয়পত্র ছাড়া আর কিছু চাওয়ার কথা নয়। সচিত্র পরিচয়পত্র থাকলে সমস্যা হওয়ারও কথা নয়।’’
আরও পড়ুন: গোপন ডেরা থেকে সরকারি নথি সামনে এনে এ বার সিআইডি-কে চ্যালেঞ্জ ভারতীর!
দিঘা হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী অবশ্য মানছেন, ‘‘মাঝেমধ্যে পর্যটকেরা হোটেলের ঘরে আত্মহত্যা করছেন। ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির মতো অভিযোগও ওঠে। আর এ সব হলে হোটেলের সুনাম নষ্ট। তাই ব্যবসার স্বার্থে হয়তো হোটেলগুলি কড়াকড়ি করছে।’’ তবে অযথা যাতে কোনও পর্যটক হেনস্থা না হন, সেই ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের পরিচালন সমিতির সদস্য অখিল গিরি।