এই সেই সখি বিশ্বাস। -নিজস্ব চিত্র।
রাতের দিকে খবর আসে পুলিশের কাছে, ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে এক যুবকের। বুধবার রাতে অশোকনগর ২৬ নম্বর রেলগেট এলাকার ওই ঘটনায় তখনও জানা যায়নি মৃতের পরিচয়। শুক্রবার সকালে পরিবার-পরিজনেরা এসে দেহ শনাক্ত করেন। জানা যায়, তাঁর নাম অজয় কর ওরফে ফেলু (২৬)।
তাঁকে খুন করা হয়েছে, এই অভিযোগে শুক্রবার থানার সামনে দেহ রেখে শুরু হয় বিক্ষোভ। হাবড়া-নৈহাটি সড়কে অবরোধও হয় কিছুক্ষণ। পরে অজয়কে অপহরণের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করে সখী বিশ্বাস ও বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য নামে দু’জনকে। আরও দুই অভিযুক্তের খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পরিবারের দাবি, সখীর সঙ্গে আগে সম্পর্ক ছিল অজয়ের। ইদানীং তাতে চিড় ধরেছিল। এর পরে বিশ্বজিতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় সখীর। বিশ্বজিৎকে কাজে লাগিয়ে অজয়কে সরানোর চক্রান্ত করেন সখী। পুলিশ এই দাবি খতিয়ে দেখছে।
অজয় কর।
তবে স্থানীয় সূত্রে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বুধবার সন্ধের পরে অজয়ের খোঁজে পাড়ায় গিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ ও তাঁর এক সঙ্গী। অজয় কোথায় আছেন, জানতে চান তাঁরা। বলে যায়, অজয়কে হাতের সামনে পেলে খুন করবে। অজয়ের বাড়ি অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ডোবাসঙ্ঘ এলাকায়। ক্রিকেট খেলতেন তিনি। সে জন্য নামডাকও ছিল।
আরও পড়ুন: লালবাজারের কাছেই গুন্ডা দিয়ে মার পুলিশকর্মীকে, অভিযুক্ত স্ত্রী
অজয়ের বাবা প্রতাপ কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন। মা ডলির সঙ্গে থাকতেন অজয়। ডলি জানান, মাঝে মধ্যে বাইরে খেলতে যেত ছেলে। বুধবার বাড়ি না ফেরায় মা ভেবেছিলেন, তেমনই কোথাও গিয়েছে। তবে সাধারণত রাতে না ফিরলে বলে যায়। সে জন্য উদ্বেগেও ছিলেন মা। খোঁজাখুঁজিও করেন। কিন্তু হদিস মেলেনি অজয়ের।
বিক্ষোভ: দেহ আগলে। ছবি: সুজিত দুয়ারি
বুধবার গভীর রাতে অশোকনগর ২৬ নম্বর রেলগেটের কাছে লাইনের পাশ থেকে অজয়ের দেহ উদ্ধার করা হয়। তখনও অবশ্য তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। তাঁকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানিয়ে দেন। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় বারাসত জেলা হাসপাতালে। হাবড়া থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়। জিআরপি জানায়, বুধবার রাতে ট্রেনের ধাক্কায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে ট্রেনের গার্ড জানিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সখী ও বিশ্বজিতের নামে অজয়কে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন ওই যুবকের পরিবার। শুক্রবার দেহ শনাক্তের পরে চারজনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেন তাঁরা। পুলিশ অবশ্য অপহরণের অভিযোগেই আপাতত গ্রেফতার করেছে দু’জনকে।
রবীন্দ্র সঙ্ঘের কাছে বাড়ি সখীর। তাঁর দুই সন্তান। স্বামীর সঙ্গে থাকেন না সখী। অজয় ছাড়াও কিছু যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তাঁর, পুলিশকে জানান অজয়ের পাড়া-পড়শি ও আত্মীয়েরা। পরিবারের দাবি, বিশ্বজিৎকে কাজে লাগিয়ে অজয়কে সরিয়ে দেওয়ার ছক কষেছিলেন সখী। পুলিশ এই দাবি খতিয়ে দেখছে।