গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
প্রায় দু’মাস পরেও হাসপাতাল থেকে ছুটি মেলেনি ধূপগুড়ির নির্যাতিতা আদিবাসী মহিলার। গত ১৯ অক্টোবর গণধর্ষণের শিকার হতে হয় ধূপগুড়ির ওই গৃহবধূকে। ধর্ষণের পর তাঁর দেহে লোহার রড ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ। ওই ধর্ষিতার শারীরিক-মানসিক পরিস্থিতি এখন ঠিক কেমন আছে বা কী কারণে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া যাচ্ছে না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে নানা বয়ানের কারণে। একই সঙ্গে পরিবারের লোকজনেরা হাসপাতালে ওই মহিলাকে আর নিয়মিত দেখতে আসছেন না বলেও সূত্রের খবর।
ওই গণধর্ষণের ঘটনার পরে ২০ অক্টোবর তাঁকে প্রথমে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে সেখান থেকে তাঁকে জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ২১ অক্টোবর রাতে তাঁর অস্ত্রোপচার করেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা। এর পর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে তাঁর চিকিৎসা চলে। ওখানে থাকাকালীনই অ্যাম্বুল্যান্সে আদালতে নিয়ে গিয়ে গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয় ওই মহিলার।
শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে ২৭ ডিসেম্বরের পর তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট থেকে বের করে জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালের ইএনটি বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়। এর পর থেকে এই বিভাগের এক শয্যায় রেখেই তাঁর চিকিৎসা চলছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। কিন্তু হাসপাতালেরই অন্য এক সূত্রের খবর, এখন আর কোনও চিকিৎসকই তাঁর দেখভাল করছেন না সে ভাবে। রুটিনমাফিক ভিটামিন আর অন্য কিছু ওষুধ তাঁর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এই ওষুধ কর্তব্যরত নার্সিং স্টাফেরাই তাঁকে দেন বলে সূত্রের খবর।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, দিনের পর দিন এ ভাবে থাকতে থাকতে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন ওই মহিলা। প্রায় প্রতিদিনই নাকি তিনি বাড়ি যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করেন। বাড়ির লোকেরাও এখন আর তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন না। ধর্ষিতা ওই মহিলার স্বামীর বক্তব্য, বাড়িতে ছোট সন্তান রয়েছে, তার দেখভাল করতে হচ্ছে বলেই হাসপাতালে গিয়ে তিনি স্ত্রীর সঙ্গে আর দেখা করতে পারেননি। ধর্ষিতার স্বামীর আরও বক্তব্য, যেহেতু পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেই স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি মেলে, তাই এইসব সমস্যার কারণে এখন আর হাসপাতালে আগের মতো যাওয়া হয়ে ওঠে না তাঁর।
অন্যদিকে, জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালের সুপার গয়ারাম নস্কর বলেন, ‘‘ওই নির্যাতিতাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশের তরফে এখনও কোনও রকম অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাই এখনও ছাড়া হয়নি তাঁকে। মানসিকভাবে ওঁকে সুস্থ করে তুলতে এখনও সব রকমের চেষ্টা চলছে। ওঁর কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। তবে খুব শীঘ্রই ওই মহিলাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’’
জলপাইগুড়ির জেলা পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতির সঙ্গে এ দিন টেলিফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পদস্থ পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘পুলিশ তো চিকিৎসক নয়। সুস্থ হয়ে গিয়েছেন বলে মনে করলে তো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই ওই মহিলাকে ছুটি দিয়ে দিতে পারেন। তার জন্য পুলিশের কোনও অনুমতির প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না।’’