সরানো হল পদ থেকেও

মারধর-ভাঙচুরে ধৃত টিএমসিপি নেতা

তাঁর বিরুদ্ধে এসএফআই সমর্থক ছাত্রকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল পাঁচ বছর আগে। পুলিশ তাঁকে কখনওই গ্রেফতার করেনি। বরং সংগঠনে ‘পদোন্নতি’ হয়ে পেয়েছিলেন জেলা সভাপতির পদ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২৫
Share:

তাঁর বিরুদ্ধে এসএফআই সমর্থক ছাত্রকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল পাঁচ বছর আগে। পুলিশ তাঁকে কখনওই গ্রেফতার করেনি। বরং সংগঠনে ‘পদোন্নতি’ হয়ে পেয়েছিলেন জেলা সভাপতির পদ।

Advertisement

কিন্তু, এ বার একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তাকে মারধর ও ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি তুষারকান্তি ঘোষকে। এই ঘটনার পরে তুষারকে ছাত্র সংগঠনের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে টিএমসিপি-র রাজ্য নেতৃত্ব। রবিবার সন্ধ্যায় তুষারের পাশাপাশি চয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় নামে আরও এক জনকে ধরেছে সাঁকরাইল থানার পুলিশ। চয়ন স্থানীয় বানীপুর ১ অঞ্চলের তৃণমূল নেতা। হাওড়ার (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘এক শিক্ষকের অভিযোগের ভিত্তিতেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতের বিরুদ্ধে ওই শিক্ষককে মারধর, বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।’’

টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র বলেন, ‘‘দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে উচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশে তুষারকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই নতুন সভাপতি নিয়োগ করা হবে।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি (সদর) তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় জানান, তুষারকে দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়েও ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।

Advertisement

কী অভিযোগ উঠেছে তুষারের বিরুদ্ধে? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, আন্দুল স্টেশন এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলে। সেখানে দূরশিক্ষার মাধ্যমে মাধ্যমিক থেকে এমএ এবং বিএ়ড পড়ানো হয়। ওই বাড়ির মালিক পলাশ কোঙার সম্পর্কে তুষারের মামাতো ভাই। পলাশবাবু সম্প্রতি ওই বাড়ি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে অন্যত্র উঠে যেতে বলেন। কিন্তু, ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিক সুশীল চট্টোপাধ্যায় রাজি হননি। এই নিয়ে সম্প্রতি দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছিল। রবিবার দুপুর তিনটে নাগাদ তুষারের নেতৃত্বে এলাকার কয়েকজন টিএমসিপি কর্মী-সমর্থক ওই বাড়িতে ঢুকে সুশীলবাবুকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। ঘরের নথিপত্র, টিভি-সহ অন্যান্য জিনিসপত্র বাইরে বের করে বাড়িতে তালা দিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার ছবি তুলতে গেলে বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের এক সাংবাদিককেও মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। সুশীলবাবু তুষারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পাল্টা তাঁর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেন তুষার। সন্ধ্যায় তুষার ও চয়নকে ধরে পুলিশ।

সুশীলবাবু জানান, ১৯৯৬ সাল থেকে আন্দুল স্টেশন সংলগ্ন ওই বাড়িতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন তিনি। আগে কোনও গোলমাল হয়নি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওই বাড়িতে প্রোমোটিং করার চেষ্টা হচ্ছে। এর পিছনে রয়েছেন তুষার ঘোষ। তাই আমাদের তল্পিতল্পা গুটিয়ে উঠে যেতে বলা হয়েছিল। আমরা রাজি হইনি বলেই মারধর করা হয়েছে।’’ শ্লীলতাহানির অভিযোগ উড়িয়ে সুশীলবাবুর পাল্টা দাবি, তুষারের নেতৃত্বে আসা যুবকেরা তাঁর বৃদ্ধা মা-সহ উপস্থিত শিক্ষিকাদের ঘর থেকে টেনে বের করে দিয়েছে। যদিও মারধর ও ভাঙচুরের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তুষার। বিকেলে (তখনও গ্রেফতার হননি) তাঁর দাবি ছিল, ‘‘আমাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ ২০১০-এর ১৬ ডিসেম্বর আন্দুল প্রভু জগদ্বন্ধু কলেজের ভিতরেই পিটিয়ে মারা হয়েছিল ওই কলেজের ছাত্র, এসএফআই সদস্য স্বপন কোলেকে। ওই ঘটনাতেও নাম জড়িয়েছিল তুষারের। তিনি তখন টিএমসিপি-র সাঁকরাইল ব্লক সভাপতির পদে। অভিযুক্তদের তালিকায় তুষার-সহ ১৩ জন থাকলেও পুলিশ ধরেছিল কেবল দু’জনকে। তদন্তকারীরা সময়মতো চার্জশিট না-দেওয়ায় অভিযুক্তেরা জামিন পেয়ে যান। ঘটনার প্রায় তিন বছর পর, ২০১৩ সালের অগস্ট মাসে মামলার যে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ, তাতে অবশ্য খুনের অভিযোগে দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছিল তুলনায় অনেক লঘু ‘অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানো’র অভিযোগ। এরই মধ্যে ব্লক সভাপতি থেকে জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) হয়ে যান। দিন কয়েক আগেই বালি রবীন্দ্রভবনে সংগঠনের এক সভায় সংগঠনের রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রের সঙ্গে এক মঞ্চে ছিলেন তিনি। প্রশ্ন উঠেছে, স্বপন কোলে মৃত্যুর ঘটনায় নাম জড়ানোর পরেও জেলার যে তৃণমূল নেতৃত্ব তুষারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি, তাঁরা হঠাৎ ভাঙচুর-মারধরের মতো ঘটনায় এতটা সক্রিয় হয়ে তাঁকে পদ থেকে সরালেন কেন। পুলিশ বা শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের দাপুটে সভাপতিকে ধরল কী ভাবে। অশোকবাবুর কাছে উত্তর মেলেনি। তবে তাঁর দাবি, ‘‘আমরা যখনই অভিযোগ পেয়েছি, তখনই ব্যবস্থা নিয়েছি।’’ তুষার-ঘনিষ্ঠ কয়েক জন টিএমসিপি কর্মীর দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠী-বিবাদের শিকার তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন