দীপক হালদার।— নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক দীপক হালদারকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল বিধায়ক দীপক হালদারের বিরুদ্ধে বহিরাগতদের নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে মারামারি করার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার ডায়মন্ড হারবারের ফকিরচাঁদ কলেজে এই ঘটনা ঘটে। এর পরই মুখ্যমন্ত্রী বিধায়ককে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কিছু লোক বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে। ফকিরচাঁদ কলেজে যা ঘটেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমার কোন ভাষা নেই নিন্দা করার।”
সোমবার সকাল থেকে গোলমালের সূত্রপাত। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে ফকিরচাঁদ কলেজে গোলমাল শুরু হয় দুই স্থানীয় তৃণমূল নেতার অনুগামীদের মধ্যে। অভিযোগ, ডায়মন্ড হারবার-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি উমাপদ পুরকাইত বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে ঢোকেন। ওই কলেজের ছাত্র সংসদ বিধায়ক দীপক হালদারের অনুগামী ছাত্রনেতাদের দখলে। তাদের মারধর করে ইউনিয়ন রুমের দখল নেয় উমাপদ গোষ্ঠী। খবর পেয়ে বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে পাল্টা চড়াও হন বিধায়ক। ততক্ষণে অবশ্য পুলিশ পৌঁছে গিয়েছে ক্যাম্পাসে। বিধায়ক পুলিশের সঙ্গেই তুমুল বচসা ও ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর প্ররোচনায় দুষ্কৃতীরা চড়াও হয় ইউনিয়ন রুমে। বিরোধী গোষ্ঠীর ছাত্রদের মারধর করে ইউনিয়ন রুম পুনর্দখল করে। বিধায়কের অনুগামীদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ হয় পুলিশেরও। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চার জনের জখম হওয়ার খবর মিলেছে। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
উত্তরবঙ্গ সফরে থাকা মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়িতে বসেই খবর পান ফকিরচাঁদ কলেজের ঘটনার। তিনি নিজের দলের বিধায়ককে অবিলম্বে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। বিকেল সওয়া চারটে নাগাদ পুলিশ গ্রেফতার করে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল বিধায়ককে। গ্রেফতার হওয়ার আগে দীপক হালদার বলেন, “সংঘর্ষের খবর পেয়ে তা সামলাতেই কলেজে গিয়েছিলাম।” তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা তথা ব্লক তৃণমূল সভাপতি উমাপদ পুরকাইত অবশ্য বিধায়কের সে দাবি নস্যাৎ করে অভিযোগ করেছেন, মারামারি করার লক্ষ্যেই বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে গিয়েছিলেন দীপক হালদার।
আবারও গোষ্ঠী সংঘর্ষ, আবারও নৈরাজ্য
এই ঘটনা নিঃসন্দেহেই বেশ খানিকটা বাড়িয়েছে শাসক দলের অস্বস্তি। দিনকয়েক আগেই আদালত রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলিকে রেলের যন্ত্রাংশ চুরির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে গ্রেফতারেরর নির্দেশ দিয়েছে। সোমবার ফের তুমুল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে গ্রেফতার শাসক দলের আর এক বিধায়ক। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রীর নিজের দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে, তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরাই আক্রান্ত হয়েছেন। তাই তৃণমূল বিধায়ককে গ্রেফতার করা হল। কিন্তু, কোনও বিরোধী দলের উপর যদি এই হামলা হত, তাহলে কি মুখ্যমন্ত্রী একই অবস্থান নিতেন?
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরি বলেন, “বাংলার মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর যাত্রা, নাটক অনেক কিছুই দেখছেন। বিধায়ককে গ্রেফতার করানোও সে রকমই নাটক। আসলে যে বিধায়ককে গ্রেফতার করা হয়েছে, তিনি শাসকদলের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ লোকজনের অনুগামী নন।”
সিপিআইএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী ঘটনার নিন্দা করে বলেন, “নিজের দলের বিধায়ককে গ্রেফতারের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও প্রশাসনিক সদিচ্ছা নেই। এটা পুরোপুরি লোকদেখানো বিষয়। দীপক হালদারকে শাস্তি দেওয়ার জন্য গ্রেফতার করা হয়নি। তাঁকে বাঁচানোর জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে।” সুজনবাবুর কটাক্ষ, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, পুলিশকে মাঝখানে এনে সামলাতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশ এখন তৃণমূলের বিভিন্ন বিবদমান গোষ্ঠীর মধ্যে সালিশির কাজ করছে।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “এই ঘটনা থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার— সমাজবিরোধীদের নিয়ে রাজনীতি করলে সেই আগুনে নিজেদেরই পুড়তে হবে।” রাহুলবাবুর শ্লেষ, যে বিধায়ক গ্রেফতার হয়েছেন, তিনি নেত্রীর ঘনিষ্ঠদের অনুগামী না অন্য গোষ্ঠীর, তাও খোঁজ নিয়ে দেখার বিষয়।