মুর্শিদাবাদে কান্ডারি বদলেও খারাপ ফল

একের পরে এক নতুন নেতা। সেই ‘ট্র্যাডিশন’ সমানে চলছে। কিন্তু, বারবার নেতা পাল্টেও মুর্শিদাবাদে ঘর গুছোতে পারছে না তৃণমূল! পুরভোটের ফল বলছে, জেলার ছ’টি পুরসভার ১০৭টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের পক্ষে এসেছে সাকুল্যে ১০টি। জঙ্গিপুর, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ ও বেলডাঙায় এ বার খাতাই খুলতে পারেনি শাসকদল।

Advertisement

অনল আবেদিন

মুর্শিদাবাদ শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৯
Share:

একের পরে এক নতুন নেতা। সেই ‘ট্র্যাডিশন’ সমানে চলছে। কিন্তু, বারবার নেতা পাল্টেও মুর্শিদাবাদে ঘর গুছোতে পারছে না তৃণমূল!

Advertisement

পুরভোটের ফল বলছে, জেলার ছ’টি পুরসভার ১০৭টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের পক্ষে এসেছে সাকুল্যে ১০টি। জঙ্গিপুর, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ ও বেলডাঙায় এ বার খাতাই খুলতে পারেনি শাসকদল। প্রাপ্তি বলতে কান্দিতে তিনটি, মুর্শিদাবাদে এক এবং ধুলিয়ানে ছ’টি ওয়ার্ড! পুরভোটের আগে ধুলিয়ানে ক্ষমতাসীন ছিল তৃণমূল। সেই পুরসভাতেও এখন ত্রিশঙ্কু অবস্থা। শুধু তাই নয়, ধুলিয়ানে সদস্য সংখ্যা ১৪ থেকে নেমেছে ছ’য়ে!

দলের একটা বড় অংশের দাবি, এই পরিস্থিতির পিছনে গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা। জেলা নেতৃত্বে কিছু দিন পরপরই রদবদল চলতে থাকায় একের পর এক জেলা নেতাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে একের পর এক গোষ্ঠী। অল্প সময়ে একাধিক গোষ্ঠী তৈরি হওয়ায় তা সামাল দেওয়া যায়নি। পুরভোটে খারাপ ফলের নেপথ্যে এটিই বড় কারণ বলে মত তৃণমূলের শীর্য নেতাদের একাংশের।

Advertisement

অথচ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর ‘গড়ে’ দলের প্রভাব তৈরির চেষ্টায় ত্রুটি ছিল না তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের। রাজ্যের প্রায় সর্বত্র ‘অপরাজেয়’ হলেও তৃণমূলনেত্রীর রথের গতি বারবার এই জেলায় থমকে গিয়েছে। কাঙ্ক্ষিত ফলের আশায় গত পাঁচ বছরে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সর্বোচ্চ পদে এসেছে বহু নতুন মুখ। প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা অতীশ সিংহকে দলে টেনে তাঁকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি করা হয়। তাঁর মৃত্যুর পরে ওই পদে আনা হয় কংগ্রেস ছেড়ে আসা সুব্রত সাহাকে। সুব্রতর নেতৃত্বে ২০১০ সালের পুরভোটে জেলার ১০৩টি আসনের মাত্র চারটি পায় তৃণমূল। তার কিছু পরেই ফের বদল হয় নেতৃত্বে। জেলা সভাপতির পদে আনা হয় মহম্মদ আলিকে। তার কয়েক মাস পরেই এক সময়ের অধীর-ঘনিষ্ঠ হুমায়ুন কবীরকে মন্ত্রী করেন দলনেত্রী।

কিন্তু, হুমায়ুন-মহম্মদ আলি জুটি দানা বাঁধেনি। তার প্রতিফলন মেলে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে। এর পরে হুমায়ুনের নেতৃত্বে ২০১৩ সালে বহরমপুর পুরভোটে লড়ে তৃণমূল। ওই একবারই একটু ভাল ফল হয়। সে বার তৃণমূল ২৮টি আসনের মধ্যে দু’টি জেতে। ২৯ শতাংশ ভোট পেয়ে ২৪টিতে দ্বিতীয় হয়। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূলের গায়ক-নেতা ইন্দ্রনীল সেন প্রার্থী হয়ে অধীরের কাছে ৩ লক্ষ ৫৬ হাজার ভোটে হারেন। তখন ইন্দ্রনীলকে বসানো হয় মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যবেক্ষকের আসনে। ওই বছরেই প্রাক্তন সাংসদ মান্নান হোসেন ছেলে সৌমিককে নিয়ে সদলে তৃণমূলে যোগ দিলে মান্নানকেই দলের জেলা সভাপতি করা হয়। প্রশ্ন উঠছে—২০১৬-র ভোটের কথা মাথায় রেখে এ বার কাকে দায়িত্ব দেবেন শীর্ষ নেতৃত্ব? তৃণমূলের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘মান্নান জেলা সভাপতি হিসাবে ইন্দ্রনীলের কাছে কার্যত আত্মসমর্পণ করেছেন।’’ জেলা যুব তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি উৎপল পালের দাবি, ‘‘রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের ভরা বাজারেও ইন্দ্রনীলের জন্য এখানে আমাদের মুখ পুড়ছে।’’ ইন্দ্রনীল বলছেন, ‘ওয়ার্ড ও বুথভিত্তিক ফল ধরে বিশ্লেষণ চলছে। পর্যবেক্ষক হিসেবে দলনেত্রীকে তার বিস্তারিত রিপোর্ট দেব।’’ তাঁর উপরে কি শাস্তির খাঁড়া ঝুলছে? ‘‘সে তো শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিক করবেন,’’ বলছেন ইন্দ্রনীল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন